মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় গোলা দুটি পড়ে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস বলেন, মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়েছে বলে জেনেছি।এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৯টায় রেজু আমতলী বিজিবি বিওপি আওতাধীন সীমান্ত পিলার ৪০-৪১ এর মাঝামাঝি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ২টি যুদ্ধবিমান এবং ২টি ফাইটিং হেলিকপ্টার আগমন করে। এ সময় যুদ্ধবিমান থেকে আনুমানিক ৮ থেকে ১০টি গোলা ফায়ার করা হয় এবং হেলিকপ্টার থেকেও আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫টি ফায়ার করতে দেখা যায়।
সীমান্ত পিলার ৪০ বরাবর আনুমানিক ১২০ মিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ বিমান থেকে ফায়ারকৃত ২টি গোলা পতিত হয়।
এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তুমব্রু বিজিবি বিওপির সীমান্ত পিলার ৩৪-৩৫ এর মাঝামাঝি মিয়ানমার ২ বিজিপির তুমব্রু রাইট ক্যাম্প থেকে ৪ রাউন্ড ভারি অস্ত্রের ফায়ার করে যা এখনো চলমান রয়েছে। এমনকি মিয়ানমার মুরিঙ্গাঝিরি ক্যাম্প ও তুমব্রু রাইট ক্যাম্প থেকে থেমে থেমে মর্টার ফায়ার চলমান রয়েছে।
কোনো প্রকার হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও এরূপ গোলাগুলির শব্দে এলাকায় চরম আতংক বিরাজ করছে বলে জানান স্থানীয়রা।
তুমব্রু সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির ঘটনায় গত রবিবার দুটি এবং বৃহস্পতিবার একটি মর্টার শেল সীমান্তের এপারে এসে পড়েছে। আজ সকালে আবারও দুটি বিমান থেকে ছোড়া গোলা এসে সীমান্তে পড়েছে। এ ছাড়া গতকাল থেকে দুটি হেলিকপ্টারকে ওপারে সীমানাঘেঁষে টহল দিতে দেখা গেছে।’
এ বিষয়ে ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘তুমব্রু সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির ঘটনায় গত রবিবার দুটি এবং বৃহস্পতিবার একটি মর্টার শেল সীমান্তের এপারে এসে পড়েছে। আজ সকালে আবারও দুটি বিমান থেকে ছোড়া গোলা এসে সীমান্তে পড়েছে। এ ছাড়া গতকাল থেকে দুটি হেলিকপ্টারকে ওপারে সীমানাঘেঁষে টহল দিতে দেখা গেছে।’ এতে রোহিঙ্গা আশ্রয় প্রার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত রোববার মিয়ানমার থেকে ছোড়া দুটি মর্টারশেল বাংলাদেশ-মিয়ানমার জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন ঘুমধুম এলাকার জনবসতিতে পড়ে। পরে এ ঘটনায় দেশটির রাষ্ট্রদূত উ আং কিয়াউকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, মিয়ানমার সীমান্তের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে যাতে মিয়ানমারের একজন নাগরিকও বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সে জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, মিয়ানমারের যে জোন থেকে শরণার্থী বা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছিল, সেই জোন অর্থাৎ রাখাইন রাজ্যে মাসখানেক ধরে কিছু ঘটনার খবর মিলছে। বিশেষ করে গত ২০ ও ২৮ আগস্ট দুটি সুনির্দিষ্ট ঘটনা ঘটেছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ কোনো সংঘাতের কারণে সেখানকার দুটি মর্টারশেল বা শেলের অংশবিশেষ বাংলাদেশের সীমানায় পড়েছিল। তার পরপরই ২১ ও ২৯ আগস্ট আমরা ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদপত্র দিয়েছি, আমাদের উদ্বেগের কথা বিস্তারিতভাবে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, ২-৩ দিন ধরে সেখানকার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যদিও এটা মিয়ানমারের বিষয়, তবে সেই সমস্যার প্রভাব যেন বাংলাদেশের সীমান্তে না পড়ে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এ সংঘাতের জেরে আগের মতো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে চলে আসেন কি না। আমরা এ বিষয়টাতেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ ২০১৬-১৭ সালে রোহিঙ্গাদের স্রোত আমরা ঠেকাতে পারিনি। আসলে আমরা ঠেকাতে চাইনি, তখন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের (রোহিঙ্গা) জায়গা দিয়েছেন। এবার কিছু তথ্য আছে, সেজন্য আমাদের সংস্থাগুলো ভালোভাবে প্রস্তুত আছে, বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, যেন মিয়ানমারের একজন নাগরিকও বাংলাদেশে ঢুকতে না পারেন
মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কী বলা হয়েছিল বা তারা জবাবে কী বলেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা বলেছেন— বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন হয়নি। আর তারা এসব বিষয় রাজধানী নেপিদোকে জানাবেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা কোনো উসকানিতে পা দিতে চাই না। কারণ এ ধরনের বিষয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারলে তাদের কৌশলগত কোনো ফায়দা হতে পারে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা যে সমস্যায় আছি, তার দায় আমাদের দিকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক। এমন হয়েছে, মিয়ানমারে সংঘাতে লিপ্ত বিদ্রোহীগোষ্ঠীকে সমর্থন করে যারা ,তাদের দু-একজন সীমানা পেরিয়ে এদেশে এসেছেন, তাদের গ্রেফতার করে আমরা আবার মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সত্যিকারের উদ্দেশ্যটা জানে।
মিয়ানমার সীমান্তের চলমান ঘটনা প্রবাহ সরকার কূটনৈতিক মহলে জানিয়ে রাখবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখানে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তারা যেন বুঝতে পারেন, সে জন্য আমরা অগ্রিম বিষয়গুলো কূটনীতিকদের জানিয়ে রাখব।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪০
আপনার মতামত জানানঃ