বিশেষ প্রতিনিধি : বাকস্বাধীনতার পাশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, রাষ্ট্রের এই প্রহসন কণ্ঠরোধ করে দিয়েছে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধশক্তির। গণতন্ত্রের কফিনে এই আইন হতে পারে শেষ পেরেক। সমালোচনার কোন সুযোগ রাখেনি এই আইন। আন্তর্জাতিক প্রাঙ্গণেও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশ। তবু টনক নড়ছে না সরকারের। গতকাল রাতে এই আইনের বেড়াজালে মৃত্যু হয়েছে, লেখক মুশতাক আহমেদের। এখানে হত্যাকারীর ভূমিকায় আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সরকার কি এই দায় এড়াতে পারবে? মানুষের সংঘবদ্ধতা যদি এখনি এই আইনের বিলোপ ঘটাতে না পারে, তাহলে আরও অনেক মৃত্যু আমাদের দেখতে হবে। বাংলাদেশ প্রস্তুত তো?
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার লেখক মুশতাক আহমেদকে (৫৩) মৃত অবস্থায় গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. শরীফ জানিয়েছেন। তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে রাতেই তার পরিবার হাসপাতালে যান। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে মুশতাক আহমেদের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
মুশতাকের বাবা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে টেলিফোনে মুশতাকের মৃত্যুর খবর পরিবারকে জানানো হয়। মুশতাককে ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির করা হয়েছিল। সেদিন আমার ভাতিজা তার (মুশতাক) সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সে সুস্থ ছিল।’
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাম্মদ শরীফ জানান, কাশিমপুর কারাগার থেকে ওই বন্দীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা সম্ভব হবে।
এ প্রসঙ্গে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, মুশতাক আহমেদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারাগারের ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কাশিমপুর কারাগারে মুশতাকের মৃত্যুর বিষয়ে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, কাশিমপুর কারাগারে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে গ্রেফতার একজন কারাবন্দি মারা গেছেন। গাজীপুর সদরে শহিদ তাজউদ্দিন মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে তার মরদেহ রাখা হয়েছে। আগামীকাল (শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি) ময়নাতদন্তের পর তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরও বলেন, অসুস্থ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মুশতাক আহমেদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার ছোট বালাপুর এলাকায়। লালমাটিয়ায় স্ত্রী ও বৃদ্ধ মা–বাবার সঙ্গে থাকতেন। তিনি মা–বাবার একমাত্র পুত্রসন্তান। তিনি দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষের উদ্যোক্তা। মুশতাকের স্ত্রী লিপা আক্তার সম্প্রতি মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘আজ সন্ধ্যায় কাশিমপুর কারাগারে মুশতাক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে, কারা কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়ে রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে যায়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সন্ধ্যায় মুশতাক অসুস্থ হয়ে পড়লে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে থাকা মুশতাকের পরিবারের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেনি। তারপর তারা আমার নম্বর যোগার করে ফোন করে। ফোনে ডেপুটি জেলার আমাকে মুশতাকের মারা যাওয়ার সংবাদ দেন।’
এসময় হাসনাত কাইয়ুম আরও বলেন, ‘গতকালও হাজিরা দিতে মুশতাক আদালতে এসেছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল তার শরীর খারাপ। কিন্তু জামিন পাননি। মুশতাক যদি গতকালও জামিন পেতেন তাহলে আমাদের হয়তো এই পরিণতি দেখতে হতো না। একজন আইনজীবী হিসেবে যতটুকু বুঝি যে এ মামলায় মুশতাকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সে অভিযোগে জামিন না পাওয়ার কোনো কারণই ছিল না। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি জামিন পেলেন না। এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটা হত্যাকাণ্ড।’
অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘আমরা এখন উদ্বিগ্ন কার্টুনিস্ট কিশোরকে নিয়ে। কারাগারে থেকে কিশোরও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। কিশোরের শারীরিক অবস্থাও আশঙ্কাজনক। আমরা এখন সত্যি তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
মুশতাক আহমেদের বিরদ্ধে অভিযোগ ও গ্রেফতার
ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকে গত ৫ মে রাজধানীর কাকরাইল ও লালমাটিয়া থেকে আটক করেছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। মুশতাকের বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১১/২৫(১)(খ)/৩১/৩৫ ধারায় মামলা ছিল।
গত বছরের ৫ মে র্যাব-৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক রমনা থানায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
জানা যায়, মুশতাক ও কিশোরের জামিন আবেদন ছয়বার নাকচ করা হয়েছে। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, ২০২০ সালের আগস্ট মাস থেকে মুশতাক ওই কারাগারে বন্দী ছিলেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও মুশতাক আহমেদসহ ছয় জন ‘আই অ্যাম বাংলাদেশি’ (I Am Bangladeshi) নামের একটি ফেসবুক পেজে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিয়েছেন। যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়। পেজ থেকে রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, করোনাভাইরাস মহামারি ও সরকারকে নিয়ে কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়।
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, জাতির জনকের প্রতিকৃতি, জাতীয় সংগীত এবং জাতীয় পতাকাকে অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।
কী বলছেন বিশিষ্টজনেরা
মুশতাকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছে একদল বিক্ষোভকারী। আজ শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে প্রতিবাদ।
মুশতাকের মৃত্যুর খবরে মিনহাজ মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের বন্ধু। আমরা একই মামলার আসামি ছিলাম। জেলে প্রতিদিন সকালে আমাদের দেখা হত। আমরা একসাথে চা খেতাম, সুখ দুঃখের গল্প করতাম। আজকে তার মৃত্যুর খবরে আমার বুক ভেঙে গেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ তার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘মুসতাক কীভাবে মারা গেছেন তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তিনি রাষ্ট্রের হেফাজতে ছিলেন, তার দায়িত্ব নিয়েছিলো সরকার – এই মৃত্যুর দায়- হত্যার দায় সরকারের।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক লিখেছেন, ‘মুশতাক জেলে মারা গেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিলো। তার অপরাধ ছিলো লেখালেখি করা, অন্য কিছু নয়’।
কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ বলেন, আমি ধিক্কার জানাচ্ছি। শুধু সরকারি দল বা সরকারের ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে নয়, গোটা জাতিকে। এই নাৎসি আইনকে রুখে দিতে না-পারায়, ধিক্!
লেখক ও সাংবাদিক আহসানুল কবির বলেন, মুশতাকের মৃত্যু রাষ্ট্রীয় অনাচারের দৃষ্টান্ত। বিচারের নামে একজন মুশতাককে প্রাণ দিতে হয়েছে। আরেকজনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
কবি ও প্রকাশক চৌধুরী ফাহাদ বলেন, মুলত আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। কথা বলার জিহবা নেই। আমরা গোঙাচ্ছি, কিন্ত জিহবা না থাকার কারণে আমাদের কন্ঠ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। আর আওয়াজ হলেও, তারা এতটা খুঁটি গেঁড়ে আছে যে, কম্পিত হবার মতন হাতে হাত জুড়ছে না আমাদের। এই রাষ্ট্র এতটা ভীত, তার ভিত এত নড়বড়ে যে কথা বলার উপরে ট্যাক্স বসিয়ে রেখেছে।
কেমন আছেন কার্টুনিস্ট কিশোর!
কারাগারে থাকা কার্টুনিস্ট কিশোরও অসুস্থ বলে জানালেন তার ভাই আহসান কবির। এপ্রসঙ্গে তিনি গতরাতে বলেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি কিশোর ও মুশতাকদের ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়েছিল। কিশোরকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখেন।
তাকে কিশোর বলেছেন, গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন করা হয়েছে, যার কারণে তার পায়ে সংক্রমণ হয়েছে। কানে পুঁজ হচ্ছে। তাঁর ডায়াবেটিস অনেক বেড়ে গেছে। চোখেও কম দেখছেন। তাঁর দ্রুত চিকিৎসা দরকার।
কিশোর একজন আন্তর্জাতিক পুরষ্কার বিজয়ী কার্টুনিস্ট যিনি সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের নীতির সমালোচনামূলক কার্টুন আঁকার কারণে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ‘লাইফ ইন দ্য টাইম অব করোনা’ যা তার ফেসবুক পেজ ‘আই অ্যাম বাংলাদেশি’তে প্রকাশিত হয়। এতে ক্ষমতাসীন দলের নানা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনা করা হয়।
কিশোরের প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘আমরা এখন উদ্বিগ্ন কার্টুনিস্ট কিশোরকে নিয়ে। কারাগারে থেকে কিশোরও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। কিশোরের শারীরিক অবস্থাও আশঙ্কাজনক। আমরা এখন সত্যি তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) এবং বাকস্বাধীনতার প্রহসন
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের বাক স্বাধীনতার জন্য বড় আঘাত। এটি সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করবে।’
ক্রগামত তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা এবং ডিজিটাল আইনের শিকার হচ্ছেন শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী৷
লেখক, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক মানবাধিকারকর্মী সবার ওপরই এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তা বানোয়াট।
২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) কার্যকর রয়েছে। এর আগে বিদ্যমান তথ্য প্রযুক্তি আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে খুব সমালোচনা হয়৷ সরকারের একাধিক মন্ত্রীও স্বীকার করেন, কিছু সমস্যা আসলেই রয়ে গেছে৷ সেই সমস্যা দূর করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা নামে নতুন এই আইন৷ কিন্তু দেখা গেল, আগের আইনে যে ৫৭ ধারা নিয়ে এত আপত্তি, এত সমালোচনা, সেটিই কয়েকটি ধারায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়ে গেছে নতুন আইনেও৷
এই আইন প্রনয়নের পর থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে আমরা সমালোচিত হয়েছি, রেটিংয়ে পিছিয়ে পড়েছি৷ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার এর মুক্তসাংবাদিকতার তালিকায় আমাদের অবস্থান এই নতুন আইনের পর চার ধাপ পিছিয়েছে৷ ১৮০টি দেশের মধ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ছিল ১৪৬ তম অবস্থানে, আইন প্রণয়নের পর ২০১৯ সালে অবস্থান হয়েছে ১৫০ তম৷ ২০২০ সালে আরও একধাপ পিছিয়ে অবস্থান দাঁড়ায় ১৫১ তম।
প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। তালিকায় ৬৭ নম্বরে থাকা ভুটান আছে সবার শীর্ষে। এরপরই মালদ্বীপ, দেশটির অবস্থান ৭৯। তালিকায় মিয়ানমারের অবস্থান ১৩৯, ভারত ১৪২, পাকিস্তান ১৪৫, শ্রীলঙ্কা ১২৭, নেপাল ১১২ এবং আফগানিস্তান ১২২।
এদিকে, World Justice Project এর Rule of Law Index-এ ১২৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১৫তম।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এখন প্রতিদিন গড়ে তিনটি করে মামলা হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রগুলো বলছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে এই মামলার সংখ্যা ৬০ ভাগ পর্যন্ত বাড়ার সুযোগ ছিল।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হলো নির্যাতনের একটি অস্ত্র এবং বাংলাদেশ মুক্ত মত প্রকাশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যেসব আইন মানতে বাধ্য তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে কমপক্ষে ৫টি বিধান আছে, যা দিয়ে কথা বলা বা মত প্রকাশকে ক্রিমিনালাইজ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এই আইনটি সমালোচকদের কণ্ঠকে দমন করার জন্য ব্যাপক অর্থে একটি লাইসেন্স।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি বিপদজনক ধারা
মানবাধিকার সংগঠন ও আইনজীবীদের মতে, মামলাগুলো হচ্ছে মূলত আইনের ২৫, ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায়।
২৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, আপনার লেখায় যদি কোন ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় করার অভিপ্রায় প্রকাশ পায়, তাহলে আপনি অপরাধী৷
২৬ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, বিক্রয়, দখল, সরবরাহ বা ব্যবহার করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
২৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েচজে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে Penal Code (Act XLV of 1860) এর section 499 এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তজ্জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
৩১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কারো লেখায় যদি বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটিবার উপক্রম হয়, তাহলে সে অপরাধী হবে৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রনয়ণ এবং বাস্তবায়ন গণতন্ত্রের শেষ আর একনায়কতন্ত্রের শুরুয়াৎ। রাষ্ট্রব্যবস্থা যখন গণমাধ্যম, বিচার ব্যবস্থা এবং জনগণের বাকস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে, তখন গণতান্ত্রিক সমস্ত অধিকারই বিলুপ্ত হয়। এই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর দায় এড়াতে পারবে না। এমন অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের ভারে ঝুঁকে পড়ছে রাষ্ট্রের কাঁধ। আর কতটা ঝুঁকলে মানুষ তার নাগাল পাবে?
এসডব্লিউ/শুস/১৬০০
আপনার মতামত জানানঃ