হীরক রানীর দেশ বাংলাদেশ। এখানে করোনার কারণে প্রায় ১৫ মাস বন্ধ রাখা হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অথচ খুলে রাখা হয় মার্কেট, শপিংমল, পর্যটন এলাকা, এমনকি গণপরিবহনও। মানা হয় না লকডাউন। মাছবাজারে একজনের ঘাড়ের উপর দিয়ে অন্যজন কম দামে মাছ বাগিয়ে নিতে ব্যস্ত। এমনকি নির্বাচনও হয় ঘোর এই করোনাকালে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে বেড়ে যায় করোনার ঝুঁকি।
সম্প্রতি গতকালই নির্বাচনকে করোনার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। আবার আজ শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। সরকারের এই দ্বিমুখী নীতিতে কপালে ভাঁজ পড়ছে বিশ্লেষকদের। শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ক্ষোভ। অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা। য়ুরোপসহ গোটা বিশ্ব যখন শিক্ষাকে সবথেকে গুরুত্ব দিয়েছে, আমাদের সরকার তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নো এন্ট্রির বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে।
এমন অসংখ্য পারস্পরিক সাংঘার্ষিক সিদ্ধান্তে জর্জরিত আমাদের ব্যবস্থা। এটা অদক্ষতা নাকি কনস্পিরেসি, তা নিয়ে খুঁটিয়ে দেখা উচিত সংশ্লিষ্ট মহলের। তবে সেখানেও মাথা আর পেট মোটা কর্মকর্তাদের চেয়ার থেকে উঠতেই দিন পেরিয়ে যায়, ওই যে বললাম হীরক রানীর দেশ। এখানে চেক মেটের সম্ভাবনা খুব কাছের সময়ে এক প্রকার নেই বললেই চলে।
‘করোনার চেয়ে নির্বাচন বেশি গুরুত্বপূর্ণ’
করোনার চেয়ে নির্বাচন বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাছাড়া নির্বাচনে করোনার বিস্তার ঘটায় এমন যুক্তিতে আমি বিশ্বাস করি না বলে মন্তব্য করেছেন নুরুল হুদা। তিনি আরও বলেন, পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে দিল্লিতে। সেখানে (দিল্লি) নির্বাচন হয়নি। আমেরিকায়ও নির্বাচনের পরে করোনা সংক্রমণ বাড়েনি।
শনিবার (১২ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল সার্কিট হাউজে পৌর এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
সভায় সিইসি বলেন, বরিশালসহ যেসব এলাকায় করোনা সংক্রমণ কম, সেসব এলাকার ২০৮টি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন আগামী ২১ জুন নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। তবে করোনা সংক্রমণ বেশি হওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে খুলনা অঞ্চলের ১৬৩টি স্থানীয় সরকার নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।
এমনকি করোনার এ দুর্যোগেও নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে সিইসি বলেন, করোনার কারণে এর আগে এক দফা নির্বাচন পেছানো হলেও সংক্রমণ তুলনামূলক কম হওয়ায় বরিশাল এবং মাদারীপুর অঞ্চলে বৃষ্টি মৌসুমেও নির্বাচন চালিয়ে যেতে হবে। নির্বাচন নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন সিইসি। প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় বরিশালের নদীবেষ্টিত তিনটি উপজেলা হিজলা, মুলাদী ও মেহেন্দিগঞ্জে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কোস্ট গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। স্থানীয় রাজনীতির সমীকরণ এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরিশালে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা প্রকাশ করেন মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তারা। পরিস্থিতি সামলাতে প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছেন তারা। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার হুঁশিয়ারি দেন, কে কোন দল, মতের তা বিবেচনা করা হবে না। আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। প্রসঙ্গত, আগামী ২১ জুন বরিশালে ৫০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব নয়’
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সহসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। আজ রবিবার (১৩ জুন) রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সহসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব নয়। সরকার শিক্ষার্থীদের সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না যাতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়।’
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী আসন্ন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ঘরে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। দীপু মনি বলেন, ‘এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে নেয়া যায় কিংবা অন্য কোনোভাবে সেটি করা যায় কিনা সেটা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৩ জুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু এখন সীমান্ত এলাকায় করোনা বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত ছুটি বাড়িয়েছি। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। অনলাইনে শিক্ষাদানের বিষয়টি চলমান রয়েছে। নতুন পদ্ধতি বের করার চেষ্টা করছি।’
এখানে স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে নির্বাচনী এলাকায় যে সকল শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে ভোটার হয়েছে, তারা কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে? সেক্ষেত্রে তাদেরও তো করোনায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা তৈরি হবে। কিংবা একই ভাবে বলা যায়, খুলে রাখা মার্কেটে, শপিংমলে, গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের দেদারসে উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তাহলে করোনা থেকে কাদের সুরক্ষা দিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে? শিক্ষার্থীদের নাকি বিল্ডিংগুলোকে?
এসডব্লিউ/এসএস/১৬১৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ