করোনায় বিপর্যস্ত গোটা দেশ। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড ভেঙে বেড়েই চলেছে। এদিকে লকডাউনের কঠোর বিধি-নিষেধের কবলে পড়ে চোট পড়েছে জনজীবনে। লকডাউনে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অভাবের ভয়াল গ্রাস বসিয়েছে পরিবারে, ঘরের ভাতের হাঁড়িতে। এসব থেকে দূরে নয় দেশের কৃষকেরাও। তাদের কাজকর্ম ও জীবন যাপনেও নেমে এসেছে অভাব ও অন্টন। আমের এই মৌসুমে যাদের আমগাছ রয়েছে তারা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারলেও সেখানেও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের অত্যাচারে। ঢাকা পোস্টের এক খবরে জানা গেছে, দাবি করা এক লাখ টাকা দিতে না পারায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া এলাকার কৃষক নবী হোসেনের ৩ শতাধিক আম গাছ কেটে নিয়ে গেছে বন-বিভাগের কর্মকর্তারা।
আজ শনিবার (১০ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
কৃষক নবী হোসেন জানান, দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে আম বাগান গড়ে তুলি। এ বাগানকে ঘিরে প্রতিনিয়ত টাকা দাবি করত বন-বিভাগের কর্মকর্তারা। প্রতিবার টাকা দিলেও লকডাউনের কারণে এবার দাবিকৃত টাকা দিতে পারিনি। এজন্য বিট কর্মকর্তার নেতৃত্বে বনকর্মীরা আমার ৩ শতাধিক আম গাছ কেটে নিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, চার বছর আগে দুই একর জমিতে আম বাগান গড়ে তুলি। এ বাগানের আয়ে আমার সংসার চলে। গেল চার বছর ধরে বন-বিভাগের চাহিদা মতো টাকা দিলেও এবার লকডাউনের কারণে দিতে পারিনি। আর এবার এক লাখ টাকা দাবি করেছে বিট কর্মকর্তা ফেরদৌস। এ নিয়ে গেল কয়েকদিন অনেক তর্কাতর্কির পর আজ বেলা ১১টার দিকে আমার বাগানের সব গাছ কেটে নিয়ে গেছে। লকডাউনের মধ্যে গাছের সব আম বিক্রি করতেও পারিনি। এর মধ্যে সব কেটে শেষ করে দিল তারা।
কৃষক নবী হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেন বলেন, আমি চার হাজার টাকা দিতে চেয়েছি। কিন্তু ওরা এক লাখ টাকা দাবি করেছে। আমার বাবা এত টাকা কই পাবে! উল্টো এখন আবার সেই জমিতে সামাজিক বনায়নের নাটক করছে বিট কর্মকর্তা ফেরদৌস।
এবার এক লাখ টাকা দাবি করেছে বিট কর্মকর্তা ফেরদৌস। এ নিয়ে গেল কয়েকদিন অনেক তর্কাতর্কির পর আজ বেলা ১১টার দিকে আমার বাগানের সব গাছ কেটে নিয়ে গেছে। লকডাউনের মধ্যে গাছের সব আম বিক্রি করতেও পারিনি। এর মধ্যে সব কেটে শেষ করে দিল তারা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুনেছি নবী হোসেনের কাছে টাকা চেয়েছিল। কিন্তু সবাই তো টাকা দিয়ে বাগান করছে। দেখি আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করব।
টেকনাফ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নবী হোসেন দরিদ্র কৃষক। যারা টাকা দিতে পেরেছে তাদের গাছ কাটেনি বন বিভাগ। কৃষক নবী হোসেন টাকা দিতে পারেনি বলে তার গাছগুলো কেটে ফেলা হলো। এভাবে কতদিন বন-বিভাগকে টাকা দিয়ে চলবে, লকডাউনের কারণে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ খুবই কষ্টে আছে।
গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করে কক্সবাজার দক্ষিণ বন-বিভাগের হোয়াইক্যং রেঞ্জের শামলাপুর বিট কর্মকর্তা ফেরদৌস তুহিন বলেন, বাগানের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সেখানে সামাজিক বনায়ন করা হবে।
দাবিকৃত এক লাখ টাকা না দেয়ায় শুধু কৃষক নবী হোসেনের বাগানের গাছ কেন কাটা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে টাকা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেন বিট কর্মকর্তা।
বিভিন্ন সময় এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে কক্সবাজার দক্ষিণ বন-বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, টাকা নেয়ার বিষয়টি তদন্ত করব। যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে মনোবিদ, সাংবাদিক ও কবি পলিয়ার ওয়াহিদ বলেন, মানুষের মতো সমাজ ও রাষ্ট্রেরও একটা মন থাকে। কিন্তু যখন মনের ভাষা শরীর বুঝতে পারে না তখনই বিপদ নেমে আসে। ফলে মন আর শরীরের দ্বন্দ্বে আমাদের উভয়ই ক্ষতিগ্রন্থ হই। তাছাড়া স্বাধীন একটি দেশ যে অগণতান্ত্রিকভাবে চলছে তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বন বিভাগের দাবিকৃত টাকা না দিতে পারায় কৃষকের ৩০০ কাছ কেটে নেয়া! যে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বেতন জনগণ দেয় তাদের সাথেই যখন এ ধরণের অত্যাচার করা হয় তখন বুঝতে বাকী থাকে না যে, সাধারণ মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এর ফলে আরও বোঝা যায়, প্রশাসন আইনকে বৃদ্ধাঙুল প্রদর্শন করেই চলেছে। জনগণের বিরুদ্ধে যখন রাষ্ট্রই শুত্রু হয়ে যায় তখন মানুষের আর আশ্রয়ের কোনো জায়গা থাকে না। এর সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৪৪
আপনার মতামত জানানঃ