প্রকাশক ফয়সল আরেফীন দীপন হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য আগামী ১৭ জানুয়ারি তারিখ ঠিক করেছেন আদালত। আজ সোমবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে আসামি খায়রুল ইসলামের পক্ষে তার ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীর আলম সাফাই সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের তারিখ নির্ধারণ করেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ২৬ সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। গত ৫ জানুয়ারি আত্মপক্ষ শুনানিতে আসামিরা নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।
আসামিরা হলেন—মেজর (বরখাস্তকৃত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুর সবুর সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে স্বাদ, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার এবং শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের। মামলায় প্রথম দু’জন আসামি পলাতক রয়েছেন।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের নিজ অফিসে জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সেদিন বিকেলে তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি দক্ষিণের সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান। চার্জশিটে আটজনকে অভিযুক্ত ও ১১ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবুর রহমান নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
এর আগে গত বুধবার(০৬ জানু) বিজ্ঞান লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়ের হত্যা মামলার ২৭তম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। সাক্ষী দেওয়ার কথা ছিল সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমানের। কিন্তু এদিন কোনো সাক্ষী আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় সময়ের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ১৩ জানুয়ারি সাক্ষগ্রহণের নতুন দিন ধার্য করেন।
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও মানবতাবাদীকর্মীরা মনে করেন, দীর্ঘ ছয় বছর পার হয়ে গেলেও ব্লগার ও লেখক-প্রকাশক হত্যা মামলার এখনো কোনো কূল কিনারা হলো না। এবিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে তারা মনে করেন। সাম্প্রতিককালে মৌলবাদ শ্রেণির সাথে সরকারের আতাত দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আর এদিকে ব্লগার লেখক প্রকাশক হত্যা মামলাগুলোও কেমন কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে চলছে। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের সকলেই চেনে, জানে, তবুও এসব ক্ষেত্রে সরকারের এক ধরণের মৌন ব্যাপার কাজ করে বলে অভিযোগ করেন তারা। একইসাথে তারা মনে করেন, সরকার নিজেদের স্বার্থে বা প্রয়োজনে মামলাগুলো আজো আদালতে ঝুলে আছে। নতুন উদ্যাম নিয়ে মামলাগুলোকে যথাযথ বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৭
আপনার মতামত জানানঃ