ভারতে ধরা পড়েছে করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরন। দেশটিতে এতোদিন করোনার যে ধরন সংক্রমিত হচ্ছিল এটি তার থেকেও বেশি ভয়ংকর। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’র প্রধান রণদীপ গুলেরিয়া এ কথা জানিয়েছেন। তার দাবি, করোনার নতুন ভারতীয় প্রজাতি অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। খুব দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া শরীরে অ্যান্টিবডি থাকলেও তা এই ধরন দ্বারা সংক্রমনের আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে প্রথম এই ধরনটি সনাক্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত ২৪০ জনের মধ্যে এই ধরন পাওয়া গেছে। এদিকে ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন একটি প্রজাতি ধরা পড়ায় বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন। কারণ এই প্রজাতি অতিদ্রুত সংক্রমণ ছড়ায়। শরীরে অ্যান্টিবডি থাকলেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
ভারতের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের হার্ড ইমিউনিটি একটি ‘মিথ’ হয়ে থাকতে পারে, কারণ সুরক্ষিত হওয়ার জন্য ভারতের মোট জনসংখ্যার অন্তত ৮০ শতাংশের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে হবে বলে জানিয়েছেন গুলেরিয়া। ভাইরাসের এই ধরনটিকে বিবেচনায় নিলে তা আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
জনসংখ্যার একটি হিসাবকৃত অংশকে টিকাদান করার মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলার ওপর নির্ভর করছে ভারত সরকারের টিকাদান পরিকল্পনা। প্রথম পর্বে দেশটির সরকার তিন কোটি স্বাস্থ্য কর্মী ও অন্যান্য ফ্রন্টলাইন কর্মীদের টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে। এরপর ৫০ বছর বা তার ঊর্ধ্বের সবাইকে এবং গুরুতর অসুস্থদের টিকা দেওয়া হলে সংখ্যাটি ২৭ কোটিতে গিয়ে ঠেকবে।
হার্ড ইমিউনিটি অর্জন কেন সম্ভব না, এর ব্যাখ্যায় গুলেরিয়া বলেন, মিউটেশন বা ভাইরাসটির ধরনগুলোর প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়ানোর কৌশল আছে। টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করা ব্যক্তির জন্যও এগুলো হুমকি হয়ে উঠতে পারে এবং পুনঃসংক্রমণ ঘটাতে পারে। তিনি বলেছেন, উদ্ভত পরিস্থিতিতে করোনা সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধিসহ অন্যান্য নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।
রণদীপ গুলেরিয়া বলেন, করোনা পরীক্ষা, কন্টাক্ট ট্রেসিং, আইসোলেশনের মতো বিষয়ে ভারতকে আগ্রাসী পদক্ষেপে ফিরে যেতে হবে। ভারতে করোনার যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, তা নতুন ধরনের ক্ষেত্রে কার্যকর হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রণদীপ গুলেরিয়া বলেন, টিকা কার্যকর হবে। তবে টিকার কার্যকারিতা কম হতে পারে। পরিস্থিতি যাই হোক টিকা অবশ্যই নিতে হবে বলে জানিয়েছেন এই চিকিৎসক।
ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন একটি প্রজাতি ধরা পড়ায় বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন। কারণ এই প্রজাতি অতিদ্রুত সংক্রমণ ছড়ায়। শরীরে অ্যান্টিবডি থাকলেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। যেহেতু ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রয়েছে সেজন্য যেকোনো সময় বাংলাদেশে আসতে পারে। চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসায় বিপুল সংখ্যক মানুষ ভারত যাচ্ছেন।
এই অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ডা. মোজাহেরুল হক ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেছেন, টিকা দিলেই বিপদ কেটে গেছে এমনটা ভাববার কোনো কারণ নেই। বরং আমাদেরকে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। টিকার গতিও বাড়াতে হবে। মনে রাখা দরকার, আমাদেরকে ১২ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। তিনি বলেন, গবেষণার মাত্রাও বাড়াতে হবে।
ওদিকে বাংলাদেশে টিকা নেয়ার পর কম সংখ্যক মানুষের মধ্যেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৭৮ জন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর জানিয়েছেন স্বাস্থ্য দপ্তরকে। সামান্য জ্বর, গা ম্যাজম্যাজ করা, মাথা ব্যাথা ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন অনেকেই। তবে বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর নেই। কাউকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়নি। গত ১২ দিনে টিকা নিয়েছেন ২০ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ জন। ৭ই ফেব্রুয়ারি টিকাদান শুরু হয়েছে। ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে এ পর্যন্ত ৫০ লাখ টিকা পাওয়া গেছে। টিকা আসার কথা তিন কোটি।
এর আগে ভারতে করোনাভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, চারজনের শরীরে দক্ষিণ আফ্রিকান প্রজাতির ভাইরাস পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত এক কোটি সাত লাখেরও বেশি টিকার ডোজ স্বাস্থ্য কর্মী ও কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নিয়োজিত ফ্রন্টলাইন কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে শনিবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে।
সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ সন্ধ্যা ৬টা পযর্ন্ত ভারতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১ কোটি ৯ লক্ষ ৪ হাজারে পৌঁছে গিয়েছে। অ্যাক্টিভ কেস ১ লক্ষ ৩৪ হাজারে এসে ঠেকেছে। ইতিমধ্যে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৬৭৩ জন মানুষের প্রাণ গিয়েছে। এদিকে ১ কোটি ৬ লক্ষ ৯ হাজারের বেশি মানুষ ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। অন্যদিকে সারা বিশ্বে আক্রান্ত ১১ কোটি ১৭ লক্ষের বেশি মানুষ। মারা গিয়েছেন ২৪ লক্ষের বেশি মানুষ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯৩৭
আপনার মতামত জানানঃ