রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পাঁচ মাদকসেবীকে আটকের পর হাজির করা হয়েছিল ভ্রাম্যমাণ আদালতে। খবর পেয়ে সেখানেই তাদের ছাড়াতে যান পৌরসভার এক কাউন্সিলর ও এক যুবলীগ নেতা। সুযোগ পেয়ে পাঁচ মাদকসেবী পালিয়ে যান। অভিযান চালিয়ে তাদের আবার আটক করে পুলিশ। কিন্তু তখন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরে ভিন্ন অপরাধ!
আটক ওই পাঁচ মাদকসেবীর সঙ্গে কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতাকেও কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার (১৬মার্চ) রাতে এ ঘটনা ঘটে। গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম বলেন, পাঁচজনকে মাদক সেবনের সময় আটক করা হয়েছিল। কিন্তু কাউন্সিলর শহীদুল ও যুবলীগ নেতা মাসুম তাদের ছাড়াতে এসে পালিয়ে যেতে বলেন। তাই সবাইকেই কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম (৪৫)। তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। পৌর এলাকার রামনগর এলাকায় তার বাড়ি। আর যুবলীগ নেতা গোলাম কাউসার মাসুম (৩৮)। তিনি উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাদের দুজনকে এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এছাড়া কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য পাঁচ মাদকসেবী হলেন, রামনগর এলাকার হুমায়ুন কবীরের ছেলে সাদ্দাম (২০), মনিরুল ইসলামের ছেলে সাব্বির (২০), আলম আলীর ছেলে সজিব (২০), উপজেলার চাঁইপাড়া এলাকার দুরুল হুদার ছেলে রিফাত (২১) এবং উপজেলার বুজরুক রাজারামপুর এলাকার মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে রমজান আলী (২০)। তাদের প্রত্যেককে প্রথমে তিন মাস এবং পরে তা বাড়িয়ে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনও জানে আলম এ আদেশ দেন। এর আগে সন্ধ্যায় পাঁচ মাদকসেবীকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুন নাহারের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয়েছিল। সেখানেই তাদের ছাড়াতে যান কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিকালে গাঁজা ও ফেনসিডিল সেবনের সময় পাঁচ মাদকসেবীকে আটক করে জেলা মাদকদ্র্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা ইউনিটের একটি দল। এরপর তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে পৌর কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা তাদের ছাড়াতে যান। তারা এদের ছেড়ে দেয়ার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহারকে চাপ দিচ্ছিলেন। এই সুযোগে পাঁচজন পালিয়ে যায়। এ নিয়ে হুলস্থুল পড়ে যায়। আসামিরা পালিয়ে যাওয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দুইজনকে আটকে রাখেন। পরে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে আনে। এরপর ইউএনও’র ভ্রাম্যমাণ আদালত সাতজনকেই সাজা দেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, পাঁচ আসামি পালিয়ে গিয়েছিল। আমরা খবর পেয়ে আসামি উদ্ধার করে দিয়েছি। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা হলেরাতেই সাতজনকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাঁচজনকে যখন ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয়, তখন কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম ও যুবলীগ নেতা মাসুম উপজেলা পরিষদ চত্বরেই ছিলেন। তারা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে বলেন, ‘তারা সবাই কলেজে পড়ে, তাদের ছেড়ে দেওয়া যায় কি-না’। এসময় পাঁচজন ১০ মিনিটের জন্য একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে ডাকা হলে তারা চলে আসে। এ রকম একটি ঘটনার জন্য কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতাকেও সাজা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে রয়েছেন অসংখ্য বিতর্কিত নেতাকর্মী। যাদের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা অভিযোগ করতেও ভয় পান। তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সরকারের ব্যাপক অর্জনের মধ্যেও সমালোচনা হচ্ছে। বিতর্কিত এসব নেতার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন একশ্রেণির সংসদ সদস্য। এ কারণে তাদের দাপট অনেক বেশি। স্থানীয় থানা ও প্রশাসন যুবলীগ-কাউন্সিলর এ ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছে না। কোনো কোনো কর্মকর্তা ব্যবস্থা নিতে গেলে ঐ কর্মকর্তাকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত কর্মকর্তা বলে বদলিসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। সরকারের সমালোচনা ঠেকাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এবিষয়ে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকা পালনের দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯০৯
আপনার মতামত জানানঃ