কোয়াড নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে এক বৈঠকে ব্যাখ্যা দেন জিমিং। কোয়াডে যোগ না দিতে বাংলাদেশকে হুমকির বিষয়টি ইংরেজি ভাষাজ্ঞানের স্বল্পতার বিভ্রাট বলে দাবি করেছেন ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
চীন থেকে আসা টিকা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পদ্মায় যান চীনের রাষ্ট্রদূত। অনুষ্ঠান শেষে পদ্মাতে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে কোয়াড ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে চীনা দূতের কাছে তার বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান পররাষ্ট্র সচিব।
জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত সচিবকে জানান, দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষতি হবে, এমন কোনো বিষয় তিনি বোঝাতে চাননি। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা কম থাকায় এমনটা হয়েছে।
চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষতি হবে এমন কোনো বিষয় তিনি বোঝাতে চাননি। ভাষাগত দুর্বলতার কারণেই এ ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে নৌ চলাচল ‘অবাধ ও স্বাধীন’ রাখার উপায় খোঁজার যুক্তি দেখিয়ে ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে ‘কোয়াড’ (কোয়াড্রিলেটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ) সংলাপের সূচনা হয়। এই গ্রুপে বাংলাদেশকে টানতে কূটনীতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।
কোয়াড গ্রুপে যোগ দিলে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে বলে গত সোমবার অনুষ্ঠানে হুঁশিয়ারি দেন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
তিনি বলেন, ‘চীন মনে করে কোয়াড গ্রুপটি চীনবিরোধী। আমি এটা পরিষ্কার করে বলতে চাই, কোয়াড নিজেকে অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত বলে দাবি করলেও তা সত্য নয়। এটা একটি সামরিক জোট এবং মূলত এটা করা হয়েছে চীনের বিরোধিতার জন্য।
‘এই চার সদস্যের ক্লাবে যোগ দেয়াটা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে না। কারণ এর ফলে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
জি লিমিংয়ের এমন মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় বাংলাদেশ। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা একটা স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি আমরা ঠিক করব। আমরা কী সিদ্ধান্ত নেব, তা আমরা ঠিক করব। উনি (রাষ্ট্রদূত) একটা দেশের প্রতিনিধি। উনি ওনার বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা তা নিয়ে কোনো বক্তব্য দেব না।’
মন্ত্রী বলেন, যে প্রতিষ্ঠানের কথা রাষ্ট্রদূত বলেছেন, সে প্রতিষ্ঠানের লোকজন আমাদের এখনও কিছুই বলেনি। সেজন্য আমার মনে হয়, তিনি (রাষ্ট্রদূত) একটু আগ বাড়িয়ে কথাটা বলে ফেলেছেন। এ নিয়ে আমাদের বিশেষ কোনো বক্তব্য নেই।
তিনি বলেন, চীনারা কখনও কারও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় না। এটি খুব দুঃখজনক, আমরা কি করবো না করবো এটি অন্যরা বড় করে বলতে পারে না। যে কোনো দেশ তাদের মতামত দিতে পারে, আমরা তা শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনবো। তবে আমরা কি করবো না করবো, জনগণের কথা বিবেচনা করে সে বিষয়টি আমরা নির্ধারণ করবো এবং সিদ্ধান্ত নেব।
তিনি বলেন, উনারা (চীন) যাই বলতে পারেন এবং ন্যাচার্যালি উনি (চীনা রাষ্ট্রদূত) একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা হয়তো এটা (কোয়াড) চায় না। তিনি তার বক্তব্য বলবেন।
তিনি আরও বলেন, “এতদিন ধরে দেখেছেন যে বহুলোক বহু সময় বহু কিছু বলেছেন, কিন্তু আমাদের দেশের স্বার্থ এবং মঙ্গলের ব্যাপারে যা যা করার আমরা তাই করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মঙ্গলের জন্য তাই করেছেন।”
“উই মেইনটেইন এ নন-অ্যালাইন (জোট নিরপেক্ষ) এবং একটি ব্যালান্সড ফরেন পলিসি (ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতি)।”
আবদুল মোমেন আরও বলেন, বাংলাদেশ তার নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ীই এগুবে।
চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলেও গণমাধ্যমকে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো। তাদের ভাষায়, বৃহৎ শক্তিগুলো বাংলাদেশকে তাদের যুদ্ধক্ষেত্র বানানোর পাঁয়তারা করছে। চীনা রাষ্ট্রদূতের ‘আগ্রাসী বক্তব্য’ সেই যুদ্ধের পূর্বাভাস। চীন ঢাকায় এই বক্তব্য দিয়ে তার বিরুদ্ধ জোটের প্রতি সহনশীল দেশগুলোকেও এক ধরনের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে রেখেছে।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ধরনের আচরণ আমরা এর আগে দেখিনি। আমরা তাদের সঙ্গে বসব এবং জানার চেষ্টা করব বিষয়টা আসলে কী?’
এর মধ্যেই কোয়াড ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন চীনা রাষ্ট্রদূত জি লিমিং।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৩৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ