যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের বিষয় এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধীদল বিএনপি এখন বিতর্কে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের প্রশ্নে। এই বিতর্ক র্যাব এবং এর সাতজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত করছে।
পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব এবং এর কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে। এরপর লবিস্ট নিয়োগের প্রশ্ন ইস্যু হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে।
বাংলাদেশে লবিস্ট কেন রাজনৈতিক ইস্যু?
যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে প্রধান দুই দলের বিতর্ক গড়িয়েছে সংসদ পর্যন্ত। কিন্তু কেন এই বিতর্ক?
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব এবং এর সাতজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যখন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এরপরই লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে বিতর্কে নেমেছে বাংলাদেশের প্রধান দুই দল।
আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম-তারা দু’জনই সংবাদ সম্মেলন করে বিরোধীদল বিএনপির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র লবিস্ট নিয়োগ করে দেশবিরোধী তথ্য তুলে ধরার অভিযোগ করেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও একই অভিযোগ করছেন। অন্যদিকে বিএনপি পাল্টা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের করের টাকায় লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ তুলেছে।
মূলত আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই দলের নেতারাই পরস্পরের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগে কোটি কোটি টাকা খরচ করা এবং এই অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিবিসিকে বলেছেন, বিএনপি গত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্টের পেছনে সাড়ে ৩৭ লাখ ডলার খরচ করেছে, যা বর্তমান মূল্যে ৩২ কোটি টাকার মতো।
তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র্রের তিনটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে বিএনপি ২০১৮ সাল থেকে তিন বছরের জন্য চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তিপত্রে ঢাকায় নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা দেয়া হয়েছে। এসব চুক্তির কপি সরকারের হাতে এসেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে দেশ ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার তথ্যপ্রমাণ তারা পেয়েছেন-সেজন্য তারা বিএনপির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সামনে এনেছেন।
এদিকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তারা পাল্টা অভিযোগ করেছেন, মানুষের করের টাকা থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সরকার যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছে।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাদের দল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কোন লবিস্ট নিয়োগ করা হয়নি।
তিনি অভিযোগ করেন, মানবাধিকার লংঘনের ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র র্যাব এবং এর কর্মকর্তাদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে-সে বিষয়টি আড়াল করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং সরকার তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে তদন্তের কথা বলা হচ্ছে। ফলে লবিস্ট ইস্যুতে এই বিতর্ক এখনই থামছে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বিশ্লেষকদের মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকা রয়েছে, এমন একটি ধারণা জানগণের সামনে তুলে ধরতে চাইছে আওয়ামী লীগ। সেজন্য বিএনপির বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ এখন আনা হচ্ছে।
লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ যেমন সেই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে মানুষকে ভিন্ন ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে বিএনপি অভিযোগের জবাবে পাল্টা অভিযোগ করছে।
একইসাথে মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, বিএনপি বিরোধী দল হিসাবে দেশের ভেতরে ভূমিকা রাখতে পারছে না। দলটি সেই ব্যর্থতা ঢাকার জন্যও লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ অব্যাহত রেখেছে।
এছাড়া মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, লবিস্ট যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ হলেও বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই সংস্কৃতি নেই।
মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশে লবিং অর্থ তদ্বির হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিদেশে তদ্বির করার বিষয় সাধারণ মানুষ ভিন্নভাবে দেখতে পারে। এমন চিন্তা থেকেও দল দু’টি এই বিতর্ক করছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৫৫
আপনার মতামত জানানঃ