বিমানবন্দরে পোশাক খুলে তল্লাশির ঘটনায় কাতারের বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করছেন অস্ট্রেলিয়ার সাতজন নারী। দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত বছর এই নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন তারা।
এ সম্পর্কিত আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, আগ্রাসীভাবে গাইনোকলজিক্যাল পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল ওই নারীদের। এ ঘটনার প্রভাবে মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তারা।
সিডনিভিত্তিক আইনি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান মার্ক ল’ইয়ার্সের আইনজীবী ডেমিয়ান স্টারজ্যাকার বলেন, ‘ওই সময় যে রকম আক্রমণাত্মক আচরণের শিকার হয়েছিলেন আমার মক্কেলরা এবং এর প্রভাবে পরবর্তী সময়ে যেভাবে ভুগেছেন, সেজন্য তারা ক্ষতিপূরণ চান।’
যা ঘটেছিল
২০২০ সালের ২ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা ১৩ জনের একটি দলে ছিলেন ওই সাত নারী। সিডনি থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে চড়ে দোহায় পৌঁছান তারা।
কাতারের দোহা বিমানবন্দরের একটি আবর্জনার বিনে প্লাস্টিকে মোড়ানো অবস্থায় এক নবজাতক উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সন্দেহবশত কাতার এয়ারওয়েজের ১৮ জন নারী যাত্রীকে খোলা পরিবেশে নার্সের তত্ত্বাবধানে কাপড় খুলে তল্লাশি চালায়। তাদের মধ্যে ২ জন ব্রিটিশ এবং বাকি ১৬ জন নারী অস্ট্রেলীয়।
এ ঘটনায় মামলা করতে চাওয়া ওই সাত নারীর কেউ শিশুটির মা কি না, সে সন্দেহ নিরসনে তাদের শারীরিক পরীক্ষা দিতে বাধ্য করে কর্তৃপক্ষ।
দোহা থেকে রওনা দেয়ার উদ্দেশ্যে অপেক্ষারত আরও নয় বা ১০টি ফ্লাইটও সেদিন বিলম্বিত হয়েছিল বলে জানান ডেমিয়ান। কারণ ওই ফ্লাইটগুলোর নারী আরোহীদেরও সে সময় একইভাবে পোশাক খুলে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল।
মামলার পরিকল্পনাকারী নারীরা জানান, বিমানবন্দরের টার্মাকে একটি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে পোশাক খুলে তল্লাশি করা হয়েছিল তাদের।
দেশে ফিরে ঘটনার বিষয়ে তাদেরকে তল্লাশির আগে কিছু জানানো হয়নি এবং অনুমতি ছাড়া জোরপূর্বক তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয় বলে অভিযোগ জানান ওই নারীরা। এ ঘটনায় কাতারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ জানায় অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ।
ভুক্তভোগী এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে এতটাই জঘন্য আচরণ করা হচ্ছিল এবং ভয়াবহ শারীরিক আক্রমণ করা হয়েছিল যে আমি ধরেই নিয়েছিলাম, আমাকে মেরে ফেলা হবে। অনেকগুলো লোক বন্দুক হাতে নিয়ে আমাদের ঘিরে রেখেছিল। আমার স্বামীকে মেরে ফেলতে পারে বলেও ভয় পেয়েছিলাম।’
মামলার পরিকল্পনা
ডেমিয়ান স্টারজ্যাকার বলেন, ‘আমার মক্কেলদের সঙ্গে করা আচরণের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে কাতার সরকারকে। দীর্ঘদিন ধরেই এ দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা। শেষমেশ তারা আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন কারণ তারা চান না যে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক।’
৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী ওই নারীরা অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা করতে পারেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আসতে পারে মামলা দায়েরের ঘোষণা। তারা কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূরণ চান, তা উল্লেখ করেননি ডেমিয়ান।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কাতার সরকারের মুখপাত্র। তবে আগে দেয়া একটি বিবৃতির কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
গত বছরের ওই ঘটনার পর পারস্য উপসাগরীয় দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল থানি বলেছিলেন, ‘বিমানবন্দরে তল্লাশির ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীদের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’
অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে থানি আরও বলেছিলেন, ‘এ ঘটনার মাধ্যমে কাতারের আইন ও মূল্যবোধ লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
ওই ঘটনায় দায় স্বীকারে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কাতার এয়ারওয়েজ। আর তল্লাশির নির্দেশ দেয়া বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তাকে জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ, যদিও কারাদণ্ডাদেশ পরে স্থগিত করা হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৩০
আপনার মতামত জানানঃ