পশ্চিমবঙ্গের এবারের নির্বাচন বড়ই আলোচনামুখর। তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম নেতা ও মমতার সাবেক পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীসহ তৃণমূলের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মী বহু আলোচনার জন্ম দিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে এবার নতুন চমক হিসাবে দেখা দিলেন ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা যশবন্ত সিং। তিনি পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এই প্রথম বিজেপির জাতীয় পর্যায়ের কোনো নেতা তৃণমূলে যোগ দিলেন।
সূত্রের খবর, আজ সকালেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে যশবন্তর। মমতার সঙ্গে প্রায় ৪৫ মিনিট কথা বলার পরই শাসক শিবিরে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তৃণমূল ভবনে তার হাতে দলের পতাকা তুলে দেন তৃণমূলের তিন শীর্ষনেতা ডেরেক ও ব্রায়েন, সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সুব্রত বলেন, “যশবন্ত সিনহার মতো মানুষ এসে আমাদের ধন্য করলেন। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের পথ প্রদর্শক হিসেবে থাকবেন। সারা ভারতবর্ষে তিনি তৃণমূলের আদর্শ প্রচার করবেন। তার নেতৃত্বে গোটা দেশে তৃণমূলের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চক্রান্তের শিকার না হলে, আজ তিনি নিজেই উপস্থিত থাকতেন। আমরা মমতা এবং যশবন্তের যৌথ পথপ্রদর্শনে এগিয়ে যাব।”
কিন্তু জীবনের শেষ বয়সে এসে কেন হঠাত তৃণমূলে যোগ? ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মমতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন তিনি। বললেন, “আজকের ঘটনায় হয়তো আপনারা চমকে গিয়েছেন। কেন এই বয়সে সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরলাম? আসলে দেশ এই মুহূর্তে এক অদ্ভুদ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সমস্ত স্বশাসিত সংস্থা আজ বিপদের মুখে। এর মধ্যে রয়েছে বিচারব্যবস্থাও। দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন। অথচ, কারও কোনও হেলদোল নেই।
আজ এই দেশে কৃষক, মজুর সকলেই ত্রস্ত। স্বাস্থ্য, শিক্ষাক্ষেত্রে চরম দুর্দিন চলছে। তাতেও উদাসীন সরকার। এখনকার কেন্দ্রীয় সরকারের একটাই লক্ষ্য, ভোটে জেতা।”
অটল বিহারীর সময় তিনি অর্থমন্ত্রী ছিলেন। মমতার সুরেই যশবন্ত বললেন, “অটলজির বিজেপি আর আজকের বিজেপির মধ্যে বিস্তর ফারাক। অটলজি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করতেন। এখনকার সরকার সবাইকে দমন করার নীতিতে বিশ্বাস রাখে। অটলজির আমলে আমরা দেশজুড়ে মহাজোট গঠন করেছিলাম। অথচ, আজকের বিজেপির পাশে কেউ নেই। তার কারণ এই বিজেপি সঙ্গে থাকার যোগ্য নয়। এই লড়াই শুধু ভোটের বা রাজনীতির লড়াই নয়। এটা দেশের গণতন্ত্রের লড়াই, দেশের অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়াই।”
মমতার ভূয়সী প্রশসাং করে তিনি বলেন, ‘মমতাজি আর আমি দুজনেই অটলজির সরকারে কাজ করেছি। শুরু থেকেই যোদ্ধা উনি। বাংলার নির্বাচন নিছক ভোটের লড়াই নয়, এই লড়াই গোটা দেশকে বার্তা পৌঁছে দেবে যে, আর অন্যায়, স্বেচ্ছাচার সহ্য করা হবে না। দিল্লিতে বসে মোদি-শাহ যা করছেন, তার বিরুদ্ধে বাংলাতেই প্রথম পরীক্ষা।’
আসন্ন পশ্চিবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে দলের হয়ে যশবন্ত সিং কী ভূমিকা পালন করবেন, তৃণমূলের পক্ষ তা এখনও স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। তবে তাকে এনে বাংলার হিন্দিভাষী মানুষদের কাছে বার্তা দেওয়া হলো বলে মনে করছে দলের একাংশ।
একসময়ে বিজেপির দাপুটে নেতা ছিলেন যশবন্ত সিং৷ মন্ত্রিসভাতেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷বাজপেয়ী মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রকের পাশাপাশি সামলেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রকও। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কার্যত রাজনৈতিক সন্ন্যাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয় যশবন্তকে। যার জেরে মোদি-শাহ জুটির উপর রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
২০১৯ লোকসভার আগে থেকেই মোদি-শাহ জুটিকে হারাতে রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমেছেন তিনি। উনিশের আগে মমতার হয়ে রাজ্যে ভোটপ্রচার করেছেন তিনি। স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, “২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চাই৷’’ এমনকী, উনিশের ভোটের আগে মমতা যে একের বিরুদ্ধে এক ফরমুলায় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার অঙ্গিকার করেছিলেন, সেই ফরমুলাকেও সমর্থন করেন যশবন্ত। তারপর থেকেই তার এবং মমতার সখ্য সুবিদিত।সেই মমতার দলের হাত ধরেই রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হলেন যশবন্ত।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন যশবন্ত সিং। ২০১৮ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির থেকে ইস্তফা দেন জনতা দল থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করা এই গেরুয়া শিবিরের জনপ্রিয় নেতা। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের ‘স্বেচ্ছাচার’ মেনে নিতে না পেরেই ভারতীয় জনতা পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটের আগে কার্যত উলটো পথে হাঁটলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের অংশীদার হতেই।
বিজেপি ছাড়ার ৩ বছরের মধ্যে তিনি তৃণমূলে যোগ দিলেন। ভোটের আগে তার এ যোগদান তৃণমূলের যে বাড়তি অক্সিজেন যোগাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৮
আপনার মতামত জানানঃ