করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ হওয়া শপিংমল ও দোকানপাট শুক্রবার থেকে খুলছে। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপসচিব মোঃ রেজাউল ইসলামের স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৯ থেকে আগামী ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কঠোর স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এতে বলা হয়, করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম যথারীতি চলমান থাকবে।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাতদিনের বিধিনিষেধ আরোপ করে। এ সময়ে শিল্পকারখানা, সরকারি–বেসরকারি অফিস, ব্যাংক স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও দোকানপাট, গণপরিবহন বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। যদিও গতকাল বুধবার থেকে ঢাকাসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশনে গণপরিবহন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চালু রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে সোমবার থেকে যে ‘লকডাউন’ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে শুরু থেকেই তার বিরোধিতা করছিলো ব্যবসায়ীরা। পয়লা বৈশাখ ও পবিত্র ঈদুল ফিতরকে ঘিরে পোশাকের ব্যবসা চাঙা হয়। সারা বছরের প্রায় অর্ধেক বিক্রি এই দুই উৎসবে হয়। দোকানপাট বন্ধ থাকায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় গত রোববার থেকে ঢাকার নিউমার্কেট, গাউসিয়া, মিরপুর, গুলিস্তানসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভে নামেন। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও বিপণিবিতান খোলা রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
এসব কারণে বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকে একে আংশিক লকডাউন আখ্যায়িত করে এর কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। এর মধ্যে শহরে যান চলাচল শুরু হলে কার্যত ভেঙ্গে পড়ে লকডাউন এবং স্বাভাবিক হয়ে ওঠে সবকিছু।
এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ১৮দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো, যাতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সব ধরনের জনসমাগম নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৫০ ভাগ জনবল এবং গণপরিবহনগুলোকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে পরিচালনার কথা বলা হয় সেখানে, যদিও তা কার্যকর করা যায়নি।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র ১৪ ই এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ করা হয়েছে এবং বুধবার ধর্ম মন্ত্রণালয় মসজিদসহ উপাসনালয়ে প্রার্থনার আগে ও পরে সব ধরণের জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
বাংলাদেশে গত বছরের ৮ই মার্চে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। দিন দিন সেটা বাড়তে থাকায় ২৬শে মার্চ প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয় যা পরে কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছিল। ওই বছরের এপ্রিল ও মে মাস জুড়েই অব্যাহত ছিল এই সাধারণ ছুটি।
দেশজুড়ে ‘লকডাউন’ করার আগ পর্যন্ত আক্রান্ত বাড়ি, প্রয়োজনে জেলা-উপজেলা ইত্যাদি লকডাউন করা হয়েছিল। ২০২০ সালের ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ২৯টি জেলা সম্পূর্ণ এবং ১৯টি জেলা আংশিকভাবে লকডাউন করা হয়েছিল। বিভিন্ন দেশের মত দেশজুড়ে ‘লকডাউন’ না হলেও সারা দেশেই অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মুক্তভাবে চলাচলের উপর বাধা আরোপ করা হয়েছিল। সারা দেশে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। একইসাথে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলাচল বন্ধের জন্যও প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করেছিল।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৭৪ জন। এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। গতকাল ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন নয় হাজার ৫২১ জন। একই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ছয় হাজার ৮৫৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। গতকাল সাত হাজার ৬২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মোট শনাক্ত হয়েছেন ছয় লাখ ৬৬ হাজার ১৩২ জন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬৩৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ