২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাতের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মোসারাতের বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। এই মামলার একমাত্র আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই কলেজ শিক্ষার্থী তার বোনকে ফোন দিয়ে বলেছিলেন তিনি ‘ঝামেলা’য় আছেন। তখন তার বোন ঢাকায় আসেন এবং সেই ফ্ল্যাটে যান। ভেতর থেকে দরজা না খোলায়, ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে যাওয়ার পর সিলিং ফ্যানের সঙ্গে তার মরদেহ ঝুলতে দেখা যায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
আগাম জামিনে বাঁধ সাধল আদালত
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার আগাম জামিন চেয়ে করা কোনও আবেদনের ওপর শুনানি করবেন না বলে জানিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দিলিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা জানিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দিলিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে আজকের কার্যতালিকায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে করা মামলার আগাম জামিন চেয়ে করা আবেদনটি ১৪ নম্বরে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সায়েম সোবহান আনভীরের আইনজীবী মনসুরুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আদালত বলেছেন, আগাম জামিন আবেদন শুনবেন না। তাই আমরা মুভ করিনি। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজার মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় তিনি জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। তবে সাঈদ আহমেদ রাজা জানিয়েছিলেন, তিনি মামলাটি পরিচালনা করবেন না।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের করা আবেদন মঞ্জুর করেন।
আসামি গ্রেপ্তারের আগে সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে ব্যস্ত পুলিশ
এই মুহূর্তে পুলিশ সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ, মুঠোফোন ও পারিপার্শ্বিক যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো সংগ্রহ করেছে। সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, ভুক্তভোগী নারীর মৃত্যু কী কারণে, সেটি জানা সবচেয়ে জরুরি।
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, মামলা হয়েছে দণ্ডবিধি ৩০৬ ধারায়। আত্মহত্যায় ‘প্ররোচনা’ ও ‘অভিপ্রায়’ এখন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে জন্য সাক্ষ্য সংগ্রহ জরুরি। পুলিশ এই ঘটনায় যাবতীয় তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। বেশ কিছু ‘ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট’ সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
ময়নাতদন্তকারী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করেছে। তা ছাড়া ডিএনএ প্রোফাইল করাসহ আর যা যা করা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পুলিশ অনুরোধ করেছে। সাক্ষ্য, বস্তুগত প্রমাণ সংগ্রহের মাধ্যমে মামলাটিকে একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পুলিশ নিয়ে আসতে পারবে বলে মনে করে। সে অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে সাক্ষ্যপ্রমাণ আগে সংগ্রহের কোনো বাধ্যবাধকতা আছে কি না, জানতে চাইলে পুলিশ উপকমিশনার বলেন, প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি ও দণ্ডবিধি অনুযায়ী যেকোনো মামলায় আসামি ধরায় কোনো বাধা নেই।
আত্মহত্যার অভিপ্রায় এবং প্ররোচনাকে সাক্ষ্যপ্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে আদালতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মামলার অভিযোগের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ এবং সাক্ষ্য সংগ্রহ করা ও একসঙ্গে নিয়ে আসা জরুরি। আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আগে পুলিশ এই কাজগুলো আগে করতে চায়।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১২৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ