দীর্ঘদিন ধরেই শিশুদের জন্য আফগানিস্তান পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ স্থানগুলোর একটি।— সামান্থা মোর্ট, আফগানিস্তানে ইউনিসেফের যোগাযোগবিষয়ক প্রধান।
আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাত-সংঘর্ষ-সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে দেশটির শিশুদের ওপর। সম্প্রতি প্রকাশিত উনিসেফের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে সংঘাতের কারণে প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ৪৬০ শিশু।
এ তালিকায় গত বৃহস্পতিবার নিহত হওয়া ৪ জনও রয়েছে। যারা বেঁচে গেছে তারাও ভালো নেই। অনেকে পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। গতকাল রোববার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এদিকে, দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধবিধস্ত আফগানিস্তানে চলছে ভয়াবহ সংকট। বিভিন্ন পক্ষের মধ্যকার সংঘাতে বিপাকে মানুষের জীবন। এতে করে শিশুদের নিরাপত্তা ক্রমেই কমে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। আর অপুষ্টি তো রয়েছেই।
ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঘোর। সেখানে অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের মধ্যে কমপক্ষে ১৭ জন মারা গেছে।
আফগানিস্তানে শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। বছরের শেষের দিকে সেখানে দশ লাখ শিশু প্রাণঘাতী অপুষ্টির মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঘোর। সেখানে অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের মধ্যে কমপক্ষে ১৭ জন মারা গেছে।
প্রদেশের জনস্বাস্থ্য পরিচালক মোল্লা মোহাম্মদ আহমদী বলেন, ক্ষুধার প্রভাবের জন্য প্রায় ৩০০ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে শত শত শিশু অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের শিশু সংস্থার একজন মুখপাত্র বলেছেন, তিনি ঘোরের মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেননি কিন্তু আশঙ্কা করছেন ‘অনেক শিশু চূড়ান্ত মূল্য দিচ্ছে’।
ইউনিসেফের সালাম আল-জানাবি বলেন, এজেন্সির মনিটরিং নেটওয়ার্ক বিঘ্নিত হয়েছে এবং ঘটনাপ্রবাহের রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে; কিন্তু আমরা খুব বেদনাদায়কভাবে সচেতন যে এটি এমন কিছু, আমরা যার দ্বারপ্রান্তে বা মাঝখানে আছি।
আফগানিস্তানে তালিবানের উত্থানের মুখে নিরাপত্তার জন্য অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। যার কারণে অনেক আফগান শিশুকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়েছে। অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে এসব শিশুর স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারগুলো।
লন্ডনভিত্তিক অধিকার সংগঠন অ্যাকশন অন আর্মড ভায়োলেন্স (এওএভি) জানিয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে বিমান হামলায় হতাহত বেসামরিক মানুষের ৪০ শতাংশই শিশু। এ সংখ্যা ১ হাজার ৫৯৮।
এ বিষয়ে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল আফগানিস্তানের কান্ট্রি হেড ক্রিস নায়ামান্দি বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে আফগানিস্তান শিশুদের জন্য একটি ভয়ংকর প্রাণঘাতী দেশ। তাই দুঃখজনক হলেও সত্য, এ সংখ্যা আমাকে অবাক করে না।’
জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে যে, বছরের শেষের দিকে আফগানিস্তানে পাঁচ বছরের কম বয়সী দশ লাখ শিশুর জীবন ‘তীব্র মারাত্মক অপুষ্টি’র কারণে হুমকিতে রয়েছে। আরও ৩০ লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগবে।
আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তান ইতিমধ্যেই ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে গভীরভাবে ডুবে গেছে। খরা, খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং চাকরি হারানোর প্রভাব আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং অর্থায়নের সাথে বন্ধ হয়ে গেছে।
জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে যে, বছরের শেষের দিকে আফগানিস্তানে পাঁচ বছরের কম বয়সী দশ লাখ শিশুর জীবন ‘তীব্র মারাত্মক অপুষ্টি’র কারণে হুমকিতে রয়েছে। আরও ৩০ লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগবে।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের তথ্য অনুসারে, দেশটিতে দুই কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, আবহাওয়া আগের চেয়ে খারাপ হবে। যদি তা হয় তাহলে বিপুল সংখ্যক মানুষ তীব্র ক্ষুধা ও ব্যাপক দুর্ভিক্ষের হুমকির সম্মুখীন হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫২২
আপনার মতামত জানানঃ