বিশ্বে মহামারি করোনা কিছুটা দুর্বল হয়ে কমতির পথে পা বাড়ালেও ইউরোপের কিছু দেশে এখনো করোনা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো জার্মানিতেও করোনা তার বিষদাঁতে মরণ-কামড় দিয়ে রেখেছে। দেশটিতে এখনো প্রতিনিয়ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে চলমান লকডাউনে অস্থির হয়ে লোকজনও চাচ্ছে লকডাউনে কিছুটা শিথিলতা আসুক। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতির দিকে দৃষ্টি রেখে এখন উভয় সংকটেই পড়েছেন দেশটির সরকার।
এদিকে কদিন আগেই দেশটির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জানিয়েছিলেন, জার্মানিতে প্রয়োজনের বাইরে একদিনও লকডাউন রাখা হবে না। দেশটিতে চলা লকডাউনের সময়সীমা আগামী ৭ই মার্চ পর্যন্ত থাকলেও দেশটির সার্বিক করোনা পরিস্থিতি লকডাউন আরো প্রলম্বিত করার প্ররোচনাই দিচ্ছে যেন। জার্মানি এখন তিনটি আক্রমণাত্মক মিউটেশনের মোকাবিলা করছে। নতুন বৈশিষ্ট্যের এসব ভাইরাস শক্তিশালী হয়ে ওঠার আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে বলে জানিয়ে রেখেছে দেশটির সরকার। নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাসগুলো ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বিনষ্ট করে দিতে পারে বলেও জানানো হয়।
লোকজনের জন্য চলমান এই লকডাউন যে কতটা কঠিন সে বিষয়টিও মাথায় রাখছেন দেশটির কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের একাকীত্ব ও হতাশার বিষয়টিও তারা আমলে নিচ্ছেন। তবে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকির কারণে বিধিনিষেধ এখনও বহাল রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
এখনো জার্মানিতে লকডাউন চলছে। আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত তা চালু থাকার কথা। অধিকাংশ দোকান, স্কুল, কলেজ, জিম, স্পোর্টস সেন্টার বন্ধ রয়েছে। মাস্ক পরা নিয়ে কড়াকড়ি করা হয়েছে। প্রকাশ্য স্থানে, বিশেষ করে দোকানে যেতে হলে বা যানবাহনে চড়তে হলে ফিল্টার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সরকার চায়, কর্মীরা যথাসম্ভব বাড়ি থেকেই কাজ করুক।
সেই নভেম্বর মাস থেকে একটানা লকডাউন চলছে দেশটিতে। এতে জার্মানির মানুষের ধৈর্য্যের বাঁধ অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ছে৷ একাধিক জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী দোকানবাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁ আবার খোলার পক্ষে আওয়াজ তুলছেন মানুষ৷ অন্যদিকে দৈনিক সংক্রমণের হার যথেষ্ট কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ করোনা ভাইরাসের ছোঁয়াচে সংস্করণগুলি সংক্রমণের ‘তৃতীয় ঢেউ’-এর আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ বিশেষ করে ব্রিটেন থেকে আসা বি১১৭ সংস্করণ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে৷ টিকাকরণ কর্মসূচির ধীর গতির কারণে এই সংকটের দ্রুত মোকাবিলা করারও উপায় নেই৷ এমন প্রেক্ষাপটে জার্মানির ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলিকে লকডাউনের মেয়াদ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ বিশেষজ্ঞদের মতামত ও জনমতের ভিত্তিতে তাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ লকডাউনের মেয়াদ সম্ভবত আরও কিছুদিন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিতে পারেন তারা৷ বিনামূল্যে দ্রুত করোনা পরীক্ষার মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে সংকট মোকাবিলার আশা করছে সরকার৷
দেশটিতে আপাতত আশি বছরের বেশি বয়স যাদের এবং তাদের সাহায্যকারীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভ্যাকসিন অপ্রতুল। যথেষ্ট সংখ্যায় করোনার টিকা সরবরাহ এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব না হওয়ায় অনেক নতুন প্রস্তাব শোনা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে অ্যাস্ট্রাজেনিকা কোম্পানির তৈরি টিকা সম্পর্কে জার্মানিতে সংশয়ের আলোকে সব মানুষের জন্য এই টিকা নেবার সুযোগ করে দেবার পরামর্শ দিচ্ছে কিছু মহল৷
কিন্তু সকলের ভ্যাকসিন পেতে এখনো বহু দিন সময় লাগবে। সে কথা মাথায় রেখেই এক শ্রেণির মানুষ দাবি তুলেছেন, ভ্যাকসিন যারা পাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে নিয়মকানুন শিথিল করা হোক। সিনেমা হলে যাওয়া, রেস্তোরাঁয় যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের যেন আর বাধা না থাকে। কিন্তু সব পক্ষ তা মানতে রাজি নয়। জার্মানির বামপন্থী দলের নেত্রী কাটজা কিপ্পিং এর তীব্র বিরোধিতা করছেন। চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও এর বিরোধিতা করে বলেছেন, ”জার্মানিতে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। এখন যদি দেখা হয়, কে টিকা নিয়েছেন, আর কে নেননি, তাহলে তা ব্যক্তিগত তথ্যে হস্তক্ষেপ হবে। সে কাজ করা যাবে না।”
করোনা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সীমান্তে কড়াকড়িও বাড়ানো হচ্ছে৷ ফ্রান্সের মোজেল জেলায় মারাত্মক পরিস্থিতির কারণে মঙ্গলবার থেকে জার্মানিতে অবাধ প্রবেশের সুযোগ বন্ধ রাখা হচ্ছে৷ সেই অঞ্চলে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা করোনা সংস্করণ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ এদিকে ব্রিটেন থেকে আসা বি১১৭ সংস্করণ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে৷ টিকাকরণ কর্মসূচির ধীর গতির কারণে এই সংকটের দ্রুত মোকাবিলা করারও উপায় নেই৷ অন্যদিকে দীর্ঘ লকডাউনে হাঁপিয়ে ওঠা লোকজনও স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে লকডাউনে শিথিলতা কামনা করছে। করোনা সংক্রমণ বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে বিধিনিয়ম শিথিল করার জন্য চাপ। এসবকিছু নিয়ে জার্মান প্রশাসন এক রকম দিশেহারা অবস্থাতে রয়েছে। তবুও এসব উপেক্ষা করে লাগাতার লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে জার্মান নেতারা।
এসডব্লিউ/ডিডব্লিউ/কেএইচ/১৯৩৭
আপনার মতামত জানানঃ