রেল স্টেশনকে কেন্দ্র করে যেসব অপকর্ম করা যায় তার প্রায় সবটাই করেন রংপুর রেল স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট (এসএস) দেওয়ান মো. নিজাম উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও এসবের বাইরেও রয়েছে তার কুৎসিত হাত। অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি, অশালীন আচরণ, কালোবাজারে টিকিট বিক্রি, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায়সহ এমন কী নেই যা তিনি বাদ রেখেছেন! তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ভুক্তভোগীরা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডিভিশনাল ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট (ডিটিএস) বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তারা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট।
জানা যায়, গত বছরের ৮ নভেম্বর রংপুর রেল স্টেশনে ভারপ্রাপ্ত এসএস হিসেবে যোগদান করেন নিজাম উদ্দিন। যোগদানের পর থেকেই তিনি নিজ দায়িত্বে মালামাল বুকিং কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং বুকিংয়ের একাংশ টাকা রেলওয়ে রসিদে তুলে বাকি টাকা আত্মসাৎ করছেন। অস্থায়ী কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে টাকা আদায় করেন তিনি। এছাড়াও স্টেশন প্লাটফর্মের গেটে টিকিট চেকিং ও কালোবাজারিদের মতো টিকিট বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ট্রেন স্টেশনে থামলে ৫০/১০০ টাকার আশায় নিজেই গেটে দাঁড়িয়ে টিকিট চেক করেন এবং সব সময় স্টাফদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। মাস শেষে বেতন পেলে সেখানেও ভাগ বসাতে চান নিজাম উদ্দিন। এসব ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে রেল স্টেশনের ৩৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ৩৮ জনই তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগকারীদের একজন কর্মচারী দেলোয়ার হোসেন জানান, নিজাম উদ্দিন যোগদানের পর থেকেই নিজের ইচ্ছেমতো কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভারী কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে একজন সহযোগীকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেন। আর তার এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে মাস শেষে বেতনে ভাগ বসাতে চান নিজাম উদ্দিন। সার্বক্ষণিক কর্মচারীদের সঙ্গে রুঢ় আচরণ করেন বলেও অভিযোগ করেন দেলোয়ার।
স্থানীয় যুবক রাহুল বলেন, নিজাম উদ্দিন তাকে প্রায়ই কালোবাজারে বিক্রির জন্য টিকিট দেন। গত শনিবারও (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুটো টিকিট দিয়েছিলেন। টিকিট বিক্রি করতে না পারায় ফেরত দিলে তিনি (নিজাম) নিজে ফোন করে কাউনিয়া স্টেশেন টিকিট দু’টি বিক্রি করেন।
জাহাঙ্গীর নামে অপর এক যুবকও তাকে দিয়ে কালোবাজারে টিকিট বিক্রির কথা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন দোকানদার বলেন, আমরা কেউ ১০ বছর, ১২ বছর, ২০ বছর আবার কেউ ৩০/৪০ বছর থেকে রংপুর রেলস্টেশনে ব্যবসা করে আসছি। এতদিন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। কিন্তু নিজাম উদ্দিন আসার পর থেকে তিনি বিভিন্নভাবে আমাদের হয়রানি করছেন। তিনি দোকানে এসে পান-সিগারেট নিয়ে বিল দেন না দিয়ে চলে যান এবং দোকানপাট চালানো যাবে না বলে ভয় দেখান। দুই-তিনজন ছেলেকে পাঠিয়ে ৫০-১০০ টাকা করে তোলেন।
এসব ছাড়াও রেল স্টেশনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন দোকানীদের কাছ থেকে লোক নিয়োগ করে তিনি চাঁদা উঠান। তার এই চাঁদাবাজির কবল থেকে রেহাই পাননা ওখানখার মুচি, জুতার দোকানদার, ঝালমুড়ি বিক্রেতাসহ ছোটখাটো যত দোকানসহ ফেরিওয়ালা।
তবে ভারপ্রাপ্ত এসএস নিজাম উদ্দিন তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রেল স্টেশনের বিভিন্ন অনিয়ম বন্ধ ও আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করায় তারা এমন অভিযোগ করছেন।
এদিকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিভিশনাল ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট (ডিটিএস) আনিছুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, সহকারী ডিভিশনাল ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট (এডিটিএস) আবু তাহেরকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রেল কেন্দ্র করে এক বিভিন্ন রকমের অনিয়ম দুর্নীতি সারাদেশেই হয়ে থাকে। এবিষয়ে বিভিন্ন সময়ে তদন্তসহ ব্যবস্থাও নিতে দেখা গেছে। তবে রংপুর রেল স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট (এসএস) দেওয়ান মো. নিজাম উদ্দিনের অপকর্ম মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। একজন মানুষের পক্ষে এতোটা নীচে কীভাবে নামা সম্ভব তাই ভাবাচ্ছে। তারা মনে করেন, সুপারিনটেনডেন্ট স্টেশনকে একদম নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসাবে মেনে আসছেন। তাই তো তার কালো হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কোনো কিছুই। এব্যাপারে সুপারিনটেনডেন্টকে আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠু তদন্তসহ যথাযথ বিচারের সম্মুখীন করার আহ্বান জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১২
আপনার মতামত জানানঃ