শীতের শুরুতে ইউরোপে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। করোনার আঘাতে জার্মানীসহ ইউরোপের দেশগুলোর নাকাল অবস্থা। করোনার প্রথম ঢেউয়ে ইউরোপের অন্যদেশগুলো ভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও জার্মানের অবস্থা বেশ ভালো ছিল। সংক্রমন নিয়ন্ত্রণ ও মৃত্যুর হার কম হওয়াতে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বিশ্বব্যাপি বেশ প্রসংশা পেয়েছিলেন। কিন্তু শীতের শুরু থেকে ইউরোপের দেশটিতে করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছে। তাই করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে জার্মান সরকার৷ আগামী বুধবার থেকে বন্ধ থাকবে দোকানপাট, রেস্তেরাঁ, ফিটনেস স্টুডিও, সুইমিং পুল, বার, থিয়েটার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ডে কেয়ার সেন্টার৷
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দেশের রাজ্যপ্রধানদের সাথে বৈঠকের পর রোববার এ ঘোষণা দেন৷ আগামী বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া এ নতুন বিধি জানুয়ারির ১০ তারিখ পর্যন্ত বলবৎ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির সরকার৷ অক্টোবর মাসের শেষে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ক্রিসমাসের সময়ে তা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সে বিষয়ে তৎপর ছিল জার্মানের ফেডারেল সরকার৷
জার্মানিতে শনিবার মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৪৩৮ জন৷ এদিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪৯৬ জন মারা যান৷ হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা৷ দেশের কোন কোন এলাকায় হাসপাতালের আইসিইউগুলো প্রায় ভর্তি হয়ে আছে৷ দেশের স্বাস্থ্যবিভাগের মতে, সংক্রমণের এই হার চলমান থাকলে হাসপাতালগুলোতে সংকট দেখা দিতে পারে।
রবিবার রাজ্যপ্রধানদের সাথে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যার্কেল বলেন, “করোনার বিস্তার ঠেকাতে আমাদের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে৷ এর অন্যকোনো বিকল্প না থাকায় সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা কঠোর লকডাউনে যেতে বাধ্য হয়েছি।”
তিনি সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দেশের সর্বস্তরের জনগণের সার্বিক সহযোগীতা কামনা করেন।
কি থাকছে নতুন করে আরোপ করা লকডাউনের বিধিতে? কম গুরুত্বপূর্ণ দোকানপাট ও সেবাপ্রদান যেমন সেলুন জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে৷ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার কথা বলা হয়েছে নতুন লকডাউনবিধিতে৷ এছাড়াও বন্ধ থাকবে ডে-কেয়ার সেন্টার৷ এক্ষেত্রে অভিভাকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের দেখাশুনার জন্য বেতনসহ ছুটিতে যেতে পারবেন৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের কর্মীদের হোম অফিস করার জন্য উৎসাহিত করতে বলা হয়েছে৷ উন্মুক্তস্থানে, পার্কে, রাস্তায় অ্যলকোহল পান করা যাবে না৷ স্বাস্থ্যবিধি মানা সাপেক্ষে উপাসনালয় চালু রাখার অনুমতি থাকলেও দলগতভাবে ধর্মীয় সঙ্গীত গাওয়ার মত কাজগুলো করা যাবে না৷ রাজ্য সরকারগুলো চাইলে ক্রিসমাস উদযাপনের জন্য ডিসেম্বরের ২৪ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন বিধি কিছুটা শিথিল করতে পারবে৷ তবে, সেক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি তার সরাসরি সম্পর্কিত আত্মীয়দের পরিবার থেকে সর্বোচ্চ চারজনকে নিজ বাড়িতে আমন্ত্রণ করতে পারবেন৷ সঙ্গে ১৫ বছরের নীচে শিশুদেরও আমন্ত্রণ করা যাবে৷ নতুন বছর উদযাপনের জন্য কোনো ধরনের সমাবেশ বা আতশবাজি উৎসব করা যাবে না৷
এসডব্লিউ/নসদ/২০২০
আপনার মতামত জানানঃ