ভারত থেকে স্থলপথে দেশের ফেরার সময় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হেফাজতে থাকা দুই বাংলাদেশি নারীর একজনকে শ্লীলতাহানী ও অন্যজনকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ভারতের এক বিএসএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে। নির্যাতিতা দুই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই জওয়ানকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার গাইঘাটা থানার পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া বিএসএফ সদস্যের নাম রামেশ্বর কয়াল। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গাইঘাটা থানার ঝাউডাঙ্গা সীমান্ত এলাকায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
গ্রেপ্তারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার রামেশ্বর কয়াল এবং ওই দুই নারীকে বনগাঁ জেলার বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালত গ্রেপ্তার বিএসএফ সদস্যকে দুই দিনের পুলিশ রিমান্ড দেন। বাংলাদেশের দুই নারীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দুই নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ— তারা বেআইনিভাবে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছেন। তাই ১৪ ফরেনার্স আইনে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আর বিএসএফ সদস্যকে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত জওয়ানের নাম রামেশ্বর কয়াল। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটা থানার ঝাউডাঙ্গা সীমান্তের খড়ের মাঠ এলাকায়। বৃহস্পতিবার ধৃতকে বনগাঁ আদালতে হাজির করা হলে দুই দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এদিনই নির্যাতিতা বাংলাদেশি নারীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।তাদের মেডিকেলও করা হয়েছে বলেই পুলিশ সুত্রে জানা গেছে। ধৃত জওয়ানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং শ্লীলতাহানী দুটি ধারাতেই মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
এদিকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে যাওয়ার অভিযোগে দুই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে গাইঘাটা থানার পুলিশ।ধৃতদের বিরুদ্ধে ১৪ বৈদেশিক আইনের ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এদিন ধৃত দুজনকেও বনগাঁ আদালতে তোলা হলে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই দুই বাংলাদেশি মহিলার বাড়ি গোপালগঞ্জে। তারা তিন বছর আগে চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে এদেশে এসেছিল। এরপর দালাল মারফত গুজরাতে যায়। সেখানে নানা সময়ে বিভিন্ন শাড়ির শোরুমে তারা কাজ করেছে।
সম্প্রতি তারা দু’জনে বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য গাইঘাটায় আসে। চোরাপথে বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য স্থানীয় এক দালালকে ৩০ হাজার টাকা দেয়। বুধবার রাতে তারা ঝাউডাঙা সীমান্তের খড়ের মাঠ বিওপি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। জওয়ানরা ওই দুই বাংলাদেশি মহিলাকে ধরে খড়ের মাঠ ক্যাম্পে নিয়ে আসে।
ওই বিওপিতে কর্মরত ছিল ১৫৮ নম্বর ব্যাটালিয়ানের জওয়ান রামেশ্বর কয়াল। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর অন্যান্য জওয়ানরা দালালকে ধরতে বেরিয়ে গেলে রামেশ্বর কয়াল অনুপ্রবেশকারী এক মহিলাকে ক্যাম্পেরই একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। দ্বিতীয়জনেরও শ্লীলতাহানী করা হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের অভিযোগে বৃহস্পতিবার সকালে বিএসএফ ওই দুই মহিলাকে গাইঘাটা থানার হাতে তুলে দেয়। থানায় যাওয়ার পর নির্যাতিতা রামেশ্বর কয়ালের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর অভিযুক্ত জওয়ানকে গ্রেপ্তার করে।
ধৃত দুই মহিলা ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে, টাকা উপার্জনের জন্যই দুই বন্ধু বছর তিনেক আগে দালাল মারফত তাদের এদেশে নিয়ে এসেছিল। গুজরাতে তিন বছর কাজ করে তারা উপার্জনও করে। দালালদের মাধ্যমেই তারা খবর পায়, ঈদের সময় সীমান্তে বিএসএফের কড়াকড়ি রয়েছে। তাই সেই সময় তারা বাড়ি যায়নি। ঈদ শেষ হওয়ার পর দালালদের কথা মতো চোরাপথে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য গাইঘাটায় এসেছিল। কিন্তু জওয়ানরা তাদের আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে রামেশ্বর কয়াল নামের জওয়ান তাদের উপর নারকীয় অত্যাচার চালায়।
বনগাঁ আদালতের সরকারি আইনজীবী সমীর দাস ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিএসএফের ১৫৮ নম্বর ব্যাটালিয়নের এক জওয়ানের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার করা এক বাংলাদেশি মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আদালতে ওই মহিলার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। বিচারক সব কিছু খতিয়ে দেখার পর ধৃতকে দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, বিএসএফের ওই কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি কোনো অন্যায় কাজ করিনি। ওদেরকে কেবলমাত্র আটক করে নিয়ে এসেছি। ওই নারী অভিযোগ করতেই পারেন, কিন্তু আমি কিছু করিনি। তারা কেন অভিযোগ করেছে তা তারাই বলতে পারবেন।
বনগাঁ আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ওই নারীর বয়ান রেকর্ড ও তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৩
আপনার মতামত জানানঃ