
অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে মুনাফার ভাগ দেওয়ার আইন নিয়ে ফেসবুকের সঙ্গে জটিলতার সৃষ্টি হয় দেশটির সরকারের। সরকারের সঙ্গে টানাপোড়েনের জেরে গত বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ায় সংবাদ দেখা বা শেয়ার করার সুযোগ বন্ধ করে দেয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। তবে অবশেষে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো ফেসবুক। অস্ট্রেলিয়ার সরকার সাথে একটা সমঝোতায় যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। অস্ট্রেলিয়া সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত আইনটিতে সংশোধনী আনার পর সংবাদ কন্টেন্ট দেখা এবং গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টগুলো আবার চালু করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেসবুক। আজ মঙ্গলবার(২৩ ফেব্রুয়ারি) এ কথা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ট্রেজারার জোশ ফ্রাইডেনবার্গ। এদিকে একই আইন করার জন্য ভাবছে যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিশ্বের অনেক দেশ।
প্রস্তাবিত আইনটিতে নিউজ কনটেন্ট প্রকাশের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দিতে ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের বাধ্যবাধকতার বিধান রয়েছে। গণমাধ্যমের কনটেন্ট থেকে গুগল, ইউটিউব ও ফেসবুক যে আয় করছে, তা সংবাদ প্রকাশকদের সঙ্গে ভাগাভাগি বাধ্যতামূলক করে নিম্নকক্ষে আইন পাস করেছিল অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার বাজার প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের ভাষ্য, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ও প্রকাশকদের মুনাফায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করাই এই আইনের লক্ষ্য। অস্ট্রেলিয়া সরকারের পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু আইনটির বিরোধিতা করে ফেসবুক। অস্ট্রেলিয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর দেখা ও শেয়ারের সুযোগ বন্ধ করে দেয়। একইসঙ্গে দেশটির বিভিন্ন রাজ্য সরকার এবং জরুরি বিভাগের অ্যাকাউন্টগুলোও বন্ধ করে দেয় ফেসবুক। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এগুলো বন্ধ রয়েছে।
এ ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার জনসাধারণ থেকে শুরু করে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ক্ষোভ প্রকাশ শুরু হয়। এরপর ফ্রাইডেনবার্গ ও ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেই আলোচনায়ই একটি ছাড়ের চুক্তি হয়।
ফেসবুকের সঙ্গে সালিশি করার মূল প্রস্তাবসহ আইনটিতে চারটি সংশোধনী দেবে অস্ট্রেলিয়া। আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত হওয়ার পরই ফেসবুক তার অবস্থান থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার অর্থমন্ত্রী জোস ফ্রাইডেনবার্গ আজ এক বিবৃতিতে বলেন, প্রস্তাবিত আইনটিতে সংশোধনী আনা হবে। তিনি বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ফেসবুকে নিউজ কনটেন্টের ওপর থাকা ব্লক উঠে যাবে।
ফেসবুকের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, তারা অস্ট্রেলিয়ায় নিউজ কনটেন্ট দেখাবে। ফেসবুক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা অস্ট্রেলিয়া সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরে খুশি। তবে ঠিক কী ধরনের চুক্তি হয়েছে এনিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও ফেসবুকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বিস্তারিত জানানো হয়নি।
এদিকে একই আইন করার জন্য ভাবছে যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিশ্বের অনেক দেশ। বলা হচ্ছে, কতগুলো দেশ একে জাতীয় আইন করা যায় কিনা বিবেচনা করে অস্ট্রেলিয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে গণমাধ্যমগুলোও বিষয়টি গভীর নজরে রেখেছে। ভারত, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধানেরা অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবিত আইনে ফেসবুকের প্রতিক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
এদিকে কানাডার ঐতিহ্যমন্ত্রী স্টিভেন গিলবো গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, তার দেশ আসন্ন মাসগুলোতে অস্ট্রেলিয়ার পথ অনুসরণ করবে।
সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে হলে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ পরিশোধের ব্যাপারটা মেনে নিতে হবে ফেসবুককে। সংবাদের ওপর ফেসবুকের নিষেধাজ্ঞা বরং প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুণ্ন করবে বলেও মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪১
আপনার মতামত জানানঃ