সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের ছবির সঙ্গে এক নারীর আপত্তিকর ছবি পোস্ট করেছিলেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে এমাদ আহমেদ জয় নামের এক ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা। এতে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় তাকে আটক করেছে পুলিশ।
রবিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে তাহিরপুর থানা পুলিশ জয়কে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। আটককৃত জয় উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ভোলাখালী গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা জজ মিয়ার ছেলে ও ইউনিয়ন যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের একটি রিসোর্টে মামুনুল হককে এক নারীসহ ঘেরাওয়ের ঘটনার পর শনিবার রাতে তাকে নিয়ে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন এমাদ আহমেদ। সকালে বিষয়টি নিয়ে হেফাজতসহ স্থানীয় বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাহিরপুর উপজেলা শাখার সভাপতি এম সালমান আহমদ জানান, কথিত এক নারীর ছবির সঙ্গে হেফাজতের নেতা মাওলানা মামুনুল হকের ছবি যুক্ত করে অশ্লীল ও আপত্তিকর মন্তব্যজুড়ে এমাদ আহমেদ তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দেন। এ নিয়ে স্থানীয় আলেম সমাজ ও হেফাজতের অনুসারীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে বিষয়টি থানার পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ তাকে আটক করে।
এ ব্যাপারে বাদাঘাট ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সেলিম হায়দার বলেন, ‘আমরা বিষয়টি শুনেছি। সংগঠনের উপজেলা পর্যায়ের নেতারা খোঁজ নিচ্ছেন কী কারণে পুলিশ তাকে আটক করেছে।’
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই যুবকককে আপাতত পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে সে থানায় আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওসি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় আজ রবিবার দুপুরে আলেমা সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথে থানায় মতবিনিময় করা হয়েছে। এ নিয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে নিজ নিজ অবস্থান হতে সবাই সহযোগিতা করবেন বলে আশস্ত করেছেন।’
এর আগে গত ১৬ মার্চ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে সুনামগঞ্জের শাল্লার একটি গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ১৫ মার্চ দিরাই উপজেলা সদরে হেফাজতে ইসলামের একটি সমাবেশ ছিল। এতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হকসহ অন্য নেতারা বক্তব্য দেন। ওই রাতে মামুনুল হককে নিয়ে শাল্লা উপজেলার ঝুমন দাস ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেন—এমন অভিযোগ তুলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনাকে ধর্মীয় উসকানি আখ্যায়িত করে ওই এলাকার মামুনুল হকের অনুসারীরা উইদিন রাতে বিক্ষোভ মিছিল করে।
পরদিন সকালে ১৭ মার্চ কাশিপুর, নাচনী, চণ্ডিপুরসহ কয়েকটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কয়েক হাজার অনুসারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে নোয়াগাও গ্রামে অতর্কিত হামলা চালায়। হাজারো মানুষের আক্রমণে গ্রাম ছেড়ে আত্মগোপনে যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এই সুযোগে হেফাজত নেতার অনুসারীরা গ্রামে প্রবেশ করে তছনছ করে। লুটপাট করে বিভিন্ন বাড়িতে। এসময় তারা অন্তত ৮৮টি বাড়িঘর ও সাত-আটটি পারিবারিক মন্দিরে ভাংচুর করে এবং লুটতরাজ চালায়। গ্রামটির চার থেকে পাঁচশ ঘরবাড়িতে ভাংচুর, লুটপাট চালায় হামলাকারীরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২৩৩০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ