ফাইজারের উদ্ভাবিত করোনার টিকা শিশুদের ক্ষেত্রে শতভাগ কার্যকর বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শিশুদের শরীরে এই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষার পর প্রাপ্ত ফলের ভিত্তিতে এমন দাবি করা হয়েছে। টিকা উৎপাদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক গতকাল বুধবার (৩১মার্চ ) ওই ফল প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের শরীরে এই টিকা ভালো সহনীয়।
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী ২ হাজার ২৬০ জনের ওপর ফাইজার-বায়োএনটেকের কভিড-১৯ টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চালানো হয়েছে। তাদের শরীরে টিকার দুই ডোজ প্রয়োগ করা হয়। দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের এক মাস পর তাদের শরীরে কার্যকর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি ছিল। এর আগে ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের ওপর টিকাটির পরীক্ষা চালিয়ে একই রকম ফল পাওয়া যায়।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ২ হাজার ২৬০ জনের মধ্যে ১ হাজার ১৩১ জনকে ফাইজারের কভিড-১৯ টিকা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তাদের কারও করোনা হয়নি। অন্যদিকে টিকার বদলে প্রতিক্রিয়াহীন তরল (প্লাসেবো) দেওয়া ১ হাজার ১২৯ জনের মধ্যে পরে ১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
ফাইজারের বরাতে সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, টিকা নেওয়ার পর তাদের শরীরে হালকা জ্বর, ক্লান্তি ভাব এবং মাংসপেশিতে ব্যথার মতো সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ফাইজারের টিকা নেওয়া শিশুদের দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের পরবর্তী দুই বছর পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গবেষণার ফলাফল এখন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনকে জানানো হবে। একই সঙ্গে শিশুদের মধ্যেও দুই ডোজের এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন চাইবে ফাইজার-বায়োএনটেক। ফাইজারের সিইও অ্যালবার্ট বউরলা বলেন, ‘আমরা ট্রায়ালের ফলাফল এফিডিএতে জমা দেব। জরুরি ব্যবহারের অনুমতি চাইব। যাতে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই শিশুদের করোনার টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়।’
অন্যদিকে বায়োএনটেকের সিইও উগুর শাহিন বলেন, ‘আমরা সবাই স্বাভাবিক জীবনের অপেক্ষায় রয়েছি। আমাদের শিশুর জন্যও এটা আরও বেশি সত্য। সাম্প্রতিক পরীক্ষায় শিশুদের ওপরও করোনার টিকার কার্যকারিতা প্রমাণ হয়েছে। করোনার যুক্তরাজ্যের স্ট্রেইন (ধরন) ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে এটা খুবই আশার খবর।’
এদিকে ৬ মাস থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের ওপর করোনার টিকার কার্যকারিতা যাচাইয়ে গত সপ্তাহে আরেকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে ফাইজার-বায়োএনটেক। এর অংশ হিসেবে শুরুতে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়া হয়েছে। ২ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের আগামী সপ্তাহ নাগাদ টিকা দেওয়া হবে। এই ট্রায়ালে অংশ নিতে ফাইজার-বায়োএনটেক ৪ হাজার ৬৪৪ শিশুর নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ ট্রায়ালের ফলাফল জানা যেতে পারে।
শিশু-কিশোরদের ওপর করোনার টিকার কার্যকারিতা নিয়ে আরও একটি ট্রায়াল চালাচ্ছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান মডার্না। প্রতিষ্ঠানটি ৬ মাস থেকে ১১ বছর বয়সী এবং ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী—এই দুই ভাগে টিকার ট্রায়াল পরিচালনা করছে।
তবে কার্যকারিতা প্রমাণ হলেও এখনই শিশুরা করোনার টিকা পাবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশিয়াস ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্থনি ফাউসি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ১১ বছরের কম বয়সী শিশুরা এখনই টিকা পাবে না। তাদের ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। মূলত করোনা টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়োজ্যেষ্ঠদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে শিশুদের টিকা দিতে আরও সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিসেম্বরের শেষের দিকে ফাইজার-বায়োএনটেক করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনে অনুমোদন দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের ড্রাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তারা এও জানায়, এই ভ্যাকসিন ব্রিটেনে পাওয়া করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কাজ করবে না এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি৷ তারপর কয়েক দিনের মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ জুড়ে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়। ২০২১কে সুরক্ষিত রাখতে ফাইজার ভ্যাকসিন ব্যবহারের জরুরিকালীন অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হু-এর এই অনুমোদনের ফলে অনেক দেশই উপকৃত হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬১৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ