কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে বাস্তবায়নাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে। প্রকল্পে ধীরগতির অভিযোগ আগেই ছিল। এখন যোগ হয়েছে অবহেলা। প্রকল্পজুড়ে নেই নিরাপত্তার বালাই। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধারকাজের সরঞ্জামও রাখা হয়নি। চরম ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা।
রোববার (১৪মার্চ) সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিমানবন্দর রেল স্টেশনের কাছে এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে বলে কুর্মিটোলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান। এর আগে শনিবার (১৩মার্চ) গভীর রাতে উত্তরার আবদুল্লাহপুরে পলওয়েলের কাছে এ প্রকল্পের একটি পিয়ার ক্যাপ ধসে পড়ে, তবে সেখানে কেউ হতাহত হননি।
১৪ মার্চের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা শফিকুল বলেন, বিমানবন্দর রেল স্টেশনের কাছে প্রকল্পের একটি গার্ডার স্থাপনের সময় লঞ্চার ভেঙে পড়লে চার কর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে দুইজন চীনা নাগরিক জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে তিনজনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে এবং একজনকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দের পর তারা ধুলো উড়তে দেখেন। পরে বুঝতে পারেন যে নির্মাণাধীন প্রকল্পে দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
১৩ মার্চের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটি’র প্রকল্প পরিচালক মো. লিয়াকত আলী বলেন, শনিবার রাতে আব্দুল্লাহপুরের উত্তরা পলওয়েলের কাছে প্রকল্পের একটি পিয়ার উইং ধসে পড়ে। ঢালাই প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হওয়ার পর সাপোর্ট দেওয়ার যে খুঁটিগুলো ছিল তার একটিতে কোনও কিছুর আঘাত লেগেছিল। এতে খুঁটিটি সরে গিয়ে ঢালাই ধসে পড়ে। ওই জায়গায় আবার ঢালাই হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এটা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
রবিবার বিকেলে প্রকল্পের এই অংশে সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুরের পর থেকে ধসে পড়া অংশগুলো ড্রিল মেশিন দিয়ে কেটে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ যখন সারানো হচ্ছিল তখনও পাশের একটি পিলারে কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই কয়েকজন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের নিরাপত্তায় উন্নত ব্যবস্থা রাখেনি। ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ যখন চলছে তখনও পাশ ঘেঁষে চলছিল যানবাহন। প্রকল্পটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কর্ডন করে রাখা হয়নি।
প্রকল্পের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা আবদুস সবুর জানিয়েছেন, প্রকল্পের ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো যাতে রাতে করা হয় সে জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারপরও ব্যবস্থা নেয়নি। দিনে এ ধরনের কাজ করাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বেলা তিনটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। এসময় তিনি প্রকল্পের বিভিন্ন অংশ ঘুরে ঘুরে দেখলেও কোনও মন্তব্য করেননি। ভেঙে পড়া অংশ দেখতে গিয়ে তিনি যখন লোহার সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলেন তখন সিঁড়িটিও নড়তে থাকে।
বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) কোম্পানি লিমিটেডের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল ইসলাম বলেন, সবসময় মনিটরিং থাকে না। ঘটনায় মনিটরিং টিমের গাফিলতি আছে কি না তদন্ত করে দেখতে হবে। কাজটি মূলত রাতে করার কথা ছিল। কিন্তু কেন দিনে করা হয়েছে খোঁজ নিচ্ছি।
শফিকুল ইসলাম আরও জানিয়েছেন, পিয়ারে লঞ্চার দিয়েই এই গার্ডারগুলো তোলা হয়। এর আগে ৯ ও ১০ নং পিয়ারের উপরের কাজ শেষ হয়। লঞ্চারটিকে ৮ ও ৯ নম্বর পিয়ারের ওপর স্থাপন করার সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কোনও একটা কারণে পড়ে যায়। এতে চার জন আহত হয়।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যানজট নিরসনে গৃহীত বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পে মোট ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২২ সালের জুনে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪১৪
আপনার মতামত জানানঃ