স্তন ক্যানসার এক ঘাতক ব্যাধি। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগী ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যায়।স্তন ক্যানসার এখন সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নারীদের ক্যানসারের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। যদিও মাত্র দু-এক বছর আগে জরায়ুর ক্যানসার শীর্ষস্থানে অবস্থান করছিল।
স্তন ক্যানসার নারীদের কাছে একটি আতংকের নাম। পুরুষের চেয়ে নারীদের স্তন ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে শতভাগ বেশি। আর নারীরা তাদের নিজেদের এই গোপন অঙ্গের রোগগুলো সহজে কারও কাছে বলতে চান না। ফলে তারা স্তন ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বিশ্বে প্রতি আটজনে একজন নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বাড়ছে স্তন ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা, যার ৯৮ শতাংশই নারী। প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে প্রতিরোধের মাধ্যমে তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশই নিরাময়যোগ্য বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার (৯ অক্টোবর) বিশ্ব স্তন ক্যানসার দিবস উপলক্ষে রাজধানীর হাতিরঝিলে আয়োজিত র্যালিপূর্ব ‘ওয়াক ফর পিংক’ সমাবেশে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চতুর্থ জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (এইচপিএনএসপি) অধীনে এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো এই সমাবেশের আয়োজন করে সংগঠনটি।
আয়োজকরা জানান, বেশি বয়সে প্রথম সন্তান নেওয়া, সন্তানকে বুকের দুধ পান না করানো এবং অতিরিক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবনও এ ঝুঁকির কারণ। তবে সূচনাতেই শনাক্ত করা গেলে সহজেই এ রোগ থেকে সুস্থতা লাভ করা সম্ভব বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।
ওয়াক ফর পিংক এর কো-অর্ডিনেটর ডা. উম্মে হুমায়রা কানেতা জানান, গত দুই বছরে তারা অনলাইন-অফলাইনে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে স্তন ক্যানসার ও জরায়ু মুখের ক্যানসার সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ক্যানসারের কথা শুনলেই অনেকেই আঁতকে ওঠেন। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই জানেন না এটি প্রতিরোধযোগ্য। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্যগুলো জানা না থাকায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিগুলো কাদের মধ্যে বেশি, প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী কী এবং যেসব নারী ঝুঁকি বহন করছেন, তারা কীভাবে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সহজে বিপদ এড়িয়ে চলতে পারেন, এ নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা এখন সময়ের দাবি।
এদিকে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসি’র হিসেবে, নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ১৯% স্তন ক্যান্সারে ভোগেন। নারী-পুরুষ মিলে ৮.৩%।
আইএআরসি বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ হাজারের বেশি নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। মারা যান ৬৭৮৩ জন।
বেশির ভাগ নারী নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে যেসব মায়েরা সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ান না,তাদের স্তন ক্যানসারে ঝুঁকি বেশি।
স্তন ক্যানসারের বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে। স্তন কিংবা বগলে চাকা বা দলা অনুভব করা, স্তনের কোথাও লালচে ভাব কিংবা ব্যথা অনুভব, গুটি অনুভব করাসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।
নারীরা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন সবচেয়ে বেশি। এজন্য এক্ষেত্রে নারীদের সচেতন হতে হবে। কারণ একজন সুস্থ মা একজন সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ নারীরা তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না। এছাড়া তারা ডাক্তারের কাছে যেতে চান না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্তন ক্যানসার পুরোপুরি প্রতিরোধ করা যায় না। কারণ, কিছু কিছু ব্যাপার আছে, যা এড়ানো সম্ভব নয়। যেমন নারী হয়ে জন্ম নেওয়া, বয়স বাড়া, সন্তান ধারণ না হওয়া, অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া ও দেরিতে মাসিক বন্ধ হওয়া, পরিবারে স্তন, জরায়ু, ডিম্বাশয়, কোলন ক্যানসারের ইতিহাস থাকা ইত্যাদি। এই ঝুঁকিগুলো যাদের আছে, তাদের নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত।
তবে কেউ সচেতন হলে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হলে নিরাময় হওয়ার হার প্রায় শতভাগ। সে ক্ষেত্রে একজন স্তন ক্যানসারের রোগীও সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপন করতে পারবেন।
তারা বলেন, আমাদের দেশে সচেতনতার অভাবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেক দেরিতে ক্যানসার ধরা পড়ে। এ কারণে চিকিৎসায় রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এই রোগের বিভিন্ন ঝুঁকির বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে পারলে প্রাথমিক পর্যায়ই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের দেশে স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের বিকল্প নেই।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৫৬
আপনার মতামত জানানঃ