ভারতীয় অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চ্যাটার্জির মর্যাদা রক্ষায় লড়ছে বাংলাদেশের পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গের ওই চিত্রনায়িকার মানহানির একটি মামলা তদন্ত করছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা খুলনা মহানগরের পুলিশ। নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার পুলিশ ভারতীয় নায়িকার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কুপ্রস্তাবসহ নানা ধরনের বার্তা পাঠানোর অভিযোগে মাহাবুবুর রহমান (৩৩) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে।
১৯ নভেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার গ্রেফতার মাহাবুবকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম আসামীর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। গ্রেফতারকৃত যুবক খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ৬/১ বকশিপাড়া রোডের বাসিন্দা সামছুল আলমের বাড়ির ভাড়াটিয়া আতিকুর রহমানের ছেলে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় চিত্রনায়িকা শ্রাবন্তী বিষয়টি ভারতীয় হাই কমিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিচার চেয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের নির্দেশে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় গত ১৬ নভেম্বর মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বাদি হয়েছেন সোনাডাঙ্গা মডেল থানার এসআই মো. খালিদ উদ্দিন। মামলাটি তদন্ত করছেন একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাধে শ্যাম সরকার।
বাংলাদেশ পুলিশ নিজ দেশের নারীদের নিপীড়ন প্রতিরোধে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। ডিজিটাল মাধ্যমে এ ধরণের ভুক্তভোগীর সংখ্যা প্রচুর এবং তারা পুলিশের ওপর আস্থা রাখেন না। সাম্প্রতিক এক গবেষণার বরাত দিয়ে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএএফ) সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ভুক্তভোগীদের ৮০ দশমিক ছয় শতাংশ আক্রান্ত হওয়ার পরও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন না। এর মধ্যে ২৩ শতাংশ নারী মনে করেন, পুলিশের কাছে গেলে গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে।
পুলিশ যে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, পরিসংখ্যানই সেটা প্রকাশ করে দিচ্ছে। পুলিশি ব্যর্থতার কারণেই আক্রান্তের সংখ্যা কমার কারনে বেড়েই চলেছে। সিসিএএফ সূত্রে জানা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে নারী ভুক্তভোগীর সংখ্যা ২০১৮ সালের চেয়ে ২০১৯ সালে ১৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর মোট ভুক্তভোগীর ৬৭ দশমিক নয় শতাংশই ছিল নারী। পুলিশের যথেষ্ট উদ্যোগ না থাকায় ২২ দশমিক সাত শতাংশ নারী অভিযোগ দায়ের করতে পারেননি। কারণ তারা জানেনই না যে কীভাবে আইনি সহায়তা নেওয়া যায়।
সাইবার জগতে আক্রান্ত হওয়া নারীরা যে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, এটা পুলিশপ্রধানও স্বীকার করেছেন। এ কারণেই তারা সম্প্রতি ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ নামে নতুন একটি সেবা চালু করেছে। সেবাটি উদ্বোধনের সময় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের সাইবার অপরাধ দমন ইউনিট রয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে অনেক নারীই এসব জায়গায় অভিযোগ জানাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। সেজন্য নতুন এই ইউনিট চালু করা হয়েছে।
ভারতীয় নায়িকার মানহানি মামলা ঘিরে পুলিশের এই দৌড়ঝাঁপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাল্কা কৌতুকের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই পুলিশকে অভিবাদন জানাচ্ছেন এবং তির্যক ভাষায় টিপ্পনি কাটছেন। সাহাব উদ্দিন লিখেছেন, ‘জুয়েলকে পুলিশ গ্রেফতার করায় আমি খুশি হয়েছি, এটা অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে আমাদের দেশের নারীরা বেশিরভাগ সময় এ ধরণের অভিযোগের বিচার পান না। শ্রাবন্তী চ্যাটার্জি ভারতীয় নাগরিক দেখে তার জন্য পুলিশের এই তৎপরতার, যা দেশের নাগরিকদের জন্য দেখা যায় না ।’
কেউ কেউ বিষয়টির সঙ্গে রাজনীতিকেও টেনেছেন। আফজাল হোসেন লিখেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক খুব ভালো, এটা তারই নজির। দেশের নাগরিকদের চেয়েও এখন ভারতীয় নাগরিকদের দাবি, এই রাষ্ট্রের কাছে বেশি। তাছাড়া মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব যে ‘রাধে শ্যাম সরকার’ পেয়েছেন মদির শাসনামলে নিশ্চয়ই সেটাও তাৎপর্যপূর্ণ।
ফাআ/আরা/২০০০
আপনার মতামত জানানঃ