বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ে মা-ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়তে আসে। ডিম ছাড়ার পরিবেশ নির্বিঘ্ন করতে সরকারের মৎস্য অধিদপ্তর নদীতে জাল ফেলা, ইলিশ শিকার, ক্রয়-বিক্রয়, বহন, পরিবহন ও মজুত নিষিদ্ধ করে। মা-ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণ অভিযান সফল করতে মৎস্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ডের সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নিয়োজিত আছেন। তার পরও জাটকা ইলিশে পরিণত হচ্ছে না। ভোলার শাহবাজপুর চ্যানেলে ইলিশা থেকে মনপুরা পর্যন্ত মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট নিষিদ্ধ জাল পেতে নিধন করা হচ্ছে জাটকা ইলিশ। এতে সরকারের জাটকা সংরক্ষণ অভিযান হুমকিতে পড়েছে। আর এ কাজে জড়িত রয়েছে জেলার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
এছাড়া, মৎস্য ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে এসব জাটকা সড়ক ও নৌ-পথে ঢাকা, বরিশাল, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মাছের মোকামে পাঠাচ্ছে।এমনকি প্রশাসনের নজর এড়িয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ীরা পার্শ্ববতী দেশেও অবাধে শতশত মণ জাটকা পাচার করছে।
ভোলার শাহবাজপুর চ্যানেলে সর্বাধিক ইলিশ ডিম ছাড়ার ফলে জাটকায় (ইলিশ প্রজাতি) সয়লাব মেঘনা নদী। আর এ সুযোগে অবাধে জাটকা নিধন করা হচ্ছে৷ দিনে-রাতে অসংখ্য জেলে কারেন্ট জালসহ অবৈধ অন্যান্য জাল দিয়ে জাটকা শিকার করছেন৷ মৎস্য ও কোস্টগার্ডকে ম্যানেজ করেই এ কাজে জড়িত রয়েছে জেলার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার জাটকা নিধন করে চলেছে। এসব জাটকা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার ও বিক্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে ৫ কেজি ওজনের এক ঝুড়ি মাছ দুইশ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
হিসেব অনুযায়ী প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার ইলিশ প্রজাতি বিনষ্ট করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আজাহারুল হক জাতীয় এক দৈনিককে জানান, তাদের জনবল সংকট রয়েছে। তার পরেও তারা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় হতে আহ্বান জানান মৎস্য কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ফারুক বেপারীর ঘাট, কাচিয়া ও দৌলতখান সীমানার মদনপুর চর এলাকায় জামাল সকেট গ্রুপ, দৌলতখান চৌকিঘাট, সৈয়দপুর চর, হাকিমউদ্দিন চর রয়েছে ৫ প্রভাবশালী ও মনপুরার উপজেলার গোটা নদীজুড়েই চলছে বিন্দি ও খুঁটিজাল ফেলার রমরমা ব্যবসা। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিনের সেল্টারে তজুমদ্দিন এলাকার আমন মহাজন গ্রুপের রয়েছে প্রকাশ্যে মাছ ধরার ব্যবসা।
১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা মূল্যের কমপক্ষে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড় জাল, বিন্দিজাল, খুঁটিজাল ফেলা হয়। এসব জাল পাতা নিষিদ্ধ হলেও প্রকাশ্যে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। অসাধু জেলেরা আইন অমান্য করে মাছ শিকার করছেন। দাদনদার-মহাজনদের চাপে জেলেরা বাধ্য হয়ে নদীতে যান। তাছাড়াও মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে জেলেদের সরকারিভাবে যে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার হয় তা যথাসময়ে বিরতরণ না করায় এবং নিবন্ধিত সকল জেলে খাদ্য সহায়তার আওতায় না আসায় মাছ ধরার মহোৎসব চলছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান ওই দৈনিককে জানান, ইলিশ প্রজাতি এভাবে ধ্বংস না হলে, ইলিশ উৎপাদন দ্বিগুণ হতো। ইউএনও মো. কাওছার হোসেন জানান, তিনি যোগদানের পর থেকে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, জাটকা সংরক্ষণে অনেকগুলো বিভাগ কাজ করলেও তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। ফলে বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযান হলেও ফলপ্রসূ হচ্ছে না। মা-ইলিশ প্রজনন মৌসুম ও জাটকা সংরক্ষণ অভিযান সফল করতে হলে প্রশাসনকে আরো উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, মৎস্য ও কোস্টগার্ডের সাথে লিয়াজু করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা জাটকা নিধন পরিচালনা করে থাকেন। প্রশাসনের লোকজনের সাথে মিলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব করে থাকেন বলে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এবিষয়ে সরকারের কড়া নজরদারির দাবি করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/ডিজে/কেএইচ/১৫০৫
আপনার মতামত জানানঃ