যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলায় উসকানি দেয়ার অভিযোগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার বড়ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি, প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য মো ব্রুকস এবং বেশ কয়েকজন মিত্রের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার(০৫ মার্চ) ডেমোক্রেট দলের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য এরিক সলওয়েল বাদী হয়ে এই মামলা করেন। এর আগে গত মাসে একই অভিযোগে আরেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এই মামলায় ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার জন্য আর্থিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ক্যাপিটল হিলে হামলার জন্য মামলার বিবাদীরা দায়ী উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তাদের উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে এমনটা ঘটেছে। ঘটনার দিন মামলার বাদী কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি হামলার পর মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ কারণে বিবাদীদের কাছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আদালতের আদেশ চাওয়া হয়েছে। আবেদনে ক্ষতিপূরণের আর্থিক দায় নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওইদিন একটি মিছিলে বক্তব্য রাখছিলেন ট্রাম্প, তার ছেলে, আইনজীবী রুডি ও কংগ্রেসম্যান মো ব্রুকস। পরে সেই মিছিল থেকে ক্যাপিটলে হামলা চালানো হয়।
মামলায় বলা হয়েছে, মামলায় যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা সবাই ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলের বাইরের সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। তারপরই ক্যাপিটল হিলের নিয়ম ভঙ্গ করে সেখানে নারকীয়তা চালানো হয়েছে।
মামলায় আরও বলা হয়েছে, র্যালি থেকে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বক্তব্য দিয়ে উত্তেজিত করা হয়েছে নেতাকর্মীদের। মিথ্যা ভোট চুরির অভিযোগে ট্রাম্প নির্বাচনের ফল মানছিলেন না। অব্যাহতভাবে তার সেই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে গেছে তার সমর্থকরা।
মামলায় বলা হয়েছে, ৬ই জানুয়ারি যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে বাদীদের বেআইনি কর্মকাণ্ডের সরাসরি এবং দৃশ্যমান যোগসূত্র ছিল। তাই যেসব মানুষ হতাহত হয়েছেন, যেসব সম্পদের ক্ষতি করা হয়েছে তার জন্য দায়ী বিবাদীরা। এই মামলায় অজ্ঞাত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। এ মর্মে আদালতকে একটি নির্দেশ জারির আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো র্যালি যদি ওয়াশিংটন ডিসিতে তারা করতে চায়, তাহলে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে নোটিশ দেয়ার নির্দেশের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতি দেয়ার সংসদীয় প্রক্রিয়ার মধ্যেই সেখানে তাণ্ডব চালায় উগ্রবাদীরা। এতে এক পুলিশসহ নিহত হন অন্তত পাঁচজন। এ ঘটনায় সারাবিশ্বে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের ইতিহাসে কালিমা লেপনের দায়ে অভিযুক্ত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশ্য তিনি এখনও গত নভেম্বরের ওই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন না।
মামলাকারী কংগ্রেসম্যান সলওয়েল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ট্রাম্প শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে বলে তিনি বার বার তার সমর্থকদের বলতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সমর্থকদের ওয়াশিংটন ডিসিতে নামার আহ্বান জানান।’
তিনি বলেন, ‘আসামিরা সমর্থকদের সংগঠিত করেছেন, প্ররোচিত করেছেন, উত্তেজনা ছড়িয়েছেন। ওই ঘটনায় হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় তারাই দায়ী।’
তবে এরিক সলওয়েলের এসব অভিযোগকে বানোয়াট বলে দাবি করেছেন মো ব্রুকস। ওদিকে ট্রাম্পের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা জেসন মিলার নতুন এই মামলাকে আরেকটি ‘উইচ-হান্ট’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে রুডি জুলিয়ানির কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত মাসেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই ঘটনার জেরে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ওই মামলাটি দায়ের করেন কংগ্রেসম্যান বেনি থম্পসন। তবে এই মামলাটিতে ট্রাম্প এবং রুডিকে আসামি করা হয়েছিল।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে আবারও হামলার আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে স্থগিত করা হয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের বৃহস্পতিবারের (০৪ মার্চ) অধিবেশনও।
এর আগে ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের দিন নির্ধারণ হওয়ার আগে ৪ মার্চ মার্কিন সংবিধানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। আইনপ্রণেতাদের সতর্ক করে ক্যাপিটল পুলিশ জানায়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একদল উগ্র সমর্থক আগেই প্রচার করেছে ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির কারণে হেরে যাওয়া ট্রাম্প ঐতিহাসিক ৪ মার্চ দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বলছে, এমন ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ায় এদিন আবারও ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের একদল উগ্র সমর্থক হামলার ষড়যন্ত্র করছে বলে তথ্য মিলেছে। আর সে গোয়েন্দা তথ্যকে গুরুত্ব দিয়েই যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।
এদিকে ক্যাপিটল হিলের হামলায় অংশ নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ছয় পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। হামলার ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও ২৯ জনের বিষয়ে তদন্ত চলছে।
পুলিশের মুখপাত্র জন স্টোলনিসের বরাতে সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, কোনো পুলিশ সদস্যের ব্যবহার আচরণবিধির বাইরে গিয়ে থাকলে তাকে যথাযথ শাস্তি পেতে হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ইয়োগানন্দ পিটম্যান। বিষয়টিতে ফেডারেল প্রসিকিউশন বলছে, চরম রক্ষণশীল শ্বেতাঙ্গ সংগঠন ‘ওথ কিপার্স’ এর নয়জন সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধ আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে। ওহাইও অঙ্গরাজ্যে এই সংগঠনটি শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় তাদের সাংগঠনিক যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য টিম রায়ান বলেন, দাঙ্গায় অংশ নেওয়া ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা গেছে এক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তাকে। আরেকজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্লোগান ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ লেখা ক্যাপ পরে ভবনের চারপাশের লোকজনকে নির্দেশনা দিয়েছেন। কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনা করতে দাঙ্গার ভিডিও সক্রিয়ভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২০
আপনার মতামত জানানঃ