২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনার উদ্ভব হয়। করোনা মহামারি আকারে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে গত বছর সংক্ষিপ্ত পরিসরে হজ পালিত হয়। গত বছর সংক্ষিপ্ত পরিসরে হজ পালিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছে এবার সবার অংশগ্রহণে হজ পালিত হবে। তাই আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে তারা। এরই অংশ হিসাবে এবার পবিত্র হজ পালন করতে হলে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে হবে বলে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ, যারা এবার পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরবে আসতে চান, তাদের জন্য টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক।
২০২১ সালে হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে আসতে অনুমোদন (পারমিট) পাওয়ার ক্ষেত্রে করোনার টিকা নেওয়ার বিষয়টি অন্যতম প্রধান শর্ত হিসেবে গণ্য হবে। এতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ থেকে হজে অংশগ্রহণ নিয়ে। তবে প্রস্তুতি নিচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, মহামারি করোনার এই আবহে ২০২১ সালের হজ প্রোটোকল ঘোষণা করেছে সৌদি আরব। এ বছরের হজ প্রোটোকলে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর শুধু ১৮-৬০ বছর বয়সীরা হজে অংশ নিতে পারবেন।
হজে অংশগ্রহণকারীদের সৌদি আরবে অবতরণের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এ ছাড়া সৌদিতে অবতরণের ৭২ ঘণ্টা আগে করা করোনাভাইরাসের পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্টও সঙ্গে রাখতে হবে।
এ ছাড়া সৌদিতে পৌঁছানোর পর হজ যাত্রীদের ৭২ ঘণ্টা কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সেখানে আবারও তাদের পিসিআর টেস্ট করা হবে। সেই টেস্টে নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পর তবেই কোয়ারেন্টিন শেষ হবে।
সম্প্রতি সৌদি আরব সরকার ঘোষণা দেয়, হজে যেতে হলে কোভিড ১৯-এর টিকা নিতেই হবে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ নিয়ে গেজেটও প্রকাশ করেছে। তবে কোন দেশ থেকে কতজন অংশ নিতে পারবেন, বিধিনিষেধ কেমন হবে, সে সবের বিস্তারিত জানা যায়নি।
এদিকে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করলে বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হজ নিয়ে একটি বৈঠক করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (হাব) বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।
সৌদি আরব যেহেতু টিকা গ্রহণকারীদের হজে যেতে দেবে, সেই ঘোষণার ভিত্তিতে প্রস্তুতির পক্ষে মত দেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। সিদ্ধান্ত হয়, ২০২০ সালে হজে যাওয়ার জন্য যারা নিবন্ধন করেছিলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের টিকা দিয়ে হজের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
দেশে ৪০ বছরের নিচের বয়সীদের করোনার টিকা নেওয়ার সুযোগ না থাকায় বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয় ১৮ বছরের ওপর ও ৪০ বছরের নিচে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের টিকা দেওয়ার সুযোগ দিতে।
সে সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা নিবন্ধিত সব বয়সী হজযাত্রীদের টিকা দেওয়ার আশ্বাস দেন। মে’র মধ্যে হজের জন্য নিবন্ধনকৃতদের টিকার দুটি ডোজ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে অনুরোধ করেছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এক বিজ্ঞপ্তিতে ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছরের হজের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি সিস্টেমে নিবন্ধিত ৬০ হাজার ৭০৬ জনকে করোনার টিকা নিতে হবে। এরমধ্যে ১৮ বছরের উপরে ও ৪০ বছরের নিচে রয়েছেন ৪ হাজার ৮৩৩ জন।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম গণমাধ্যমকে বলেন, সৌদি আরব শুধু টিকা দিতে হবে বলেছে। এর বাইরে কোনও ঘোষণা দেয়নি। ফলে আদৌ বাংলাদেশিরা হজে যেতে পারবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। সুযোগ দিলেও কতজন যেতে পারবেন তাও নিশ্চিত নয়। তবে প্রস্তুতি হিসেবে গতবার যারা নিবন্ধন করেছেন তাদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এবিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, ‘চলতি বছর হজ হবে কিনা তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি সৌদি আরব। তবে আগাম প্রস্তুতি হিসাবে সারাবিশ্বের হজ পালনে আগ্রহীদের করোনার টিকা নিতে হবে বলেছে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর অংশ হিসাবে বাংলাদেশেও নিবন্ধিত ব্যক্তিদের টিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যেহেতু প্রথম ডোজের ২ মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার নিয়ম তাই এখন থেকেই শুরু হচ্ছে। এ বছর সীমিত পরিসরে হজ অনুষ্ঠিত হলেও যেন আমরা সমস্যায় না পড়ি সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, পবিত্র কা’বা শরিফে প্রতি তিন ফুট দূরত্ব রেখে একসঙ্গে কতজন হজ পালন করতে পারবেন সেই বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এর ওপর ভিত্তি করে হয়তো কোন দেশ থেকে কত হজযাত্রী নেওয়া হবে তার সংখ্যা নির্ধারণ করা হতে পারে। আমরাও আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখতে চাই। যাতে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারি।’
এদিকে প্রতিবছর সৌদি আরবের সঙ্গে হজ চুক্তি শেষে হজ-প্যাকেজ ঘোষণা করে বাংলাদেশ। এ বছর এখনও কোনও প্যাকেজ ঘোষণা হয়নি।
গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। মন্ত্রিসভা সরকারিভাবে হজ পালনে প্যাকেজ-১-এ ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং প্যাকেজ-২-এ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, প্যাকেজ-৩-এ ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা অনুমোদন করে। অন্যদিকে ২৭ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। এর একটি হলো সাধারণ, অন্যটি ইকোনমি।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য সাধারণ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮শ’ টাকা। ইকোনমি প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
এবারের হজের ব্যয় সম্পর্কে এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, সৌদি আরব আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেই সব পরিষ্কার হবে। নতুন কোনও চার্জ ধরছে কিনা, হজযাত্রীদের আবাসন ব্যয় কেমন হবে, এসব জানার পর খরচ বলা সম্ভব হবে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম বলেন, হজ নিয়ে সৌদি আরব আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কিছু জানায়নি। তবে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। যাতে যেকোনও ঘোষণা এলেই হজে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
খরচ প্রসঙ্গে মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে খরচ। বাড়তি খরচের প্রয়োজন হলে হজযাত্রীদের তা দিতে হবে।’
তবে যারা প্রাক-নিবন্ধন করেছেন তাদের নিবন্ধনের কার্যকারিতা থাকবে বলেও গণমাধ্যমকে জানান ধর্ম সচিব। তিনি বলেন, যারা প্রাক-নিবন্ধন করেছেন, তাদের সবার নিবন্ধনের কার্যকারিতা থাকবে। পর্যায়ক্রমে সুযোগ পাবেন সকলে। তবে কেউ যেন দালাল দ্বারা প্রভাবিত না হোন। সেক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।’
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে স্বল্পসংখ্যক মুসল্লি নিয়ে সীমিত পরিসরে পবিত্র হজ পালিত হয়। গত বছর সৌদি আরবে বসবাসরত দেশি-বিদেশি প্রায় ১০ হাজার মুসল্লিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র হজ করার অনুমতি দেয় সৌদি সরকার।
গত বছর সৌদি আরবের বাইরের কোনো দেশ থেকে কেউ পবিত্র হজ পালনের জন্য সে দেশে যেতে বা হজ পালন করতে পারেননি। করোনা মহামারির কারণে ওই নিষেধাজ্ঞা দেয় সৌদি আরব।
প্রতিবছর সারা বিশ্বের ২৫ থেকে ৩০ লাখ মুসলমান পবিত্র হজ পালন করেন। বাংলাদেশ থেকে লাখো মুসল্লি হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরব যান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতা করুন।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ