করোনা সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জার্মানির বুন্ডেস্টাগ বা পার্লামেন্টে গতকাল বুধবার সংক্রমণ সুরক্ষা আইন পাস হয়েছে। করোনা সংক্রমণ রুখতে জার্মানির ১৬ রাজ্যে লকডাউনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন নির্বাহী আদেশ থাকলেও করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল না। নতুন আইনে বেশি সংক্রমিত এলাকাগুলোতে রাতে কারফিউ ব্যবস্থাসহ স্কুলগুলো বন্ধ, জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর বিধানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জার্মানি গণমাধ্যম ডয়েচেভেলে সুত্রে জানা গেছে।
বুধবার জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষ ফেডারেল স্তরে ‘এমারজেন্সি ব্রেক’ অনুমোদন করেছে৷ করোনা সংকট মোকাবিলা করতে ফেডারেল স্তরে পদক্ষেপ নেবার ক্ষমতা আনতে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকার সংক্রমণ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে৷ সংশোধিত এই আইন কার্যকর হলে বিশেষ ক্ষেত্রে গোটা দেশজুড়ে একই বিধিনিয়ম চালু করা হবে৷ রাজ্য, আঞ্চলিক বা স্থানীয় প্রশাসন আর ইচ্ছামতো নিয়ম শিথিল করতে পারবে না৷ প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে দৈনিক সংক্রমণের গড় সাপ্তাহিক হার ১০০ পেরোলে রাতে কারফিউসহ একাধিক পদক্ষেপ নিতে হবে৷ সেই হার ১৬৫ পেরোলে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ বৃহস্পতিবার সংসদের উচ্চ কক্ষ ও তারপর প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের পর আইনটি কার্যকর হবার কথা৷ বিরোধিতার মাত্রা কমাতে সরকার এই পদক্ষেপের মেয়াদ সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ প্রয়োজনে সংসদের অনুমোদন নিয়ে সেই মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে৷
বেড়ে চলা দৈনিক সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে জার্মানিতে জোরালো পদক্ষেপ নেবার চাপ বাড়ছে৷ গত কয়েক দিন ধরে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও বৃহস্পতিবারের হিসেব অনুযায়ী দৈনিক সংক্রমণের হার প্রায় ৩০ হাজার ছুঁয়েছে৷ বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান সংসদে বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশজুড়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন৷
দেশজুড়ে একক ও স্পষ্ট বিধিনিয়ম চালু করা নিয়ে তেমন মতবিরোধ না থাকলেও নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সংসদে বিরোধী পক্ষ সোচ্চার হয়েছে৷ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব করা থেকে শুরু করে সংক্রমণের হিসেব নির্ধারণের মতো নানা সমালোচনা শোনা গেছে৷ আইনি সংশোধনের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক আদালতে অভিযোগের হুমকিও দিয়েছে একাধিক মহল৷ বিশেষ করে রাতে কারফিউ জারি করার বিষয়টিকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক দেখা যাচ্ছে৷ উল্লেখ্য, প্রাথমিক খসড়ায় রাত নয়টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কারফিউয়ের প্রস্তাব থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেই মেয়াদ এক ঘণ্টা কমিয়ে রাত দশটা করা হয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে সরকার অন্যান্য দেশের সাফল্য তুলে ধরেছে৷ দোকানপাট বন্ধ রাখা, মানুষের মধ্যে দেখাশাক্ষাৎ কমিয়ে আনা, স্কুলে উপস্থিতি বন্ধ রাখার মতো একাধিক পদক্ষেপও সমালোচনার মুখে পড়েছে৷
সংসদে বিতর্কের সময় প্রায় আট হাজার বিক্ষোভকারী প্রস্তাবিত কড়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখিয়েছেন৷ পারস্পরিক দূরত্ব ও মাস্ক পরার মতো নিয়ম অগ্রাহ্য করেছে বলে জানিয়েছে৷ বিক্ষোভকারীরা সরকারের ‘স্বৈরাচারী’ আচরণের বিরোধিতা করে স্লোগান দেন৷ পুলিশের উপর হামলার দায়ে কিছু মানুষকে আটক করা হয়েছে৷ পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ দিন প্রায় দুই হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল৷ সূত্র : ডয়েচেভেলে
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ