প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ তম বার্ষিকী, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশতম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য আগামী ২৬-২৭ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদির এই সফর নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে সরকারপক্ষ।
তিস্তার পানি বন্টন, সীমান্ত হত্যা, ভারতীয় মুসলিমদের উপর বিজেপি সরকারের ক্রমবর্ধমান নিপীড়নসহ আরও কিছু বিষয়ে মোদির এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সফর অনেক রাজনৈতিক দল এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যেও অস্বস্তি তৈরি করছে।
‘নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেব না’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর বাতিলের দাবিতে সমমনা ইসলামী দলসমূহ ঢাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।
আজ শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম চত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করেছে ইসলামি দলগুলোর নেতারা।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বায়তুল মোকাররম থেকে পল্টন হয়ে বিজয় নগর গেলে সেখানে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পরে বিক্ষোভকারীরা আবার মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররমে ফিরে আসে।
সমাবেশে মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদের, আহমদ আলী কাসেমী প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে মিছিল ঘিরে পুলিশ আগে থেকেই ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়।
‘নরেন্দ্র মোদি ইসলাম ও মানবতার দুশমন’
মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার পাইকপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইসলামী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, মোদির লজ্জা থাকলে বাংলাদেশ সফরে আসবে না।
“নরেন্দ্র মোদি মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ভরা মৌসুমে পানি ছেড়ে দেয়, পানির প্রয়োজনের সময় আবার তা বন্ধ করে দেয়। পেঁয়াজের সংকট হলে রপ্তানি বন্ধ করে, ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ দেয়। মোদির লজ্জা থাকলে বাংলাদেশ সফরে আসবে না।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসলে ইসলাম ও মানবতার এই দুশমন মোদিকে সীমান্তে হত্যাকারীদের কঙ্কাল উপহার দেয়া উচিত। যে দেশের সরকার মুসলমানদের নাগরিক অধিকার হরণ করে ভারত থেকে বিতাড়িত করতে চায়, সেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি নব্বই ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশে আসবে কোন মুখে?
ভারতের উচ্চ আদালতে পবিত্র কোরআনের ২৬টি আয়াত বাতিলের রিট গ্রহণ করায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর।
এ প্রসঙ্গে ফয়জুল করীম বলেন, নরেন্দ্র মোদি ভারতের শিয়া ওয়াক্ফ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াসিম রেজভীকে দিয়ে পবিত্র কোরআনের ২৬টি আয়াত বাতিলের রিট করিয়েছে।
“২৬টি আয়াত কেন? কোরআনের একটি আয়াত কিংবা আয়াতের অংশকে বাদ দেয়ার শক্তি বিশ্বের কোনো মানুষ কিংবা আদালত রাখেন না।”
মুফতি ফয়জুল করীম আরও বলেন, ভারত মুসলমানদের সঙ্গে খেলা শুরু করেছে- কখনো মসজিদ ভেঙে, কখনো সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা করে, কখনো পানি বন্ধ করে দিয়ে, কখনো গরুর গোশত খাওয়ার অপরাধে মুসলিম হত্যা করে। ইসলাম ও কোরআনের এই দুশমনকে বাংলাদেশের মানুষ বরণ করতে পারে না।
বাংলাদেশ সফর সম্মানের: মোদি
এদিকে গত বুধবার সকালে টুইটারে দেয়া পোস্টে মুজিববর্ষে বাংলাদেশ সফর করতে পারাকে নিজের জন্য সম্মানের বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
টুইটে মোদি বলেন, ‘মানবাধিকার ও স্বাধীনতার রক্ষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা।
“সকল ভারতীয় নাগরিকদের কাছেও বঙ্গবন্ধু একজন বীর হিসেবে গণ্য হন।”
এই মাসের শেষের দিকে ঐতিহাসিক মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ সফর করতে পারা আমার জন্য সম্মানের বিষয়।’
মোদির বাংলাদেশ সফর
এ সফরে উভয় প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে নিজ নিজ দেশের পক্ষে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পৃথক দুটি স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করবেন।
মূলত মুজিববর্ষ উদযাপন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যৌথ উদযাপন উপলক্ষে এই সফরে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সফরে ২৬ মার্চ বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়া সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৭০১
আপনার মতামত জানানঃ