সম্প্রতি ইউরোপের কয়েকটি দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা নিয়ে রক্ত জমাট বাঁধার অভিযোগ ওঠার পর আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দেয়। ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানিসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশ টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে। পরে ইউরোপের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি (ইএমএ) জানায়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন নিরাপদ ও কার্যকর। এরপরই বেশ কয়েকটি দেশ ওই টিকাদান আবারও শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির করোনার টিকা রপ্তানির বিষয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছে ইইউ৷
একে তো করোনার টিকার আকাল, তার উপর একটি টিকা কোম্পানির ভাবমূর্তি ও আচরণ নিয়ে সংশয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে৷ একাধিক কারণে রোষের মুখে পড়ছে ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা৷ টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে বার বার অনিশ্চয়তার পর আপাতত আবার ছাড়পত্র পেলেও অনেক মানুষ এই কোম্পানির টিকা নিতে চাইছেন না৷ তার উপর ইইউ-র সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী যথেষ্ট পরিমাণ করোনা টিকা সরবরাহ করতে একাধিকবার ব্যর্থ হচ্ছে এই কোম্পানি৷
এমন প্রেক্ষাপটে ইইউ দেশগুলিতে উৎপাদিত টিকা বাইরে রপ্তানির উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ চালু করছে ব্রাসেলস৷ বিশেষ করে অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির সরবরাহের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে ইইউ৷ ইউরোপীয় কমিশন বুধবার (২৪ মার্চ) রপ্তানির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও অনুমোদন প্রক্রিয়া সংশোধন করতে চলেছে৷ এর আওতায় সরাসরি রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো না হলেও যে দেশে টিকা রপ্তানি করা হচ্ছে, সেই দেশ থেকে সরবরাহের উপর বাধানিষেধ বিবেচনা করা হবে৷ অর্থাৎ সরবরাহ একতরফা হলে চলবে না৷ উল্লেখ্য, ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন আগেই এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন৷ শুক্রবার ইইউ শীর্ষ বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির প্রতি এমন কড়া মনোভাবের পেছনে ব্রিটেনের এক বড় ভূমিকা রয়েছে৷ ইইউ কমিশনের স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সান্ড্রা গালিনা ইইউ পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা গত মাস পর্যন্ত ব্রিটেনে সরবরাহে কোনো ঘাটতি রাখে নি৷ শুধু ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইইউ থেকে প্রায় এক কোটি টিকা সে দেশে পাঠানো হয়েছে৷ অথচ বোঝাপড়া অনুযায়ী ইইউ যথেষ্ট টিকা পাচ্ছে না৷ ব্রিটেনে উৎপাদিত একটি টিকাও ইইউ-তে আসে নি৷ অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির কাছে দশ কোটিরও বেশি টিকা অর্ডার দিলেও তার এক চতুর্থাংশ হাতে পায় নি ইইউ৷ ফলে সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চলেছে৷
এমন অভিযোগের মুখে ব্রিটেন কিছুটা চাপের মুখে পড়েছে৷ ভারতের এক কারখানা থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা সরবরাহে বিলম্বের ফলে টিকার সরবরাহ কমে গেছে৷ তার উপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কড়া মনোভাব পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে৷ নেদারল্যান্ডসে সেই কোম্পানির এক কারখানায় উৎপাদন শুরু হলেই ব্রিটেন সেখান থেকে টিকা পেতে আগ্রহী৷ ইইউ-র অভিযোগের মুখে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন প্রথমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখালেও এখন আলোচনার মাধ্যমে সংকট মেটানোর আশা প্রকাশ করছেন৷
এদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকার পরীক্ষায় পুরনো তথ্য থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। ২৩ মার্চ দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজেস (এনআইএআইডি) বিবৃতি দিয়ে এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পুরনো তথ্য থাকার কারণে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার কার্যকারিতা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়নি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
২২ মার্চ অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, পরীক্ষায় দেখা গেছে তাদের টিকায় মারাত্মক কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আর এই ভ্যাকসিনটি মারাত্মক ও প্রাণঘাতী সংক্রমণ বন্ধ করতে শতভাগ কার্যকর।
এনআইএআইডি’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা কোম্পানিটিকে ডিএসএমবি’র সঙ্গে কাজ করে যত শিগগির সম্ভব কার্যকারিতার তথ্য পুর্নমূল্যায়ন এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রকাশ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
তবে এনআইএআইডি’র বিবৃতিতে কোনও ভাবেই বলা হয়নি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি অনিরাপদ কিংবা এটি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে অনুমোদন পাওয়া এই টিকাটি ইতোমধ্যেই লাখ লাখ মানুষ গ্রহণ করেছেন।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চিলি ও পেরুর প্রায় ৩২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। এই ফলাফলকে যুক্তরাষ্ট্রে টিকাটির অনুমোদন পাওয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আগামী মাসের শুরুতে এই অনুমোদন পাওয়ার কথা রয়েছে। তবে এনআইএআইডি’র বিবৃতি এই অনুমোদন সময়সীমার ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৩৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ