পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, তার স্ত্রী নীলা রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিবসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ মামলা করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সকালে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় বরিশালে এ দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যায়।
সংস্থাটির তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আলী আকবর বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।
দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট ওই সূত্র থেকে জানা যায়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পিরোজপুরের সাবেক এমপি একেএমএ আউয়ালের ভাই বর্তমান পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক ও তার স্ত্রী নীলা রহমানকে আসামি করে একটি মামলা করে দুদক।
অন্য একটি মামলায় জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তরফদার সোহেল রহমান, পৌরসভার কাউন্সিলর আবদুস সালাম বাতেন, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হানিফ, পৌরসভার সচিব মাসুদ আলমসহ নিয়োগ পাওয়া ২২ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি বিধি ভঙ্গ করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে নিয়োগ দিয়ে অপরাধ করেন। একইসঙ্গে নিয়োগের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন।
জানা যায়, ২০০৬ সালে পিরোজপুর পৌরসভার নৈশপ্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, টিকাদানকারী, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরসহ বেশ কয়েকটি পদের বিপরীতে পঁচিশ জনকে নিয়োগ দেন পৌরমেয়র আলহাজ মো. হাবিবুর রহমান মালেকসহ পাঁচজন মিলে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মেয়র হাবিবুর রহমান মালেকের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, এটাতো অনেক আগে নিয়োগ হয়েছে। তবে আমার যতটুকু মনে আছে সেখানে ২২ জন নিয়োগ পেয়েছিল। কিন্তু একজন নিয়োগ পাননি। আর বাকি দুজন যোগদান করেননি। পত্রিকায় যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
পৌরসভার একটি সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ৫ জুন পত্রিকায় ২৫টি খালি পদের বিপরীতে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই ২৫ জনের মধ্যে ২২ জন নিয়োগ পান। বাকি তিনজন নিয়োগ গ্রহণ করেননি। তবে এই নিয়োগের বিষয়ে পৌরসভা থেকে ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় যে তারিখে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাপার কথা বলা হয়েছে, বাস্তবে ওই তারিখের দৈনিক সংবাদে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
গত বছরের ডিসেম্বরে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত র্প্রাথী হাবিবুর রহমান মালেক পুনরায় পিরোজপুর পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এ নিয়ে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনে এমন উদাহরণ রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে। মূলত এভাবে লুটেপুটে খাওয়ার জন্যই দলীয় পদবী কিংবা নির্বাচিত যেকোনো পদ নিজেদের দখলে নিয়ে নিজেদের অপতৎপরতা চালান। স্থানীয়রাও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পান না। সরকারি বেসরকারি সমস্ত স্তরেই রয়েছে এদের অবৈধ অবাধ বিচরণ। রাতারাতি বিশাল সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়ার জন্য হেন কোনো কাজ বাদ রাখেন না। কেননা তাদের বিরুদ্ধে সরকার কিংবা প্রশাসনও অতোটা সরব থাকেন না। বলা চলে উভয়পক্ষকেই টাকার বিনিময়ে নিজেদের পকেটেই পুরে রাখেন তারপর নিজেদের অপকর্ম চালান নির্বিঘ্নে। এসব বিষয়ে সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ দাবি করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি দপ্তরগুলোও আমাদের সমাজের মতোই ঘুণেধরে আছে। সমাজে সরকারি চাকরি নিয়ে প্রচলিত যেসব ধারণা রয়েছে অর্থাৎ সরকারি চাকরি করলে উপরি আয়ের ব্যবস্থা ভালো, আর এই মতেই অভিভাবকরা উঠেপড়ে লেগে যান সন্তানকে সরকারি অফিসার বানাতে, এটা সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতি বিনির্মাণে যেমন বিপজ্জনক তেমনি নৈতিক দিক দিয়ে বেড়ে ওঠাও অনেক চ্যালেঞ্জের। ফলে বিভিন্ন সেক্টরে অনিয়ম আর দুর্নীতির মতো অভিযোগ উঠে আসে। শুধু মামলা মোকদ্দমা করেই দুর্নীতি থেকে পার নয়, সমাজের রন্ধ্রে সরকারি চাকরি নিয়ে যে ধারণা বিষের মতো ছড়িয়ে আছে এটাও নির্মূলে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। নয়তো প্রজন্ম পর প্রজন্ম সরকারি দপ্ততগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩৬
আপনার মতামত জানানঃ