সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপন (৪৫) এর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা রিপনসহ আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ ২০২১) বিকেলে রায়গঞ্জ থানা আমলী আদালতে মামলাটি করেন ওই উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের বন্দিহার গ্রামের আব্দুল মান্নান।
মামলার আসামিরা হলেন, একই ইউনিয়নের বাসাইল জুব্বারের ছেলে সোরহাব আলী (৩৮), মৃত আজাহার আলীর ছেলে আহমাদ (৫০), ভুইয়ট গ্রামের মৃত আসমত আলীর ছেলে জয়নাল হোসেন (৫৮) ও তার দুই ছেলে আব্দুল জব্বার (৩৫), সুমন শেখ (৩০), ইসরাফিলের ছেলে সোহাগ (২৮) ও আব্দুল খালেক (৩৫), মৃত মনছের আলীর ছেলে ইসরাফিল (৬০) এবং মৃত শাহজান আলীর ছেলে ফরহাদ (৫৫), ফরহাদের ছেলে আরিফ (৩২) ও ফারুক (৩৫)।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নিমগাছী বাজারের মৎস্য আড়ৎদার ওই মামলার ১ নম্বর স্বাক্ষী আবু সাঈদ সেখের কাছ থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও মামলার বাদি আব্দুল মান্নানের ছেলে রেজাউল করিমকে নিমগাছী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিছন্নতা কর্মী পদে (এমএলএসএস) চাকরি দেওয়ার জন্য নগদ আট লাখ টাকা গ্রহণ করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপন।
চাকরির আশায় জমি ও গরু বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করে দিলেও চাকরি হয়নি রেজাউলের। ওই চাকরি পেয়েছেন আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপনের ভাগ্নে আসলাম হোসেন।
পরে রেজাউল করিমের চাকরি না হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর আব্দুল মান্নান টাকা ফেরত চান। আবু হেনা মোস্তফা কামাল তিন মাস সময় নেন। সাত মাস পর আবারও সময় নেন। পরে ভুক্তভোগী মামলার বাদী স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ এমপিকে বিষয়টি জানান। সংসদ সদস্য ডা. এম এ আজিজ মুঠোফোনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন চেয়ারম্যান আবু হেনার সঙ্গে।
২০২০ সালের ২৫ মে আসামি আবু হেনা মোস্তফা কামাল ৯০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে আবারও সময় নেন। নির্দিষ্ট সময়ে পেরিয়ে গেলে ভুক্তভোগী আবার টাকা চান। সেসময় অবশিষ্ট সাত লাখ ১০ হাজার টাকা ফেরত দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
মামলার বাদী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আসামিরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। বর্তমানে আমরা চরম আতঙ্কে রয়েছি’।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. লোকমান হাকিম বলেন, রায়গঞ্জ থানা আমলী আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. নজরুল ইসলাম বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চেক জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে’।
মামলার প্রধান আসামি সোনাখাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপন বলেন, ‘চাকরি বিষয়ে আমার সঙ্গে কারো কোনো লেনদেন হয়নি। মূলত সামনে নির্বাচন। এজন্য প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে’।
এ বিষয়ে রায়গঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তের আদেশটি এখনও হাতে পাইনি। পাওয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে’।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপনের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে ২৪টি ঘর নির্মাণ করে তা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিতরণের অভিযোগও রয়েছে। তার বিরুদ্ধে উচ্ছেদের অভিযোগ এনে তখন রায়গঞ্জ ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ দেয়ার পর চেয়ারম্যান ও তার লোকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হামলা-মামলাসহ হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল রিপনের বিরুদ্ধে এক গৃহকর্মী ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। এব্যাপারে ওই গৃহকর্মী আদালতে ধর্ষণ মামলাও দায়ের করেছেন। সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সরকারি চাল, গম, অর্থ ইত্যাদি তাদের হাত হয়ে যাওয়ার ফলে প্রাপ্যরা সহজেই প্রতারিত হন। সরকারদলীয় ও স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়াতে তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করতেও সাহস পায় না। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা সহজেই টাকার কুমির বনে যায়।
তারা জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে প্রায়ই বিভিন্ন রকমের অভিযোগ আসে। তারা জনপ্রতিনিধি হয়েও বিভিন্ন দুর্নীতি, সরকারি অনুদান চুরি, জোর করে জমি দখলসহ আরো বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েন যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। জনগণের পাশে থাকার জন্য নির্বাচিত হলেও তারা আদতে নিজেদের ফায়দা লুটার জন্য নির্বাচনে দাঁড়ান বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা, বরখাস্ত ইত্যাদি চলমান থাকলেও থামানো যাচ্ছে না তাদের। সম্প্রতি এসব যেন বেড়েই চলছে। এবিষয়ে সরকারের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ এবং প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১৪৩
আপনার মতামত জানানঃ