করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে ইদের পর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) এক আলোচনা সভায় তিনি একথা জানান। গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, বৃহস্পতিবার করোনাবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং আগামীকালের মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল রয়েছেন। যেহেতু করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাই এই মুহূর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাই না।
করোনার সংক্রমণের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। টানা ছুটি শেষে ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। আর বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে ২৪ মে। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে করোনা সংক্রমণ ফের বৃদ্ধি পাওয়ায় স্কুল-কলেজে ছুটি বাড়তে পারে ধারণা করা হচ্ছে। আজ সে ইঙ্গিতই দিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাবক- সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সার্বিক নিরাপত্তার দিকেই সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। যেভাবে আমাদের দেশে সংক্রমণ কমে গিয়েছিল, তাতে আমরা খুব আশাবাদী হয়েছিলাম যে আমরা আমাদের মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দিতে পারব এবং পর্যায়ক্রমে আমরা খুলব। কিন্তু হঠাৎ করেই সারা বিশ্বে, শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে নতুন যে ঢেউ এসেছে, তাতে আমাদের এখানেও খুব দ্রুততার সঙ্গে গত কয়দিনে সংক্রমণের হার বেড়েছে। মৃত্যুর সংখ্যাও কিছুটা বেড়েছে।”
কবে নাগাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা রয়েছে- এ প্রশ্নের উত্তরে দীপু মনি বলেন, ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে এবং বৃহস্পতিবারই জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
আশা করছি আগামীকালের মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত জানাতে পারব। এই মুহূর্তে যেটুকু বলতে পারি যে… যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় আমরা খুলছি ইদের পরে, আমাদের এই মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক হয়ত বা সেই সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা অবশ্যই চাই, আমাদের কেউ যেন সংক্রমিত না হয়।
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে জানিয়েছিলেন, ৩০ মার্চ দেশের সব স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হবে। সেদিন তিনি বলেন, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ২৪ মে থেকে শুরু হবে এবং হল খুলবে ১৭ মে। এর আগে সব ধরনের পাঠদান ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। ১৭ মের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের করোনা টিকা দেওয়া হবে।
মহামারীর শুরুতে গত বছরের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ায় এইচএসসির পাশাপাশি পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী এবং কোনো ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষাও নেওয়া যায়নি।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৩৪ জন। গত তিন মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটিই এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর এক দিনে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন আট হাজার ৭৯৭ জন।
একই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও তিন হাজার ৫৮৭ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। গত প্রায় নয় মাসের মধ্যে এটিই এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এর আগে গত বছরের ২ জুলাই এক দিনে চার হাজার ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। আজসহ টানা তিন দিন ধরে দৈনিক সাড়ে তিন হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে গত ২৩ মার্চ তিন হাজার ৫৫৪ জনের ও ২৪ মার্চ তিন হাজার ৫৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৫ জন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬৫৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ