রাজধানী ঢাকায় প্রকাশক আহমেদুর রশিদ চৌধুরী টুটুলের ওপর হামলা ও ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। তাঁর নির্দেশনায় এ দুটি হামলায় অংশ নেয় জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি, যা পরে আনসার আল ইসলাম) ১৭ সদস্য। তাদের মধ্যে এবিটির সামরিক শাখার প্রধান জিয়াসহ ছয় জঙ্গি উভয় ঘটনায়ই জড়িত।
ঘটনার চার বছর পর গত বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দাখিল করা দুই মামলার অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। নিলয় হত্যা মামলায় জিয়ার নেতৃত্বে ১৩ জন এবং টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলায় জিয়ার নেতৃত্বে ১০ জনকে অভিভুক্ত করা হয়েছে। দুই ঘটনায় জড়িত জিয়া ও মর্তুজা ফয়সল সাব্বির নামের আরেক জঙ্গি পলাতক রয়েছে। বাকি ১৫ জনকেই গ্রেপ্তার করেছে ডিবিসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট।
এদিকে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর টুটুলের ওপর হামলার দিনই শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীতে ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়ার মামলায় গত বছরের ১৫ নভেম্বর আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে জিয়াসহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়। তদন্ত পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দীপন খুনে জড়িত ছয়জনই টুটুলের ওপর হামলায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। এই দুই ঘটনায় জড়িত জিয়াসহ চারজন নিলয় হত্যাকাণ্ডেও জড়িত ছিল। জিয়া ছাড়াও দীপন খুনে জড়িত আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ নামের এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
বুধবার চার্জশিট দেওয়া মামলা দুটির তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মিশু বিশ্বাস বলেন, ‘ব্লগার নিলয় হত্যা ও প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টার দুটি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। দুটি হামলায় চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া নির্দেশনাদাতা। পলাতক আসামিরা অন্য মামলায়ও জড়িত। তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে।’
সূত্র জানায়, নিলয় হত্যা মামলার চার্জশিটে জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অন্যরা হলো মাসুদ রানা, সাদ আল নাহিন, কাওসার হোসেন খান, কামাল হোসেন সরদার, মাওলানা মুফতি আবদুল গাফ্ফার, মর্তুজা ফয়সাল সাব্বির, তারেকুল আলম, খাইরুল ইসলাম ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, আরাফাত রহমান ও শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের। এর মধ্যে খাইরুল, আবু সিদ্দিক ও শেখ আবদুল্লাহ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের জবানবন্দি অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয় মাসুদ রানা, আরাফাত রহমান সিয়াম ও মোজাম্মেল হোসেন সায়মন।
টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলায় জিয়া ছাড়াও আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, মর্তুজা ফয়সাল সাব্বির, আরাফাত রহমান ও শেখ আব্দুল্লাহকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ১০ জনের মধ্যে বাকি চার অভিযুক্ত হলো সুমন হোসেন পাটোয়ারী, হাফেজ মো. আব্দুস সবুর, মঈনুল হাসান শামীম ও রশীদ উন নবী ভূইয়া টিপু।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর মোহাম্মদপুরে শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর অফিসে টুটুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে জঙ্গিরা। জিয়াউল হক হত্যার মূল পরিকল্পনা করে অন্যদের তা কার্যকর করার জন্য পাঠান। গ্রেপ্তারকৃতদের ছয়জন আদালতে ১৬৪ ধারার জবাবন্দিতে একযোগে শাহবাগ ও মোহাম্মদপুরে হামলার বর্ণনা দেয়।
অন্যদিকে জিয়া ছাড়াও দুই আবু সিদ্দিক সোহেল, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন ও শেখ আব্দুল্লাহকে দীপন হত্যা মামলার চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয়। অন্য চার আসামির মধ্যে সবুর ওরফে সামাদ ওরফে রাজু ও মইনুল হাসান শামীম শুধু টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। খাইরুল ওরফে জিসানকে নিলয় খুনে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ