বেওয়ারিশ কুকুর নিধন বন্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সুনির্দিষ্ট আদেশ দাবি করেছিলেন সংক্ষুব্ধরা। কিন্তু আদালত এই রিটের শুনানি করেনি, দেয়নি কোনো আদেশ বা নির্দেশনা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেওয়ারিশ কুকুর অপসারণ বন্ধ থাকার যুক্তি দেখিয়ে আইন কর্মকর্তা বক্তব্য দিলে তাতে সন্তুষ্ট হয়ে এ সংক্রান্ত রিটটি শুনানির কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছে হাইকোর্ট।
২৩ নভেম্বর ২০২০, সোমবার রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, ‘আমি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, আপাতত কুকুর অপসারণের সিদ্ধান্ত নেই। যদি কখনও অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাহলে রিটকারী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে কুকুর অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ এরপর বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ কুকুর অপসারণ বন্ধের দাবিতে করা রিট মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশিষ ভট্টাচার্য ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম। পরে ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব বলেন, ‘আদালত বলেছে, যেহেতু অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন সিটি করপোরেশন আপাতত কুকুর অপসারণ করছে না। তাই আমরা মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিচ্ছি। তবে রিটকারীরা চাইলে আবারও মামলাটি উপস্থাপন করতে পারবেন।’
গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানী থেকে বেওয়ারিশ কুকুর স্থানান্তর করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। ‘অভয়ারণ্য’ নামে প্রাণী কল্যাণ সংগঠনের সভাপতি রুবাইয়া আহমেদ, পিপলস ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ারের চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল ও অভিনেত্রী জয়া আহসান এ রিট আবেদন দায়ের করেন। ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুর তাদের পক্ষে এ রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে কুকুর স্থানান্তর ও ডাম্প করার বিষয়ে ডিএসসিসির কার্যক্রমের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারির আরজি জানানো হয়। রিটে ডিএসসিসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, প্রাণী কল্যাণ আইন-২০১৯ এর ধারা-৭ অনুযায়ী বেওয়ারিশ কুকুরসহ কোনো প্রাণীকে অপসারণ, স্থানান্তরিত ও ফেলে দেয়া যাবে না। অথচ অভিযোগ রয়েছে ডিএসসিসির মৌখিক আদেশে টিএসসি ও ধানমন্ডি থেকে বেওয়ারিশ কুকুর তুলে নিয়ে মাতুয়াইল ফেলে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য কুকুর স্থানান্তরের বিষয়ে ডিএসসিসির সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমের বৈধতা রিট আবেদনে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ডিএসসিসি কুকুরের সংখ্যা কমানোর জন্য যে অমানবিক প্রকল্প নিয়েছে তার সফলতার কখনই কোনো উদাহরণ নেই। এ ধরনের অমানবিক প্রকল্প বন্ধের জন্য ও প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯ এর অধীন বিধি প্রণয়নের হাইকোর্ট এর নির্দেশনা দেয়া একান্ত প্রয়োজন।
কিন্তু আদালতের কাছ থেকে সেরকম সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা এলো না। রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে শুরু থেকেই আদালতের আগ্রহ ছিল সালিশ মীমাংসার দিকে। বাদী ও বিবাদীর বৈঠকের জন্য এর আগে এক দফা শুনানি পিছিয়েছিল আদালত। এবার বিবাদী পক্ষের মৌখিক ঘোষণা মোতাবেক বিষয়টি সুরাহা করা হলো। অথচ বিবাদী যেহেতু সরাসরি রাষ্ট্র, ক্ষমতাধর পক্ষ, সুতরাং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সুস্পষ্ট রায় ঘোষণাই কাম্য ছিল বলে আইনজীবীদের অভিমত।
বেওয়ারিশ কুকুর রক্ষা আন্দোলনের একজন কর্মী বলেন, ‘কুকুর রক্ষার আন্দোলন আসলে একটি প্রাণী রক্ষা আন্দোলন। কিন্তু মুসলিম ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কুকুরকে অপবিত্র গণ্য করা হয় বিধায় কুকুরের অধিকার এ দেশে গুরুত্ব পায় না। কুকুর রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে তাই পরিবার ও সমাজে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতার মধ্যেও পড়েছি।’ নামপ্রকাশে অনীহা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘আদালতে গিয়েও আমরা বুঝেছি যে, তারা এ নিয়ে বিব্রত বোধ করছে। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী এখানে ন্যায়বিচারের মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমার মনে হয় এটা যদি অন্য কোনো প্রাণী হতো, তাহলে আমাদের আদালতে যাওয়া লাগত না, স্বতঃপ্রণোদিত রায় অনেক আগেই চলে আসত।’
মিই/আরা/১৪১০
আপনার মতামত জানানঃ