ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকার ওপর নির্ভর করেই বাংলাদেশ টিকা প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু করেছিল। যারা এই টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ছাড়া অন্য কোন টিকা দেয়া যাবে না বলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এদিকে ভারত নিজেদের করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে প্রতিশ্রুত টিকা সরবরাহ নিয়ে টালবাহানা চালাচ্ছে। ধরেই নেয়া যাচ্ছে ভারত থেকে টিকা পাওয়া এখন অনিশ্চিতের দিকে গড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় অসহায় বাংলাদেশ দিগবিদিক ছুটে বেড়াচ্ছে টিকার জন্য। এবার অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার জন্য বাংলাদেশ নজর দিয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার দিকে। খবর বিবিসি।
জানা যায়, ভারতে তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসা বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রায় ১৩ লাখ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে। সেই ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ সরকার এখন ভারতের বাইরে বিকল্প হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ করছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক গণমাধ্যমকে বলেন, দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ২০ লাখ ডোজ আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মো: খুরশিদ আলম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রয়েছে এবং তাদের অনেকে তা ব্যবহার করেনি। তাদের কাছ থেকে এই টিকা পাওয়া যাবে বলে বাংলাদেশ আশা করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই ঘাটতি মেটাতে টিকা সংগ্রহ করার চেষ্টায় আছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমরা যোগাযোগ করছি। যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, ইউকে ও অস্ট্রেলিয়ায় আমরা যোগাযোগ করেছি। আমরা ২০ লাখ ডোজ টিকা আনার চেষ্টা করছি। যাতে যারা এই টিকা নিয়েছেন, তারা যেন (দ্বিতীয় ডোজ) মিস না করেন।’
তিনি এই চেষ্টায় টিকা পাওয়ার আশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আশা নিয়েই বাঁচে মানুষ। আমিও আশা করছি এই টিকা পেয়ে যাবো।’
তবে এই টিকা কবে নাগাদ পাওয়া যাবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট সময় অধ্যাপক আলম জানাতে পারেননি।
গত নভেম্বরে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ‘কোভিশিল্ড’ টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে সরকার। টিকার দাম পরিশোধ করা হয় অগ্রিম। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসার কথা।
চুক্তির পর ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে দু’টি চালানে ৭০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে। এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসাবে দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের হাতে এসেছিল এক কোটি দুই লাখ ডোজ। কিন্তু প্রথম ডোজের টিকা যে সংখ্যক মানুষ নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার ক্ষেত্রে এখন ১৩ লাখ ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে, যা সরকারি হিসাবেই পাওয়া যাচ্ছে।
ফলে এখন বাংলাদেশের হাতে যে পরিমাণ টিকা রয়েছে, তাতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না বলে জানানো হচ্ছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মো: আলম বলেছেন, প্রথম ডোজ দেয়া থেকে দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে যে সময় হাতে থাকছে, তার মাঝে টিকা পাওয়া সম্ভব হবে।
অধ্যাপক খুরশিদ আলম বলেন, ‘আমাদের প্রথম ডোজ দেয়ার পর ১২ সপ্তাহের সময় থাকে। যদিও আমরা আট সপ্তাহের মাথায় (দ্বিতীয় ডোজ) দিয়েছিলাম। এর কারণ আমাদের দেশের মানুষ যদি সময় মতো না আসে, তাহলে পরেও যাতে তাদের (টিকা) দেয়া যায়। কিন্তু ১২ সপ্তাহের সময়টা সারা দুনিয়াতেই মানা হচ্ছে। ১২ সপ্তাহ সময়ের মধ্যে আমাদের আট সপ্তাহ চলে গেলেও চার সপ্তাহ সময় হাতে থাকবে। এই সময়ের মধ্যে টিকা পাব আশা করছি।
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি অনুযায়ী প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়ার কথা থাকলেও গত দুই মাসে কোনো চালান আসেনি। ওই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগেই টিকার এই ঘাটতি বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করা উচিত ছিল বলে তারা বলছেন। এখন বিষয়টিতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে তারা মনে করেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক একজন পরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এখনো সময় রয়েছে। এখনো সম্ভবনা আছে এটা সমাধানের। যেহেতু তিন মাস পর্যন্ত এর দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যায়। ফলে সময় আছে।
একইসাথে ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের তো আরো আগে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। মাসে যদি ত্রিশ লাখ করেও আসতো, তাহলে আমরা এতদিনে প্রায় দেড় কোটি লোককে টিকা দিতে পারতাম। এক্ষেত্রে আমরা মাত্র অর্ধকোটি লোককে টিকা দিয়েছি। সুতরাং অবশ্যই আমরা হোঁচট খেয়েছি।
বাংলাদেশ সরকার এখন রাশিয়া এবং চীন থেকেও টিকা আনার ব্যাপারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মে মাসে চীন থেকে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা আসতে পারে। তবে এসব প্রক্রিয়ায় সময়ের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে আবার প্রথম ডোজ দেয়া শুরু করতেও সময় লেগে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতের উপর নির্ভরশীল হয়ে দেশ এখনো টিকা প্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা অবস্থানেই আসছে না অর্থাৎ দেশ টিকা প্রাপ্তি নিয়ে এখনো গভীর ধোঁয়াশার মাঝে আছে। কোথা থেকে টিকা সংগ্রহ করা হবে এই বিষয়েও সরকার এখনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এতে দেশ ভয়াবহ করোনাক্রান্তি পেতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। একইসাথে অন্যান্য সূত্র থেকে কীভাবে টিকা পাওয়া যেতে পারে সে-বিষয়ে সরকারের এখনোই সিদ্ধান্তে এসে নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩০৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ