সাইবার শক্তির অনেক রকম সক্ষমতার ভিত্তিতে সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের র্যাঙ্কিং তালিকা প্রস্তুত করেছে থিংকট্যাংক গোষ্ঠী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস)। সংশ্লিষ্ট দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির শক্তি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পরিপক্বতা এবং সামরিক কার্যক্রমের সঙ্গে সাইবার স্থাপনাগুলো কতোটা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারছে— এমন অনেক বিষয়কে মাপদণ্ড ধরে এ তালিকা করা হয়।
আইআইএসএস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার সক্ষমতার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ সারিতে রয়েছে। আর রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, ইসরায়েল ও ফ্রান্সের সঙ্গে মিলে দ্বিতীয় কাতারে রয়েছে চীন।
সাইবার সক্ষমতার শীর্ষে থাকা এই যুক্তরাষ্ট্রেরই প্রায় ২০০টি প্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২ জুলাই) বিকেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা হানট্রেস ল্যাব এ তথ্য জানিয়েছে। খবর বিবিসির।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্লোরিডাভিত্তিক একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কাসিয়াকে হ্যাকের লক্ষ্যে বিভিন্ন করপোরেট নেটওয়ার্কে একটি সফটওয়্যার ছড়িয়ে দেয়া হয় বলে জানায় হান্ট্রেস ল্যাব।
এক বিবৃতিতে হানট্রেস ল্যাব জানায়, ফ্লোরিডা ভিত্তিক আইটি কোম্পানি কাসেয়াকে লক্ষ্য করে হ্যাকাররা এই হামলা চালায়। এর আগে তারা ক্যাসেয়ার সফটওয়ার ব্যবহার করা করপোরেট নেটওয়ার্কগুলোতে হামলা চালায়। তারা এ ঘটনার তদন্ত করছে বলে জানায় হানট্রেস ল্যাব।
হানট্রেস ল্যাব আরও জানায়, রাশিয়া সংশ্লিষ্ট হ্যাকার গ্রুপ রেভিল এই হামলা চালিয়েছে বলে তাদের ধারণা।
বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধীদের কাছে লাভজনক সংস্থা হলো রেভিল। অনেকে একে সেদিকোনোবি নামেও চেনেন। সংস্থাটি চলতি বছরের মে মাসে অনলাইন মাংস বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠান জেবিএসের ওয়েবসাইটে হামলার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। তাছাড়া ২০১৯ সালে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের দুই ডজন ওয়েবসাইটে হামলা চালিয়েছিল তারা।
হানট্রেস ল্যাবসের সিনিয়র সিকিউরিটি রিসার্চার জন হ্যামন্ড ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে পাঠানো এক ই-মেইলে বলেন, ‘সাইবার হামলার কারণে আমাদের কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে।’
এমন এক সময় এই হামলার ঘটনা ঘটলো যুক্তরাষ্ট্র যখন সপ্তাহব্যাপী স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা ও অবকাঠামো সংস্থা এই হামলার ঘটনার তদন্ত করছে।
আইটি কোম্পানি কাসেয়া জানিয়েছে, হামলায় তাদের এমন একটি অ্যাপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা দিয়ে করপোরেট সার্ভার, ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং নেটয়ার্ক পরিচালিত হয়। গ্রাহকদের মধ্যে যারা ভিএসএ টুল ব্যবহার করেন তাদের দ্রুত তাদের সার্ভার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে তারা। বিশ্বের ১০টি দেশে ১০ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে তাদের।
কাসেয়া জানিয়েছে, খুব ‘অল্প সংখ্যক’ কোম্পানি হামলার শিকার হয়েছে। তবে তারা নিশ্চিত নয় ঠিক কতগুলো কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও হানট্রেস ল্যাব জানিয়েছে, এই সংখ্যা প্রায় ২০০টি।
কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না সে সম্পর্কে কিছু জানাতে চাননি কাসিয়ার প্রতিনিধি দল।
যুক্তরাষ্ট্রের সাইবারসিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার সংস্থা, ফেডারেল এজেন্সি এক বিবৃতিতে বলেছে, এই হামলার আদ্যপান্ত বের করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে তারা।
এদিকে গত মাসে জেনেভা সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জানিয়েছেন, এ ধরনের সাইবার হামলায় লাগাম টানার দায়িত্ব তার। পুতিনকে তিনি ১৬টি অবকাঠামো খাতের তালিকা দিয়েছেন, যেগুলো হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে গত ডিসেম্বরে মার্কিন কর্মকর্তারা আবিষ্কার করেন, রুশ গোয়েন্দা সংস্থা- এসভিআর যুক্তরাষ্ট্রের সোলারউইন্ডস নামক একটি তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা কোম্পানির সফটওয়্যার হ্যাক করে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সরকারি স্থাপনায় অনুপ্রবেশ করেছে। তার তিন মাস পর মাইক্রোসফটের ইমেইল সফটওয়্যারে চীনের রাষ্ট্র সমর্থিত হ্যাকাররা অনুপ্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ আনা হয়। চীনা হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থাসহ বিভিন্ন গবেষণা সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১২
আপনার মতামত জানানঃ