চীনের বিরুদ্ধে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াংয়ের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে উইঘুর জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর গণহত্যা এবং নির্যাতন চালানোর অভিযোগ নতুন নয়। তবে বেইজিং সরকার বরাবর এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
সম্প্রতি নির্যাতনের ঘটনার ওপর হাজার হাজার ছবি ও কিছু সরকারি গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। এসব ছবি ও নথি নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতাকেই যেন বিশ্ববাসীর সামনে আরেকবার তুলে ধরেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ফেলো ও জার্মান নৃবিজ্ঞানী আদ্রিয়ান জেনজ এসব গোপন সরকারি নথি সংগ্রহ করেছেন।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, চীনা কর্তৃপক্ষ জিনজিয়াং প্রদেশের অনেক বন্দিশিবির ও কারাগারে অন্তত ১০ লাখ উইঘুর এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষজনকে আটকে রেখেছে। তবে এ প্রসঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বেইজিংয়ের যুক্তি হলো, তাঁদের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এসব শিবিরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ‘চরমপন্থা’ মোকাবিলায় এর প্রয়োজন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, চীনা সরকারে তাদের দেশের উইঘুর মুসলমানদের উপর নির্যাতন, নৃশংসতা ও গণহত্যা চালাচ্ছে। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। আর নিজেদের এই অপকর্মকে বৈধতা দিতে টুইটার বাহিনী বা ট্রল আর্মি গঠন করেছে যারা চীনা সরকারের পক্ষে প্রচার চালায়।
উইঘুর সম্প্রদায়ের পক্ষে কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বললে তাদের নিয়ে ট্রল করাই এই টুইটার বাহিনী বা ট্রল বাহিনীর কাজ। সম্প্রতি ডিএফআরসির এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, চীনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা উইঘুর মুসলিমদের পক্ষে কথা বলেন তাদের বিরুদ্ধে টুইটারে একটি শক্তিশালী শক্তি আবির্ভূত হয়েছে। এই নতুন শক্তি হলো চীনা টুইটার আর্মি।
তারা চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের একটি প্রতারণামূলক ছবি প্রচারের কাজে নিয়োজিত। তারা সেই প্রদেশকে শান্তি ও অগ্রগতির আশ্রয়স্থল হিসেবে প্রচার করে। একই সাথে এই টুইটার সেনাবাহিনী কেবল চীনা সরকারের পক্ষেই ইতিবাচক সংবাদ প্রচার করেই ক্ষান্ত হয় না।
বরং যারা উইঘুর মুসলিমদের নিপীড়নের উপর আলোকপাত করে তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রলও করে।
চীনের এই টুইটার সেনাবাহিনীর লক্ষ্য যারা চীনা সরকার দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে বা হয়েছে তাদের প্রতি মানুষের সমর্থন হ্রাস করা। চীনা সরকারের দ্বারা নির্যাতিত মানুষদের উপর যাতে অন্যরা সহানুভূতি না দেখায় সে লক্ষ্যেই কাজ করে এই বাহিনী।
উইঘুর মুসলমানদের ব্যাপারে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি ভিত্তিহীন নয়। কেননা ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটির কাছে উইঘুর সম্প্রদায় নিয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছিল।
ঐ প্রতিবেদনে বলা হয় যে, উইঘুর মুসলমানরা যে জিনজিয়াং অঞ্চলে বাস করে তা একটি বিস্তৃত বন্দী কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। এ অঞ্চলে প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ আটক জীবন, বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও যন্ত্রণা সহ্য করছে।
দেশটিতে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। রমজান মাসে তাদের রোজা রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি তাদের দাড়ি রাখাও নিষিদ্ধ করেছে শি জিনপিং সরকার।
মুসলমানদের উপর শি জিনপিং সরকারের এই নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করেন। তাদের মোকাবেলা করতেই চীনা সরকারের এই ঘৃণ্য ট্রল বাহিনী গঠন।
উল্লেখ্য ডিএফআরসির গবেষণায় উইঘুর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রচার করে এমন ১০০টি টুইটার অ্যাকাউন্টের ১০০০টি টুইট বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই গবেষণায় ট্রল বাহিনী কোন প্যাটার্নে উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায় তা প্রকাশ করা হয়েছে।
এসডব্লিউএসএস১৭৪০
আপনার মতামত জানানঃ