সিরিয়ার বড় দুই শরণার্থী শিবিরে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে বড় হচ্ছে শিশুরা। এতে নষ্ট হচ্ছে তাদের জীবন। সুন্দর ভবিষ্যতের বদলে অন্ধকারে ধাবিত হচ্ছে তারা। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক এনজিও সেভ দ্য চিলড্রেন। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
জানা যায়, আজ বৃহস্পতিবার নতুন এক প্রতিবেদনে সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরগুলোতে বসবাসরত শিশুদের বিপজ্জনকভাবে বেড়ে ওঠার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। দেশটির দুটি বড় শরণার্থী শিবির আল-হোল ও রোজ ক্যাম্পে শিশুদের কোনো শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। শিশুশ্রমিকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে আশংকাজনকহারে। সেইসঙ্গে সহিংসতা ও খুনের ঘটনা যেন নিত্যদিনের বিষয়।
সহিংসতার কারণে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৬২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে আল-হোলে। শিবিরিগুলোতে শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন দল একে ওপরের সঙ্গে সহিংসতায় লিপ্ত হয়েই থাকে। এসব ঘটনায় অনেকে গুরুতর জখম হয়ে মৃত্যুকোলে ঢোলে পড়ে। সেইসঙ্গে মাদকের ছড়াছড়ি তো আছেই।
এছাড়া আগুনের কারণেও ঘটছে অকাল মৃত্যুর ঘটনা। বিশেষ করে রান্নার চুলা থেকে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।
শিবিরে শিশুদের অবস্থা তুলে ধরে ১০ বছরের শিশু বুশরা জানায়, তার আল-হোলে বাস করতে ভয় করে। এখানে সবাই মারামারি করে। চোখ বন্ধ করলেও শোনা যায় এখানে তর্ক চলছে, মারামারি হচ্ছে। সবাই একে অপরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
১১ বছরের সামিয়া জানায়, গত মে মাসে এখানে আগুন লাগলে অনেকের তাবু পুড়ে যায়। আমাদের তাবুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার জামা-কাপড়, খেলনা সব পুড়ে গেছে।
নাটকীয়ভাবে সিরিয়া সংকটের শুরু হয়। ২০১১ সালের মার্চ থেকেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হলে সিরিয়ায় মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে। সে বছরই প্রায় ১০ লাখ মানুষ সিরিয়া ছেড়ে পালিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী দেশে। পরের ছয় মাসে আরও ১০ লাখ মানুষ শরণার্থীর জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়। এরপর এত বছর পেরিয়ে গেছে সিরিয়া সংকটের সমাধান হয়নি। এরই মধ্যে সিরিয়া ছেড়েছে ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ।
সহিংসতার কারণে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৬২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে আল-হোলে। শিবিরিগুলোতে শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন দল একে ওপরের সঙ্গে সহিংসতায় লিপ্ত হয়েই থাকে। এসব ঘটনায় অনেকে গুরুতর জখম হয়ে মৃত্যুকোলে ঢোলে পড়ে। সেইসঙ্গে মাদকের ছড়াছড়ি তো আছেই।
সিরিয়া শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক। এরই মধ্যে তুরস্কে ২৫ লাখ সিরিয়ান শরণার্থী আশ্রয় পেয়েছে। সিরিয়ান শরণার্থীরা সারা বিশ্বে আশ্রয় নিয়েছে। নিবন্ধনকৃত সিরিয়ান শরণার্থীরা তুরস্ক, লেবানন, জর্ডান, জার্মানি, সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত, ইজিপ্ট, সুইডেন, হাঙ্গেরি, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়া, সিঙ্গাপুরসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে আশ্রয় নিয়েছে। বিশ্বজুড়ে শরণার্থী ছড়িয়ে পড়ার এমন ঘটনা ইতিহাসে এত বড় পরিসরে আর ঘটেনি। এ ছাড়া প্রথম দুটি বিশ্বযুদ্ধের পর এত অল্প সময়ের ব্যবধানে এত মানুষকে দেশ ছেড়ে শরণার্থীর জীবন বেছে নিতেও হয়নি।
বর্তমান বিশ্বে শরণার্থী সমস্যার সবচেয়ে দুঃখজনক চিত্র এটি। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের ফলে এই শরণার্থীদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো যে অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা করছে তা খুব সামান্য। যে কারণে সিরিয়ান শরণার্থীদের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিকভাবেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছে সিরিয়ান শরণার্থীরা।
সিরিয়ার শরণার্থীদের শিশু ও নারীরা পড়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। ইউরোপের কয়েকটি দেশ সিরিয়া শরণার্থীদের জন্য মানবতার হাত বাড়িয়ে দিলেও আর্থিকভাবে সচ্ছল, উন্নত ও সামরিক শক্তিধর দেশগুলো সিরিয়া শরণার্থীদের ব্যাপারে নিয়েছে কৌশলী ভূমিকা। তাদের আশ্রয় দিতে চাচ্ছে না সব সময় মানবতার বুলি আওড়ানো বেশির ভাগ দেশের রাষ্ট্রনেতারা।
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় ২০১১ সালের ১৮ মার্চ গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রায় তিন লাখ ১ হাজার ৭৮১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তবে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি হবে বলে দাবি মানবাধিকার সংগঠনের।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, ওই যুদ্ধে প্রাণহানির সংখ্যা চার লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে ঘরহারা হয়েছেন ২০ লাখেরও বেশি মানুষ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৮
আপনার মতামত জানানঃ