ফিলিস্তিনে পাঁচ দিন ধরে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গত সোমবার থেকে বিমান হামলা শুরু হয়। এরপর গতকাল শুক্রবার থেকে সেখানে স্থলপথেও হামলা শুরু হয়েছে। স্থলপথে হামলা জন্য ট্যাংক ব্যবহার করা হচ্ছে, ইসরায়েলি সেনারা চালাচ্ছে গুলি। এদিকে, ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে দুই হাজারের বেশি রকেট ছোড়া হয়েছে। আর ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে প্রায় ৮০০টি স্থাপনা লক্ষ্য করে। দুই পক্ষের হামলায় যারা নিহত হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। হামলা থেকে বাঁচতে বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে তারা। যারা থাকছে, তারাও ভয় আর শঙ্কার মধ্যে রাত্রি যাপন করছে।
দুর্দশার চরমে ফিলিস্তিনিরা
ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে হামাস ও ইসরায়েল সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাত। গত রোববার (০৯ মে) থেকে শুরু হওয়া উভয়পক্ষের হামলা-পাল্টা হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ১৩৭ জনের, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু ও নারী আছেন।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর টানা বিমান হামলা ও গোলার আঘাত থেকে বাঁচতে বাড়ি ছেড়ে শরনার্থী শিবির ও জাতিসংঘের স্কুলগুলোতে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেছেন গাজার ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।
ইতোমধ্যে এই সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
গাজার স্বাস্থ্যবিভাগ জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিমান হামলা ও গোলার আঘাতে শনিবার সকাল পর্যন্ত সেখানে মারা গেছেন মোট ১৩৭ জন, তাদের ৩৬ জনই শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো ৯২০ জন।
ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। বৃহস্পতিবার ঈদের দিনেও অনেকের ঘুম ভেঙেছে বোমা হামলার শব্দে। গত সোমবার থেকে ইসরায়েলের লাগাতার হামলার মধ্যে ধ্বংসস্তূপের ভেতর পবিত্র ঈদ উদযাপন করছেন ফিলিস্তিনিরা।
যুদ্ধবিরতির ইচ্ছে নেই কোন পক্ষের
মধ্যপ্রাচ্য, আরব লীগ, জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হামাস ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী— দু’পক্ষকে ইতোমধ্যে কয়েকবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
তবে কোনো পক্ষের মধ্যেই যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার ইচ্ছা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গাজার প্রধান রাজনৈতিক হামাসের মিলিশিয়া বাহিনী এখনও ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে অব্যাহত রেখেছে রকেট হামলা।
দেশটির সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, হামাসের রকেট হামলায় এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের হয়েছেন ৯ জন।
এদিকে গাজার এই অশান্ত পরিস্থিতির ঢেউ লেগেছে ফিলিস্তিনের অপর অংশ পশ্চিম তীরেও। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছেন ১১ ফিলিস্তিনি।
আল-জাজিরা ও এপির কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিল ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় ধুলায় মিশে গেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার কার্যালয়। হামলার শিকার ভবনটিতে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসসহ (এপি) আরও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় ছিল।
The 11-storey residential building called Al-Jalaa has now collapsed. pic.twitter.com/VUFxxJCuW3
— Arwa Ibrahim (@arwaib) May 15, 2021
স্থানীয় সময় আজ শনিবারের এই হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঠিক কী কারণে ভবনটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, এ বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি।
আল–জাজিরায় প্রকাশিত লাইভ ভিডিও সম্প্রচারে দেখা যায়, বোমার আঘাতে আল-জালা নামের ১১ তলা ভবনটি ধসে এক পাশে কাত হয়ে পড়েছে।
গাজা থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক শাফওয়াত আল-কাহলাউত বলেন, বোমা হামলার ঘণ্টাখানেক আগে ভবনটির এক বাসিন্দাকে ইসরায়েলি বাহিনী থেকে আসন্ন হামলার বিষয়ে হুঁশিয়ার করা হয়েছিল।
যেভাবে সংঘর্ষের শুরু
অবৈধ দখলদারিত্বের প্রতিবাদে গত ৯ মে রাতে আল-আকসা মসজিদে শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) নামাজ আদায় শেষে মসজিদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন সেখানে উপস্থিত ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা। এরপর তা দমাতে তৎপর হয়ে ওঠে ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ সময় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যকার সংঘাতে আহত হন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। সংঘাতের পর থেকে আল-আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ।
এর জেরে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস হুমকি দেয় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারকে।
হামাসের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।
সহিংসতার পেছনের কারণ
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকেই পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। পুরো শহরকে তারা নিজেদের রাজধানী বলে মনে করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ দেশ তাতে স্বীকৃতি দেয়নি।
ফিলিস্তিনিরা দাবি করে, পূর্ব জেরুজালেম হবে তাদের স্বাধীন দেশের রাজধানী।
ওই এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে, কারণ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের জন্য পূর্ব জেরুজালেমের বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার সম্ভাবনায় প্রতিদিনই কলহ তৈরি হচ্ছে।
জাতিসংঘ ইসরায়েলের প্রতি আহবান জানিয়েছে যেন যেকোনো ধরনের উচ্ছেদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হয় এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতি যেন সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানো হয়।
জোর করে বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানিয়েছে আরব লীগ।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর এবারই সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাত হচ্ছে।
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ