কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দুই মাদ্রাসাছাত্রকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার গভীর রাতে কুষ্টিয়ার যুগিয়া এলাকার একটি মাদ্রাসা থেকে তাদের আটক করা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রাত ২টা ১৬ মিনিটের দিকে শহরের যে সড়কটি মজমপুর গেট হয়ে পাঁচ রাস্তার মোড়ে এসে মিশেছে, সেই রাস্তা ধরে পায়ে হেঁটে এসে দুই ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে উঠে হাতে থাকা লাঠি বা লোহার কোনো জিনিস দিয়ে ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করে। গভীর রাত হওয়ায় এরপর নির্বিঘ্নেই তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়।
স্থানীয়রা জানান, পাঁচ রাস্তার মোড় এলাকায় একটি ব্যাংক, অপর একটি ব্যাংকের ফাস্ট ট্রাক এটিএম বুথ এবং রাস্তার পাশে স্থাপন করা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশ সংগ্রহ করে ভাঙচুরের সাথে জড়িত দু’জনকে শনাক্ত করেছে।
এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন খুলনা বিভাগীয় পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি এ.কে.এম নাহিদুল ইসলাম। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় অতিরিক্ত ডিআইজি এ.কে.এম নাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্যে আঘাত করে দুর্বৃত্তরা মূলত আমাদের প্রাণে আঘাত করেছে। এদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনার পর কুষ্টিয়া শহরে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে দফায় দফায় ভাঙচুর ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হামলার ছবি তুলতে গিয়ে দুই গণমাধ্যমকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রবিবার বেলা ৩টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক প্রতিবাদ সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার উদ্যোগে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে দেশব্যাপী ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মধ্যেই কুষ্টিয়ায় এ ঘটনা ঘটে।
আপডেট…
কুষ্টিয়া পৌর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় চারজন গ্রেফতার। তারা চারজন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দুই ছাত্র ও দুই শিক্ষকক।
৬ ডিসেম্বর ২০২০, রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। যে মৌলবাদীরা জাতির পিতার ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালিয়েছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ মনে করেন, তারা অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছেন, এটা তাদের ধারণার ভুল।’
আটক চারজন হলেন, কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইবনে মাসউদ মাদ্রাসার ছাত্র আবু বকর ও মো. সবুজ ইসলাম নাহিদ এবং ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আলামিন ও ইউসুফ আলী।
সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওতে আবু বকর ও নাহিদকেই ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালাতে দেখা গিয়েছিল বলে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। স্থানীয় সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, রাত সোয়া ২টার পর টুপি মাথায় পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত দুইজন পায়ে হেঁটে এসে বাঁশের মই বেয়ে উঠে নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে ভাঙচুর করে।
সে প্রসঙ্গ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গভীর রাতে এসে… দুজনের ভিডিও ফুটেজ দেখা গেছে। তারা দুজন হাতুড়ি দিয়ে ভেঙেছে।… তারা ইবনে মাসউদ মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে এসে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।”
[soliloquy id=”2470″]
এসডব্লিউ/নসদ/১৭১৫
আপনার মতামত জানানঃ