এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস। একমাত্র টিকা গ্রহণের মাধ্যমেই প্রাণঘাতী এই ভাইরাস বেঁচে থাকা সম্ভব। মানবজাতিকে এই ভাইরাস থেকে বাঁচাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর মধ্যেই বেশ কিছু কার্যকরী টিকা নিয়ে এসেছে। শুধু অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা নয় করোনা প্রতিরোধী টিকা সংক্রমণও কমাচ্ছে বলে দাবি করছে গবেষকরা। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের চালানো এই সাইরেন স্টাডিতে দেখা গেছে ফাইজারের এক ডোজ টিকা সংক্রমণের ঝুঁকি ৭০% হ্রাস করে আর দুটো ডোজ নিলে এই ঝুঁকি ৮৫% কমে যায়।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সংক্রমণ ঠেকানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গবেষকরা বলছেন, টিকা হয়তো আপনাকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে, কিন্তু তারপরেও আপনি আক্রান্ত হতে পারেন এবং এই ভাইরাসটি আপনার মাধ্যমে অন্যদের দেহে ছড়াতে পারে। একারণে করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রত্যেককে টিকা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন তারা। টিকা নেওয়ার পর ভাইরাস আর ছড়াতে না পারাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে মহামারির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মানুষকে যখন টিকা দেওয়া হচ্ছে, তখন সে পরোক্ষভাবে আরেকজন মানুষকেও সংক্রমণের হাত থকে রক্ষা করছেন। হাসপাতালে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজারের টিকা লোকজনকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া থেকেই শুধু রক্ষা করছে না, এটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণও কমিয়ে দিচ্ছে। একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ওপর চালানো ইংল্যান্ডের পাবলিক হেলথ বিভাগের চালানো এক গবেষণাতেও।
ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে এই হাসপাতালে ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরু হয়। টিকা দেওয়া হয় হাসপাতালের কর্মীদেরও।এক মাস পর দেখা যায় যারা কাজ করছেন তাদের কাউকে টিকা দেওয়া হয়েছে এবং কেউ কেউ এখনও টিকা নেয়নি।
জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেখা যায়, টিকা দেওয়া হয়নি এমন এক হাজার কর্মীর মধ্যে ১৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে শনাক্ত হচ্ছে। কিন্তু টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে এরকম এক হাজারের মধ্যে পজিটিভ বলে শনাক্ত হচ্ছেন মাত্র চারজন।
এছাড়াও যারা আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু শরীরে কোনো উপসর্গ নেই তাদের মধ্যেও সংক্রমণের হার কমে গেছে। উপসর্গ না থাকার কারণে তারা না জেনেই অন্যদের শরীরেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। গবেষণার এসব ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এর বিস্তারিত তথ্য এখনও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করে দেখেননি।
নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর জনাথন বল বিবিসিকে বলেন, ফাইজারের এক ডোজ নেওয়ার পর সংক্রমণ যে হারে কমতে দেখা গেছে সেটা আশাব্যঞ্জক। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা লকডাউনের মতো বিধি-নিষেধ থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হবো।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৩০
আপনার মতামত জানানঃ