প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে র্যাবের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মার্কিন অর্থ দপ্তর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর মধ্যে সাতজন বাংলাদেশের।
আলোচনার টেবিলে যারা মার্কিন এ নিষেধাজ্ঞাকে খুব একটা পাত্তা দিতে রাজি নন তাদের যুক্তি হলো, বর্তমান সরকারের সময়ে দুদেশের সম্পর্ক একটা নতুন উচ্চতায় গিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শুধু একটি প্রভাবশালী দেশই নয়, এ অঞ্চলের ভূরাজনীতিতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। অতএব বাংলাদেশকে এড়িয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অসম্ভব। তাছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সব দিক থেকেই যে গভীরতায় পৌঁছেছে এবং ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন যে পর্যায়ে আছে তাও মার্কিন সরকারকে দুবার ভাবাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে।
যারা এ নিষেধাজ্ঞাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে তাদের যুক্তি হলো, যাদের দীর্ঘ সময়ের নিরবচ্ছিন্ন তৎপরতার ফলে এ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হলো হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল। এরা বিশ্বব্যাপী ‘স্বীকৃত’ মানবাধিকার সংগঠন। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও বহু নীতিনির্ধারকের ওপর এদের প্রভাব খুব প্রবল। তাছাড়া জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন-অনুসৃত নীতি থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলে আসছেন। তাই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ উক্ত নিষেধাজ্ঞাতেই থেমে থাকবে না।
নিষেধাজ্ঞার পেছনকার ভূরাজনৈতিক কারণ
কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন কূটনৈতিক কথাবার্তায় নিষেধাজ্ঞার উপসর্গ ফুটে উঠছিল। কূটনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে ফিসফাস করে কথাও হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত গত শুক্রবার বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে এ নিষেধাজ্ঞা নেমে এল। বিবেচনা করতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র হুট করে বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করল কেন? যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মাদকবিরোধী অভিযানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। এই মানবাধিকার লঙ্ঘন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
এতে জানানো হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে র্যাবের বিরুদ্ধে ৬০০ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা ও ৬০০ জনকে গুম করার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালে কক্সবাজারে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে এই বিজ্ঞপ্তিতে। এ ছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক, গণমাধ্যম ও মানবাধিকারকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
র্যাবের বিরুদ্ধে এক দশক ধরেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনাও হয়েছে। সরকার বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন। তাই কৌশল হিসেবে শুরুতেই এসব বিষয়ে কোনো কথা না বলে এখন নিষেধাজ্ঞা জারির মাধ্যমে বাংলাদেশকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র সম্মেলনেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ করেনি।
চাপের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, তা নিয়ে ভাবলে বের হয়ে আসবে ভূরাজনীতির কালো বিড়াল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে রাশিয়া ও চীনকে কেন্দ্র করে নতুন এক বিশ্বের উদ্ভব ঘটছে। নতুন এই বিশ্বব্যবস্থায় রাশিয়া থেকে মিলছে অস্ত্র এবং চীন থেকে মিলছে ঋণ, সস্তা পণ্য ও প্রযুক্তি। ফলে, অনেকেই চীন ও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে। তারপরও আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে পিছু হটেছে যুক্তরাষ্ট্র। পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তেও সুবিধা করতে পারছে না।
যুক্তরাষ্ট্র তাই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে বিভিন্ন দেশকে চীন-রাশিয়ার অক্ষ থেকে সরিয়ে আনতে চেষ্টা করবে। বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের জোটভুক্ত করতে চাইবে। বাংলাদেশ পুরোপুরি চীন-রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে আছে, তা বলা যাবে না; বরং সবদিকেই ভারসাম্য রক্ষা করে এত দিন চলছিল। কিন্তু ভারসাম্যের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, বাংলাদেশ প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামরিক জোটে যোগ দিক— এটা যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া। বাংলাদেশ এখনো এসব জোটে যোগদানের প্রতিশ্রুতি না দেওয়ায় চাপ আসছে।
এসবের মধ্যে চাপ আসার পরিস্থিতি সরকার নিজেই করে রেখেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পুরোনো। এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের নির্বাচনব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন নির্বাচনীব্যবস্থাকে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বিভিন্ন যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশ, র্যাব ছাড়াও সরকারি দলের ‘হেলমেট বাহিনী’ হামলা করেছে। তুচ্ছ সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্যও সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনা ঘটেছে, লোকজনকে আটক করা হচ্ছে। প্রতিপক্ষহীন চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ব্যাপক সহিংসতা হচ্ছে। গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনেরা জীবিত না হোক অন্তত কবরের সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন করছেন। এসব কোনো কিছুই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গোপন নেই।
সবকিছু যুক্তরাষ্ট্রের নজরে থাকলেও ওবামা বা ট্রাম্প প্রশাসনের সময় কোনো নিষেধাজ্ঞা আসেনি। যুক্তরাষ্ট্র সময়মতো কেবল তার ‘অস্ত্র’ প্রয়োগ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিষেধাজ্ঞার কারণে পরোক্ষভাবে বাণিজ্যসহ কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কোন নেতিবাচক প্রভাব দেখছে না সরকার
বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য এ নিষেধাজ্ঞা ক্ষতিকর ও হতাশার। ভবিষ্যতে উত্তর কোরিয়া, চীন, রাশিয়া, ইরানসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের নামও উচ্চারিত হবে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন হিসাব নিকাশের প্রয়োজন পড়তে পারে, যা দেশের স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে এ নিষেধাজ্ঞা।যদিও সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
যদিও শাহরিয়ার আলম বলছেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর অন্য কোথাও কোনো ধরনের প্রভাব নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও এটি বিস্তৃত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অনেক উড়ো খবর বেরিয়েছে যে আরও কিছু ব্যক্তি ও সংস্থার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ হতে পারে, সেটি তিনি নাকচ করে দেন।
তিনি বলেন, ‘র্যাব আমাদের গর্বের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের অনেক সফলতার ভাগীদার র্যাব। তাদের (র্যাব) এবং তাদের কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। সেই জায়গা থেকে আইনি বিষয়গুলো দেখছি। কয়েক দিন ধরে বিস্তারিতভাবে কিছু বিষয়ে বৈঠক করেছি।’
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আইনি বিষয়েও কথা বলেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে ভুল ধারণা ছিল যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নিতে হবে। পরে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এটা শুরু করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই।
ইতিমধ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কী কী কারণে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং রাজস্ব বিভাগ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এবং এর ব্যাপ্তি কতটা, তা আমরা লিখিতভাবে জানতে চেয়েছি। আমাদের বলা হয়েছে, তারা উত্তর দেবেন। তবে সময় নেবেন।
আপনারা জানেন যে কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে হলে অভিযোগকারী পক্ষের যুক্তিগুলো লিখিত আকারে লাগবে, যাতে সেগুলো আদালতে উপস্থাপন করা যায়। আমরা সেই প্রথম ধাপে আছি। এ পর্যন্ত আমাদের সামনে বিকল্পগুলো কী কী, তা নিয়ে একাধিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছি। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে যেটি সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ, সেটিই আমরা বেছে নেব।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, আগামী এপ্রিলে দুই দেশের মধ্যে অংশীদারত্ব সংলাপ এবং কাছাকাছি সময়ে বাণিজ্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিটি আলোচনায় মানবাধিকার নতুন প্রসঙ্গ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। মানবাধিকার বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে।
আ’লীগ ও যুক্তরাষ্টের সম্পর্ক
আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসে বারাক ওবামা সরকার। আর তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন হিলারি ক্লিন্টন যার সঙ্গে শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের গভীর সম্পর্ক অত্যন্ত সুবিদিত। সেই সময়ে অবসরের বয়স অতিক্রান্তের পরও গ্রামীণব্যাংক থেকে ড. ইউনূসের অপসারণ, সরকারি বিধিবদ্ধ এ সংস্থায় যেকোনো মূল্যে ড. ইউনূসের কর্তৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা, বিশ্বব্যাংকের কথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে পড়া ইত্যাদি ইস্যুতে হিলারি আওয়ামী লীগ সরকারকে তটস্থ রাখে।
এমনকি ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেরই অনুমোদন নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মোড়ল হওয়া ভারতের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। ওবামা-পরবর্তী ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের কাছে দক্ষিণ এশিয়া এক ধরনের ইজারা দিয়ে এ অঞ্চল থেকে কেটে পড়ে। তাছাড়া ট্রাম্প তার পূর্বসূরিদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুকে ব্যবহার করে দেশে দেশে হস্তক্ষেপ করার নীতিটিও বর্জন করে বলে মনে হয়। মধ্যপ্রাচ্যেও রাজা-আমিরদের কাছ থেকে টাকা তোলা এবং ইসরাইলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়ে তিনি যতটা মনোযোগী ছিলেন বিশ্বের অন্য কোনো অঞ্চল নিয়ে ততটা আগ্রহ তার ছিল না বললে বাড়িয়ে বলা হবে না।
এখন আবার যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় এসেছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ওবামারই ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ড. ইউনূসও আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাই মানুষের মাঝে এ ধারণাটা হওয়া স্বাভাবিক যে, বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের সম্পর্ক খুব মসৃণ যাবে না।
এ ধারণার পাশাপাশি এটাও মনে রাখা দরকার যে, ২০১৪ আর ২০২১ সাল এক নয়। এতদিনে বুড়িগঙ্গায় যেমন অনেক জল গড়িয়ে গেছে তেমনি মিসিসিপির পানিও স্থির থাকেনি। ওবামা ও তার পূর্বসূরি জর্জ বুশের আমলে যত জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ‘সবক’ দিতে গিয়েছিল সেই সব জায়গা থেকেই তাকে পাত্তাড়ি গোটাতে হয়েছে। আফগানিস্তান থেকে তো বাইডেনকে এক প্রকার থালা-বাটি ফেলেই পালাতে হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়া ভাতে ছাই ছিটানোর জন্য রাশিয়া ও চীন প্রায় তৈরি হয়ে গেছে।
অনেকের মতে, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে চীনের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছে তাই যুক্তরাষ্ট্র ওই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাকে সতর্ক করল। কিন্তু এ হিসাবটা যুক্তরাষ্ট্র ভালোই বোঝে যে, এ ধরনের ‘হঠকারী’ কোনো পদক্ষেপের পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই চীনের কোলে ঠেলে দেবে।
বাংলাদেশ একটা উন্নয়নশীল দেশ। তার উন্নয়নের চাকা দ্রুতবেগে ধাবমান। এর জন্য প্রচুর ফুয়েল দরকার যার জোগান একটা বা দুটো সোর্স থেকে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই সে বর্তমানে সহজে তহবিল পাওয়ার প্রধান উৎস চীনের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু এটা এখনও মাত্রা ছাড়িয়ে যায়নি।
সেজন্যই সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এক ধরনের ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা চলবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। অবশ্য বাংলাদেশও যে বসে থাকবে তা নয়। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ আরও বাড়ানোর অঙ্গীকার সরকার থেকে করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১০৩৫
আপনার মতামত জানানঃ