দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘নৈতিক সমাজ’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। নৈতিক জাগরণ, রাজনৈতিক সংস্কার, সাংবিধানিক সুশাসন, ন্যায়বিচার, দুর্নীতি রোধসহ সমাজের নানা পরিবর্তনের অঙ্গিকার নিয়ে নতুন এই রাজনৈতিক দলটি গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ‘নৈতিক সমাজ’ নামের নতুন এই রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ম স আ আমিন।
আজ মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এ দল গঠনের ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। এতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
সাবেক মেজর জেনারেল ও রাজনীতিবিদ আ ম স আ আমিনকে সভাপতি করে ৫০ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আ ম স আ আমিন আওয়ামী লীগে হঠাৎ যোগ দিয়ে কুড়িগ্রাম-২ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়ে চমক সৃষ্টি করেন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তাজুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে ১৭ হাজার ভোটে পরাজিত হন। ২০০৩ সালে তিনি কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি গণফোরামে যোগ দিয়েছিলেন। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি গণফোরামের হয়ে একই আসন থেকে নির্বাচন করেন। এবার নিজেই একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিলেন।
নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের কারণ হিসেবে আ ম স আ আমিন বলেন, ‘সমাজ-সংস্কৃতিতে নৈতিকতাবোধের অভাব দেখা দিয়েছে। রাজনীতিতে নীতিমান নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। এসব পূরণ করতেই নৈতিক সমাজ কাজ করবে।’
সভাপতি আ ম স আ আমিন বলেন, দেশে ষাটের দশকের সে ঐক্য এখন আর নেই। জাতি আজ বিভক্ত। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের দেশপ্রেম, সততা ও আত্মত্যাগ পরবর্তী রাজনীতি ধরে রাখতে পারেনি। উন্নতি অনেক হয়েছে, কিন্তু উন্নতির সুফল সাধারণ মানুষ পায়নি। ধনী আরও ধনী হয়েছে, গরীব আরও গরীব হয়েছে, মধ্যবিত্তরা সঙ্কটে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, চুরি, ঘুষ, দুর্নীতি, দুবৃত্তায়ন, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, হত্যা, মাদক ইত্যাদি মহামারির মতো দেখা দিয়েছে সর্বত্র। আইনের শাসনের দুর্বলতা ও বিচারহীনতা সমাজের বুনন ছিঁড়ে ফেলেছে। ৩০-৩৫ লাখ মামলায় জট, আরও বাড়ছে। সব অফিসে-দফতরে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সরকারি সেবা, হাসপাতাল, ব্যাংক, বাণিজ্য, ট্রাফিক, পুলিশ, প্রশাসন সবক্ষেত্রেই নৈরাজ্য বিরাজ করছে। ভূ-রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি জটিল হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দল অনেক আছে, কিন্তু বেশিরভাগই সমস্যার অংশ। ৫০ বছরে তারা সমাধানের অংশ হতে পারেননি। নতুন দল ও মত প্রয়োজন। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আগামী তিন বছরের মধ্যে শক্তিশালী দল হিসেবে কাজ করতে চাই। যা সাধারণ মানুষের দল হবে।
আ ম স আ আমিন আরও বলেন, সৎ, মেধাবী ও দূরদর্শী নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। এসব প্রয়োজন পূরণ করতেই নতুন দল হিসেবে নৈতিক সমাজ গড়ে তোলা হচ্ছে। ২০২৩ সাল হবে নির্বাচনে প্রস্তুতির বছর।
তিনি বলেন, নৈতিক সমাজ বলিষ্ঠভাবে জনগণের মধ্যে বিচরণ করে দলকে জনপ্রিয় করে তোলার আশা রাখে। নৈতিক সমাজের রোডম্যাপ, সংক্ষেপে: ২০২১ সাল হবে সাংগঠনিক ও নিবন্ধনের বছর। ২০২২ হবে ব্যাপক প্রচার ও জনসমর্থন সৃষ্টির বছর। ২০২৩ সাল হবে নির্বাচন প্রস্তুতির বছর। আর ২০২৪ সালে বেশ কিছু আসন জিতে নিয়ে নৈতিক সমাজ শুরু করবে ভিশন/মিশন অর্জনের সংগ্রাম- দুই প্রজন্মের মধ্যেই বাংলাদেশকে তৃতীয় থেকে প্রথম বিশ্বমানে নিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম।
নৈতিক সমাজের নতুন এ উদ্যোগের সফলতা কামনা করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের জ্ঞানের চোখ বন্ধ হয়ে গেছে, আমরা সত্য জানছি না। অনেক দেশ আমাদের শাসন করেছে। আমরা গাড়ি ভাঙচুর চাই না, উন্মাদনা চাই না, কথা বলার ও আমার বক্তব্য তুলে ধরার অধিকার চাই। এভাবে তো একটা দেশ চলতে পারে না। আপনাদেরও বিচার হবে। সে দিন খুব বেশি দূরে না।
তিনি বলেন, ‘সে লক্ষ্যেই আজ নৈতিক সমাজের জন্ম। তাদের এই জন্মকে শুভকামনা জানাচ্ছি। এর মাধ্যমেই জেগে উঠবে বাংলাদেশ। আমরা পৃথিবীর এক নম্বর রাষ্ট্র হতে চাই না, আমরা বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা চাই। সমাজের প্রতিটা মানুষ যেন সুফল পায়। ’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি নতুন দলটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, জনগণ সৎ মানুষকে শ্রদ্ধা করে। নতুন প্রজন্মকে নৈতিকতা বোধের শিক্ষা দিতে হবে। নৈতিকতা ও সততাকে লালন করতে হবে। অসৎ মানুষ চিরস্থায়ীভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেনি, পারবেও না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘নতুন কিছু দেখলে আশান্বিত হতে চাই। সমাজ থেকে আমরা নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছি। নৈতিকতা না থাকলে কিছুই থাকে না। নৈতিকতা থাকলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যায়।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতা করার কারণে আন্দোলনকারী বাম সংগঠন ও নূরদের সংগঠনের কর্মীদের ওপর হামলা হয়। কেউ এর প্রতিবাদ করেনি বলে সমালোচনা করেন আসিফ নজরুল। তিনি আরও বলেন, হাটহাজারীতে হেফাজতের কর্মীরা থানার কাচ ভেঙেছিল, তাই তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। এটা কোন আইনে আছে?
আসিফ নজরুল বলেন, হেফাজতকে কারা প্রশ্রয় দিয়ে এই জায়গায় এনেছে? বিএনপি, জামায়াত, বাম দলগুলোকে রাজনীতি করতে না দিয়ে কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে? বিশ্বের কাছে দেখানো হচ্ছে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হচ্ছে হেফাজত, যারা মধ্যযুগীয় কায়দায় কথা বলে। সরকার হেফাজতের উত্থানের জায়গা করে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন, সাবেক মেজর মুজিবুল হকসহ নৈতিক সমাজের কয়েকজন নেতা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ