চীনা সরকারের অমানবিক অত্যাচার নির্যাতনে দেশ ছেড়ে গেলেও শান্তিতে ছিলেন না উইঘুররা। বিদেশে বসবাসকারী উইঘুর নেতাদের উপরও চরবৃত্তি করছিল চীনা হ্যাকাররা। ভুয়া অ্যাকাউন্ট এবং ওয়েবসাইট বানিয়ে, নজরদারি সফটওয়্যারের সাহায্যে তারা এই কাজ করত বলে জানিয়েছে ফেইসবুক।খবর ডয়েচে ভেলে।
এবিষয়ে ফেসবুক জানিয়েছে, বিদেশে বসবাসকারী উইঘুর নেতা ও কর্মী, সাংবাদিক এবং বিক্ষুব্ধদের কম্পিউটার এবং স্মার্ট ফোন হ্যাক করার চেষ্টা করত চীনা হ্যাকাররা। তারা এই বিষয়টি ধরে ফেলে। একইসঙ্গে হ্যাকিং অপারেশনে বাধা দেয়। ওই হ্যাকারদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় ফেসবুক। প্রায় একশোটি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, চীন প্রায় দশ লাখ উইঘুরকে গত কয়েক বছর ধরে ক্যাম্পে আটক করে রেখেছে। চীনে প্রায় দেড় কোটি উইঘুর মুসলমানের বাস। শিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই উইঘুর মুসলিম। এই প্রদেশটি তিব্বতের মতো স্বশাসিত একটি অঞ্চল। বিদেশি মিডিয়ার সেখানে প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সূত্রে খবর আসছে, সেখানে বসবাসরত উইঘুরসহ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ওপর ব্যাপক নিপীড়ন চালাচ্ছে বেইজিং।
জাতিসংঘের মতে, উইঘুরদের উপর অত্যাচার চালায় চীন। তারা এই অত্যাচার বন্ধের দাবি জানিয়েছে। তবে চীন বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
চীন এসব ক্যাম্পের কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এগুলো আসলে প্রশিক্ষণকেন্দ্র। উগ্রবাদী মানসিকতা প্রশমনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর চীনের ব্যাপক অত্যাচার নির্যাতন সইতে না পেরে অনেকেই পালিয়ে গেছেন। এই সব উইগুর নেতা ও কর্মীরা অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা, কাজাখস্তান, সিরিয়া, তুরস্ক ও অ্যামেরিকায় থাকেন। শিনজিয়াং থেকে হ্যাকাররা ৫০০ উইঘুর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করেছিল।
২০০৯ সালের জুলাইয়ে পশ্চিম চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল শিনজিয়াংয়ের স্বাধীনতা দাবি নিয়ে জাতিগত দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সেটি উরুমচি দাঙ্গা হিসেবে পরিচিত। আন্দোলনকারীরা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ফেসবুক। চীনা সরকার ফেসবুকের কাছে আন্দোলনকারীদের তথ্য চেয়ে বসে। ফেসবুক তাদের নীতিমালা দেখিয়ে সে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সে ঘটনার পরপরই চীনে ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশ্লেষকদের ধারণা, উরুমচি দাঙ্গার সূত্র ধরেই চীন সরকার সে উদ্যোগ নিয়েছিল।
এরপর ফেসবুকের বহু শীর্ষ কর্মকর্তা চীন ভ্রমণে গিয়েছেন। বহু দেনদরবার করেছেন। এমনকি প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার চীন থেকে ঘুরে এসেছেন। দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছেন। মাস্ক ছাড়াই দূষিত বাতাসের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে দৌড়েছেন। তবে সুবিধা করে উঠতে পারেননি।
চীনে ফেসবুক বন্ধ হলেও ফেসবুকের ব্যবহার কিন্তু পুরোপুরি আইনবিরুদ্ধ নয়। বিদেশি নাগরিকেরা সেখানে ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে বন্ধ করে রাখা ওয়েবসাইটগুলো দেখতে পারেন। কেবল সরকার বা তাদের নীতিমালাবিরুদ্ধ কিছু পোস্ট করা চলবে না। তা ছাড়া বন্ধ থাকলেও স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে চীন থেকে বেশ বিজ্ঞাপনী আয় করে ফেসবুক। আবার চীনা সংবাদমাধ্যমগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তাদের বার্তাও ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ফেসবুক জানিয়েছে, উইঘুরদের নিউজ সাইটের মতো অবিকল দেখতে ওয়েবসাইট বানিয়েছিল হ্যাকাররা। তার মাধ্যমে এবং ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে হাতিয়ার করে তারা নজরদারির চেষ্টা করছিল। তারা নানাভাবে সাইবার-চরবৃত্তির চেষ্টা করছিল। তারা উইঘুরদের ওয়েবসাইট, স্মার্টফোন বিকল করার চেষ্টাও করছিল। ফেসবুক এই ধরনের সব ওয়েবসাইটের নাম জানাবে।
ফেসবুকের তদন্তে জানা গেছে, এই হ্যাকাররা সাইবার-জগতে ‘আর্থ এমপুসা’ বলে পরিচিত। তারা খুব দক্ষ এবং সম্পদশালী। কিন্তু তাদের পিছনে কে আছে, সেটা তারা সবসময় গোপন রাখে। দুইটি চীনা কোম্পানি হ্যাকিংয়ের জন্য অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করেছিল বলে ফেসবুক জানিয়েছে।
এসডব্লিউ/ডিডব্লিউ/কেএইচ/১৬১০
আপনার মতামত জানানঃ