আমেরিকার হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফর ঘিরে নতুন করে অশান্তির সূত্রপাত ঘটেছে উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে। বুধবার তাইওয়ান সফর সেরে জাপান রওনা দেন ন্যান্সি। আর তার পরই তাইওয়ানের আকাশসীমায় ২৭টি যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে চিন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাইওয়ানের উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণে সবমিলিয়ে তারা ১১টি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে বলে জানা যায়।
এর মধ্যে জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নবু কিশি অভিযোগ করে বলেন, চীনের ছোড়া পাঁচটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইইজেড) আঘাত হেনেছে। বৃহস্পতিবারের এ ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদও জানিয়েছে টোকিও।
নবু কিশি সাংবাদিকদের বলেন, “পাঁচটি চীনা ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের ইইজেড-এর মধ্যে আঘাত হেনেছে, যা এবারই প্রথম ঘটনা।” তিনি আরও বলেন, “আমরা কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি।”
তাইওয়ান ঘিরে চীনের সামরিক মহড়াকালে অন্তত পাঁচটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পড়েছে। খবর সিএনএনের।
জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান। এ ঘটনায় বেইজিংয়ের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে জাপান। কূটনৈতিক চ্যানেলে এ প্রতিবাদ জানিয়েছে টোকিও।
২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত জাপানের উপকূলীয় অঞ্চলের অন্তর্গত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইইজেড) এ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে টোকিও প্রতিবাদ জানালেও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বেইজিংয়ের।
জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নোবুও কিশি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এটি একটি গুরুতর সমস্যা, যা জাপানের নিরাপত্তা ও তার নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। তারা এর তীব্র নিন্দা জানান।
তাইওয়ানের চারপাশে ছয় এলাকায় গতকাল থেকে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন। এ মহড়ায় তাইওয়ানের আশপাশ ঘিরে একের পর এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে চীনের সামরিক বাহিনী। তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষাসীমা দিয়ে উড়ে গেছে একাধিক চীনা যুদ্ধবিমান।
তাইওয়ানে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পরদিনই সামরিক মহড়া শুরু করে চীন। মহড়া চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত।
এশিয়া সফরের শেষ পর্যায়ে পেলোসি এখন জাপানে। আজ শুক্রবার সকালে তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তাদের আলোচনার কেন্দ্রে ছিল তাইওয়ান।
মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘তাইওয়ানের চারপাশে চীনের পদক্ষেপগুলো আমাদের অঞ্চল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে। আমি অবিলম্বে চীনকে এ ধরনের মহড়া বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছি।’
ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপান। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তিবৃদ্ধি নিয়ে টোকিও শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে। তাইওয়ানের বিরুদ্ধে বেইজিং সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা টোকিওর।
তাইওয়ান ইস্যুতে জি-৭ জোটের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বেইজিংয়ে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে। জোটের মন্তব্যের বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানাতে গতকাল চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তলব দেয়।
এদিকে, বুধবার পেলোসি চলে যাওয়ার পরের দিনই সেখানে মহড়া শুরু করে চীনা সামরিক বাহিনী। ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক জলপথ এবং বিমান চলাচলের রুটে চীনের এই সামরিক মহড়াকে অবৈধ অ্যাখা দিয়েছে তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি।
স্বায়ত্তশাসিত তাইওয়ানের উপর বেশ কয়েক দশক ধরেই নজর চিনের। তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে মনে করে তারা। প্রয়োজনে বলপূর্বক তাইওয়ানের দখল নিতেও প্রস্তুত বলে এর আগে একাধিক বার জানিয়েছে তারা। এর মধ্যে দীর্ঘ ২৫ বছর পর সম্প্রতি তাইওয়ান সফরে আসেন তাদের হাউস স্পিকার ন্যান্সি। তার পর থেকেই তাইওয়ানের বিরুদ্ধে সামরিক সক্রিয়তা বাড়িয়েছে চিন।
এদিকে তাইওয়ানের দক্ষিণ, পূর্ব এবং উত্তর উপকূলীয় জলসীমার কাছে মোট ১১টি দংফেং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে চীনের সামরিক বাহিনী। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, মাতসু দ্বীপের কাছ থেকে এসব শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১১৫০
আপনার মতামত জানানঃ