বিশেষ প্রতিনিধি : পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে প্রধান দুই দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা লক্ষ্যণীয়। পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন নির্বাচনে এই প্রধান দুই দল ইতিমধ্যেই নির্বাচনী মাঠ গরম করে তুলেছেন। তবে প্রধান এই দুই দলের ফাঁকে আরেকটি নামও সমান তালে উচ্চারিত হচ্ছে। তিনি হলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তিনি ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় বাম-কংগ্রেসের ব্রিগেড সমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছে আব্বাস সিদ্দিকীর দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে হঠাৎই সামনের সারিতে চলে আসা মুসলমান সমাজের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী কিছুদিন আগেও বামপন্থীদের-বিরোধী ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আসনরফা নিয়ে কথাবার্তা বলছিলেন। সেখান থেকে রাতারাতি সমঝোতা করে ফেললেন বামপন্থীদের সঙ্গে, যাদের থেকে দশ বছর আগে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান সমাজ।
ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় আব্বাসের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। সব জায়গায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বঙ্গ রাজনীতিতে এই নতুন শক্তি। বিগত চার বছরে যার জনপ্রিয়তা রাজনৈতিক দল ও নেতাদের সমানে টেক্কা দিচ্ছে। যার প্রকাশ্য সভায় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে ছাড়িয়ে যায়। যাকে নিয়ে এখন আলোচনা সর্বত্র।
কে এই আব্বাসী?
আব্বাস সিদ্দিকী ফুরফুরা শরিফ দরবার পরিবারের একজন সদস্য। পীরবংশের সন্তান। ফুরফুরা শরিফের প্রথম পীর আবু বকর সিদ্দিকীর পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি হলেন পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। ফুরফুরা শরিফের ছোট হুযুর পীর জুলফিকার আলির পৌত্র। তার বাবার নাম পীরজাদা আলি আকবর সিদ্দিকী। ফুরফুরা শরিফের আর এক চর্চিত নাম পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর ভাইপো।
ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম তীর্থভূমি’ ফুরফুরা শরিফের পীরজাদাদের মধ্যে আব্বাস সিদ্দিকী এখন জনপ্রিয়তায় তুঙ্গে। যার মধ্যে সমাজের জন্য কিছু করার তাগিদ রয়েছে। ছোটো থেকেই অন্যের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করতেন। জাত ধর্ম বিচার নাম করে ছোটো বেলায় বন্ধুদের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন পীরবংশের এই সন্তান। বাস্তাবে আব্বাস সিদ্দিকী থিওলজি বিষয়ে এম.এ করেছেন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুরফুরা টাইটেল মাদ্রাসার টাইটেল মাদ্রাসার স্টাডি সেন্টার থেকে এম.এ পাশ করেছেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করেই ধর্মীয় সভায় বক্তব্য রাখতে শুরু করেন আব্বাস। সেই সভা থেকে যুব সমাজের মধ্যে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন তিনি। এই ভাবে অল্প বয়সেই তার জনপ্রিয়তা বাড়ে। অনুগামীরা তাকে ডাকেন ভাইজান নামে। আস্তে আস্তে সেই জলসাগুলিতেই আব্বাসের মুখে উঠে আসে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক খোঁজখবর ও ব্যাখ্যার কথাও। একইসঙ্গে কীভাবে গরীবরা বঞ্চিত হচ্ছেন সেই কথাও তুলে ধরেন তিনি।
২০১৬ সালে ফুরফুরা শরিফ আহলে সুন্নাতুল জামাত নামে এক অরাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করে সামাজিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। ২০১৯ সালে ফুরফুরা ‘নলেজ সিটি’-রও শিলান্যাস করেন তিনি।
এর মধ্যে ২০১৯ সালেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা সিএএ নিয়ে যখন দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয় তখনই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা শোনা যায় সিদ্দিকীর গলায়। তখন থেকেই নাকি ঘনিষ্ঠ মহলে রাজনীতিতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন এই ধর্মীয় নেতা।
২১-এর বিধানসভা ভোট যতই এগিয়ে আসতে থাকে ধীরে ধীরে রাজনীতি নিয়ে নিজের বক্তব্যের আগুনের মাত্রা আরও বাড়াতে থাকেন আব্বাস সিদ্দিকী। রাজ্যের ও কেন্দ্রের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির সমালোচনায় সরব হন তিনি।
গত ২১ জানুয়ারি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট নামে আত্মপ্রকাশ করে আব্বাসের রাজনৈতিক দল। রাজ্যের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছে যান ‘ভাইজান’। এবারের ভোটে তারদলই ফ্যাক্টর হতে চলেছে বলে ঘোষণা করেন তিনি।
রাজনৈতিক দল গঠন
গত ২১ জানুয়ারি কলকাতা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে নয়া দলের কথা ঘোষণা করেন আব্বাস সিদ্দিকী। এই রাজনৈতিক দল ঘোষণার কথা অনেক আগেই জানিয়েছিলেন ফুরফুরার পীরজাদা। আব্বাস সিদ্দিকীর বাড়িতে এসে বৈঠক করে জোটের বার্তা দিয়ে গিয়েছেন হায়দরাবাদের সাংসদ তথা মিম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি। বাম-কংগ্রেস নেতাদেরকেও দেখা গিয়েছে ফুরফুরায় গিয়ে আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করতে।
এই অবস্থায় প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিজের রাজনৈতিক দলের ঘোষণা করলেন আব্বাস সিদ্দিকী। তার দলের নাম হচ্ছে- ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। রাজ্যের কোনও রাজনৈতিক দলের নামের মধ্যে সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ নেই। সেই অর্থে আব্বাস সিদ্দিকীই প্রথম ব্যক্তি যিনি এই প্রকারের রাজনৈতিক দলের সূচনা করলেন।
নিজের নতুন দল গড়া নিয়ে বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, সংসদীয় রাজনীতিতে এসে এইসব অসহায় মানুষের হয়ে আওয়াজ তোলা দরকার। সেজন্যই দল গড়ছি। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলি যদি এটা আগে করতে পারত, তাহলে আমাদের এগিয়ে আসার দরকার হত না
তিনি আরও বলছেন যে, মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনতার পর থেকে কোনদিনই মুসলমান সমাজের উন্নয়নের জন্য বিশেষ কিছু করেনি। তারা মুসলমানদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করে এসেছে। তাই তারা মনে করছেন যে তাদের নিজেদের একটা রাজনৈতিক দল প্রয়োজন – যেটি শিক্ষিত – মধ্যবিত্ত মুসলমানদের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা রাজনৈতিক পরিসরে তুলে ধরতে পারবে।
আব্বাস সিদ্দিকীর রাজনীতি
১৯৭৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা সাত মেয়াদে ৩৪ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। ২০১১ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনে জিতে টানা দুই মেয়াদে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আছে তৃণমূল কংগ্রেস।
ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর মতে, ৩৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও বামফ্রন্ট রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য তেমন কিছু করেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল তৃণমূল মুসলিমদের উন্নয়নের কথা বলে ক্ষমতায় এলেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। আব্বাস সিদ্দিকী মনে করেন, ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে মুসলিমদের নিজেদেরই রাজনীতিতে আসতে হবে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ জন্য মমতা সরকারকে সরাসরি আক্রমণ করছেন আব্বাস। তবে, কেবল মুসলিম নয়, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যেও কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘মমতা বাংলার স্বাধীনতা কেড়েছে। তাকে উৎখাত করে ছাড়ব। এটা বাংলা। এ বাংলা কাজী নজরুলের বাংলা, এ বাংলা সুভাষ চন্দ্র বসুর বাংলা, এই বাংলা সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিকীর বাংলা, এই বাংলা রবীন্দ্রনাথের বাংলা। এই বাংলা ব্রিটিশদের মতো কালো হাত ভেঙে দিয়েছে। বাংলা থেকে বিজেপি, তৃণমূলকে ছাটাই করে ছাড়ব। আমরা বাংলা বাঁচাব। গণতন্ত্র বাঁচাব। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান দেবো, প্রত্যেকের পেটে ভাত দেবো।’
তৃণমূল ও বিজেপি উভয় দলকেই হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া দলিত, আদিবাসী, মুসলিম সবার জন্য আমি, আব্বাস সিদ্দিকী আছি। আমরা ভারতীয়, আমরা গর্বিত, ভিক্ষা নয়, অধিকার চাই’, স্লোগানে তিনি জনতাকে মাতিয়ে রাখেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমের কয়েকটি ভিডিওতে আব্বাস সিদ্দিকীর ভাষণে কয়েক হাজার সমর্থকদের ব্যাপক উল্লাস দেখা গেছে।
আইএসএফ কি সাম্প্রদায়িক দল?
আব্বাস সিদ্দিকী ও তার দলের বিরুদ্ধে মূল সমালোচনা হলো, দলটি সাম্প্রদায়িক। গত ২ মার্চ মঙ্গলবার কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা আইএসএফকে ‘সাম্প্রদায়িক দল’ হিসেবে অভিহিত করে দলটির সঙ্গে জোট করার বিরোধিতা করেছেন। অন্যদিকে, ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টে কেবল মুসলিম নয়, দলিত ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতাও আছেন উল্লেখ করে বাম নেতারা বরাবরই আইএসএফকে কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তি নয় বলে দাবি করে এসেছেন।
গত ৩ মার্চ প্রকাশিত ইন্ডিয়া টুডের এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ সম্পর্কে আব্বাস সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র বাঁচাতে এবং গরিব ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এই জোটে নেমেছি। সুতরাং আমাদের লক্ষ্য যদি একই হয় তবে জোটের সঙ্গে কোনো সমস্যা হওয়া উচিত নয়।’
আব্বাস বলেছেন, ”ফুরফুরা শরিফে মমতা এসেছেন, কংগ্রেস-সিপিএম সবাই আসে। মুসলিম দল বলেও কিছু হয় না। আমরা যে দল তৈরি করতে চাইছি, তা মূলত পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে নিয়ে। সেখানে খ্রিস্টানও আছে, আদিবাসী, দলিত সকলেই আছে। ফলে ধর্মের ভিত্তিতে আমরা কোনো দল তৈরি করতে চাইছি না।”
ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ ভারতের সংবিধান মেনে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রেখেই কাজ করবে বলে জানিয়েছেন আব্বাস সিদ্দিকী। তার কথায়, “অনেকেই আছে যারা নিজেদের নিরপেক্ষ বলেন। কিন্তু আদপে কাজে তা প্রমাণিত হয় না। শুধু মুসলিম নয়, হিন্দু সমাজেরও বহু পিছিয়ে পড়া মানুষ আছেন।”
মুসলিম ভোট ফ্যাক্টর
এবারের নির্বাচনে বিজেপি, তৃণমূল ও কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোটের ত্রিমুখী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রাজ্যটির মুসলিম ভোট। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এবার বিধানসভা নির্বাচনে ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মুসলিম ভোট।
ইন্ডিয়া টুডেসহ কয়েকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, এ বছর বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় ৩০ ভাগ ভোটার মুসলমান।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনে যেই জিতুক, ব্যবধান হবে অল্প। ফলে, ২৭ থেকে ৩০ ভাগ মুসলিম ভোটকে এখানে ফলাফল নির্ধারক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
রাজ্যের জেলাগুলোর মধ্যে উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ ও মালদায় মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই তিন জেলা মিলে বিধানসভায় আসন আছে ৪৪টি। এর বাইরে অন্তত সাতটি জেলায় সংখ্যালঘুর ভোটের সংখ্যা বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ১০টি জেলায় ১৫০টি আসনে মুসলিম ভোটাররা নির্বাচনের ফলে প্রভাব রাখবে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মুসলিম ভোট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট আছে রাজ্যে। মুসলিমরা কোন দলকে ভোট দিচ্ছেন, তার উপর নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করে। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় মেরুকরণ তীব্র হয়েছে। যার সুযোগ পেয়েছে বিজেপি। প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে গেরুয়া শিবির। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মুসলিম ভোটের বড় অংশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে ছিল বলেই তিনি বিজেপির থেকে কয়েক শতাংশ ভোট বেশি টানতে পেরেছিলেন। আর এখানেই গুরুত্বপূর্ণ ফুরফুরা শরিফের প্রসঙ্গে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের ২৭ থেকে ৩০ ভাগ মুসলিম ভোটারই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবে। গত এক দশক ধরে দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূলের অন্যতম মূল শক্তি ছিল মুসলিম ভোটার। এ বছর ‘ভাইজান’ হিসেবে জনপ্রিয় আব্বাস সিদ্দিকী নির্বাচন করায় মুসলিম ভোট ব্যাংকের পুরোটাই মমতার হাতছাড়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২৭ থেকে ৩০ ভাগ মুসলিম, যারা কখনোই বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় চায় না, তাদের ভোট বিবেচনা করলেও ক্ষমতায় আসার মতো বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের বিপুল ভোটার নেই। কিন্তু, তৃণমূল নিশ্চিতভাবেই তাদের ভোটব্যাংক হারাচ্ছে।
অন্যদিকে, মুসলিম জনগোষ্ঠীর মতো বড় একটি অংশের ভোট ভাগ হয়ে গেলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
পরিসংখ্যান যা বলছে
অতীতে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টে মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও এখন সেটা কমেছে।
লোকনীতি নামের একটি সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের লোকসভার নির্বাচনে রাজ্যে মুসলিম ভোটের ৪০ ভাগ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। ২০১৯ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭০ ভাগ অর্থাৎ মুসলিমদের ভোট তৃণমূলের দিকে কিছুটা বেড়েছে।
ফলে, আব্বাস সিদ্দিকী কিংবা আসাদউদ্দিন ওয়াইসির পৃথক নির্বাচন মানেই তৃণমূলের অন্তত দুই ডজন আসন অনিশ্চয়তায় পড়া।
পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম জনগোষ্ঠী যারা বিজেপির হিন্দুত্ববাদ বিরোধী তাদের কেউই বিজেপিকে ভোট দেবে না। এখানে তাদের বিকল্প হলো তৃণমূল, কংগ্রেস-বামফ্রন্ট জোট কিংবা আব্বাস-ওয়াইসির মুসলিম জোট।
একটা বড় অংশের ভোট ভাগ হয়ে গেলে লাভ হবে বিজেপির।
তৃণমূলের কাছে মুসলিম ভোট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই কারণে হিন্দুদের মধ্যে দলটির জনপ্রিয়তা কমেছে। এরই সুবিধা নিচ্ছে বিজেপি। ২০১৪ সালে লোকসভায় বিজেপি হিন্দু ভোটের ২১ ভাগ পায়, ২০১৯ সালে পেয়েছে ৫৭ ভাগ।
মমতার অভিযোগ, বিজেপিকে নির্বাচনে জেতাতেই বিজেপি বিরোধীদের ভোট কাটার জন্য মাঠে নেমেছেন মুসলিম দুই নেতা।
এর জবাবে আব্বাস সিদ্দিকী বলেছেন, তৃণমূল তাদের জন্য কিছুই করেনি তাই মুসলিমদের রাজনৈতিক শক্তি দরকার।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আব্বাস সিদ্দিকি বা আসাদউদ্দীন ওয়াইসি নির্বাচনে মমতার জয়ের জন্য উদ্বেগের।
তবে এই দুই মুসলিম নেতার উত্থানের ফলে মমতা ‘মুসলিমবান্ধব’ বলে বিজেপি যে প্রচারণা চালিয়ে আসছে সেটাতে কিছুটা ভাটা পড়বে।
এবারের নির্বাচনে অমিত শাহ’র সামনে এখনও পর্যন্ত শক্তিশালী বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মমতাই। ফলে, ধর্মভিত্তিক ভোটবিভাজনের রাজনীতিতে ভোটাররা কেমন সায় দেবেন সেটিই পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
সমীকরণ যা-ই হোক, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে আব্বাস সিদ্দিকি যে নতুন অঙ্ক তৈরি করতে চলেছেন, তা মোটামুটি স্পষ্ট। আব্বাস জানিয়েছেন, পঞ্চাশেরও বেশি আসনে প্রার্থী দিতে চান তিনি। ধরে নেওয়া যায়, মুসলিম পকেটকেই তিনি টার্গেট করছেন। যদি তাই হয়, তা হলে সেখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে। বিজেপি যার সুযোগ পেতে পারে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৫১৮
আপনার মতামত জানানঃ