বিচারপ্রার্থী নারীকে ধর্ষণ ঘটনায় অভিযুক্ত ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গতকাল মঙ্গলবার (২ মার্চ) স্থানীয় সরকার বিভাগের ইপ-১ অধিশাখার সিনিয়র সহকারী সচিব আবু জাফর রিপন স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ফুলগাজী থানায় দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
নুরুল ইসলাম অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকায় সদর ইউপির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা সমীচীন নয়। তাই ২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনের ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী ফুলগাজী সদর ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে নুরুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।’
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এ আদেশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে জারী করা হলো এবং অবিলম্বে তা কার্যকর হবে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসি বেগম বলেন, ‘ধর্ষণ মামলায় নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র গ্রহণ করায় স্থানীয় সরকার বিভাগের এক আদেশে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এই আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখন থেকে সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’
ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালতে রিট করবেন। আশা করছেন আদালত তার পক্ষে রায় প্রদান করবেন।
জানা যায়, পারিবারিক কলহের জেরে সালিশি বৈঠককে কেন্দ্র করে বিচারপ্রার্থী এক গৃহবধূ তার ৫ম শ্রেণি পড়ুয়া ভাগিনাকে নিয়ে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যান।
তখন ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম কৌশলে ওই শিশুকে টাকা দিয়ে দোকানে পাঠিয়ে বিচারপ্রার্থী ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। পরে নির্যাতিতা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। এ ঘটনায় ধর্ষিতা নারীর শাশুড়ি হাজেরা বেগম বাদী হয়ে চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামকে আসামি করে ফুলগাজী থানায় মামলা করলে পুলিশ ওই রাতে চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।
ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন জানান, ‘ধর্ষণ মামলায় ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিছুদিন কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে নিজেরা এতোটাই প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী বনে যান তারা মনে করেন তাদের শাসনেই চলতে হবে ইউনিয়নকে। ইউপি চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন অভিযোগ আসে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্ষমতা বলে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে পার পেয়ে যান বলে তারা স্থানীয় পর্যায়ে নানা অপকর্মে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া চললে এমনটি হবার ঘটনা অনেকটাই নেমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এবিষয়ে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকা পালনের দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০২
আপনার মতামত জানানঃ