বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকার যোগানে ঘাটতি থাকায় প্রথম ডোজ টিকা দেয়া বন্ধ করার পর এবার টিকা নিতে নিবন্ধন বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিকে টানা তিন সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার ( ৬মে) থেকে গণপরিবহন চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরিবহনের মালিক-শ্রমিকেরা।
বন্ধ হলো টিকার নিবন্ধন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বিবিসিকে বলেছেন, আপাতত টিকার নিবন্ধন আমরা স্থগিত করেছি। আপনারা জানেন, টিকার চালান চুক্তিমত আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। যে কারণে আপাতত যাদের নিবন্ধন করা আছে তাদেরই টিকা দেয়া শেষ করতে চাই আমরা।
পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচীর নিবন্ধন বন্ধ থাকবে। তিনি বলেছেন নতুন করে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া যখন শুরু হবে, সেসময় আবার নিবন্ধন চালু করা হবে। এর আগে গত ২৬ শে এপ্রিল করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৫ই মে পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ৩১ লক্ষ ৬ হাজার ৭০৯ জন মানুষ। আর প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৮ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৫৭ জন মানুষ।
বাংলাদেশে গত ৭ই ফেব্রুয়ারি ভারতে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড দেয়ার মাধ্যমে একযোগে দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচী শুরু হয়। ২০২০ সালে ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের সাথে যখন চুক্তি স্বাক্ষর হবার পর, গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত থেকে দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে।
এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসাবে দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ হাতে পেয়েছে মোট এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকা। সিরাম ইন্সটিটিউটের সাথে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশে আসার কথা, কিন্তু গত দুই মাসে কোন চালান আসেনি।
মূলত সিরাম ইন্সটিটিউটে তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের ওপর নির্ভর করেই বাংলাদেশ টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে দেশটি থেকে টিকা আসার সম্ভাবনাও নাকচ করে দেয়া হয়েছে।
যে কারণে বাংলাদেশে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রায় ১৩ লাখ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে বলে কয়েকদিন আগে গণমাধ্যমকে বলেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোঃ খুরশিদ আলম।
এখন বাংলাদেশের সরকার বিকল্প হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ করছে।
করোনায় শনাক্ত ও মৃত্যু কমছে
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৫০ জন মানুষ মারা গেছেন। এই সময়ে নতুন করে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১,৭৪২ জন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে এই তথ্য জানানো হয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হল ১১,৭৫৫ জনের।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৮ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
চালু হচ্ছে গণপরিবহন
সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে বৃহস্পতিবার ( ৬মে) ভোর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সব জেলায় বাস চালুর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তবে আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।
এ ক্ষেত্রে সমিতির পক্ষ থেকে পরিবহনের মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রী ওঠানো যাবে না। যানবাহনের শ্রমিকদের মাস্ক সরবরাহ করবে ওই যানের মালিক। যাত্রীবাহী যানের অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখতে হবে। অর্থাৎ দুই আসনের সারিতে একজন করে বসবেন। দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। লকডাউনের কারণে এমনিতেই সাধারণ মালিক-শ্রমিকেরা কষ্টে আছেন। এ অবস্থায় পরিবহন সমিতি বা কোম্পানির নামে কোনো জিপি (গেটপাস) আদায় করা যাবে না।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে ৫ মের পর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল আগের মতোই বন্ধ থাকবে।
সড়ক পরিবহনমালিক-শ্রমিক সূত্রগুলো বলছে, জেলার অভ্যন্তরে যানবাহন সীমাবদ্ধ রাখা কঠিন। যেমন ঢাকায় যেসব বাস চলাচল করে, এর একটা বড় অংশেরই যাত্রার স্থান বা শেষ গন্তব্য ঢাকার বাইরে। যেমন গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ—এসব জেলা থেকে প্রতিদিন শত শত বাস ঢাকায় প্রবেশ করে এবং বের হয়। এগুলোর ঢাকায় এবং ওই সব জেলায় চলার বৈধ অনুমতি আছে।
একজন পরিবহনমালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপনে জেলার ভেতরে বাস চলতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, আশুলিয়া ঢাকা জেলার অন্তর্ভুক্ত। ফলে এসব এলাকার বাস অন্য জেলায় যাবে না, এটা নিশ্চিত করাও কঠিন। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা দরকার।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার চলতি বছর প্রথমে ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করেছিল। পরে তা আরও দুদিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। সেটি পরে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল।
এরপর আবার তা ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়, যা আবার বাড়ল। তবে গত ২৫ এপ্রিল থেকে দোকান ও শপিংমল খুলে দেওয়া হয়েছে। খোলা রয়েছে ব্যাংকও। এ ছাড়া জরুরি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত অফিসগুলোও খোলা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০১৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ