
তানিয়া রহমান নামে এক শিক্ষিক চাকরি করেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা সদরের বাওয়ার কুমারজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তিনি। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে তার চাকরিস্থল হলেও তিনি বসবাস করেন সুদূর আমেরিকায়।
জানা যায়, তিন মাসের ছুটি নিয়ে দেড় বছর আগে আমেরিকায় পাড়ি জমান তিনি। এরপর তার আর কোনো খবর নেই। বিগত দেড় বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করলেও তার চাকরি অত্র বিদ্যালয়ে এখনো বহাল। তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না স্থানীয় শিক্ষা অফিস।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩ জুলাই থেকে একই বছরের ২ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ মাসের ছুটি নেন তানিয়া রহমান। ছুটি শুরুর আগের দিন ২ জুলাই তিনি পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে যান। এরপর থেকে বিদ্যালয়ের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। দেড় বছর ধরে তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। এতে করোনার কারণে বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকলেও ছুটির আগে সেখানে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির কারণ জানাতে উপজেলা সদরের বাইমহাটীতে তানিয়া রহমানের গ্রামের বাড়িতে চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে কেউ সেই চিঠি গ্রহণ করেননি। গত বছরের ২৩ জুলাই তাঁকে সর্বশেষ চিঠি পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলুয়ারা বেগমের মুঠোফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভাপতি মহিদুর মিয়া বলেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগেই তানিয়া রহমান ছুটিতে যান। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে প্রায় ১৬০ জন শিক্ষার্থী ও পাঁচজন শিক্ষক আছেন। একজন শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। ছুটি নেওয়ার পর তার পরিবর্তে বিদ্যালয়টিতে কোনো শিক্ষক দেওয়া হয়নি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সহকারী শিক্ষক তানিয়া রহমান তিন মাসের ছুটি নিয়ে আমেরিকা চলে গেছেন। একাধিকবার চিঠি দিয়েও তার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাওয়ার কুমারজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তানিয়া রহমানের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে যোগাযোগ করা হলে তিনি এক দৈনিককে বলেন, করোনার কারণে আমি দেশে আসতে পারছি না।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকে অনেকটাই হেয় দৃষ্টিতে দেখা হয়। এখানে নামমাত্রেই চাকরি করেন শিক্ষকেরা। কিন্তু তাদের মন পড়ে থাকে অন্যত্র। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশ্যেই অধিকাংশরা শিক্ষকতার চাকরি নেন। এখানে চাকরি করলে, প্রচলিত আছে যে, নিজের ইচ্ছামাফিক চলা যায়। অর্থাৎ, কিন্ডার্গার্টেনের দৌরাত্মার কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লোকজনের মন উঠে যাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও তেমন একটা দেখা যায় না। ফলে শিক্ষকেরা নিজেদের নামমাত্র চাকরি বহাল রেখে অন্যত্র যা ইচ্ছা করে থাকেন। এক্ষেত্রে সরকারি বিদ্যালয়ে পাঠদান প্রক্রিয়া উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষকদের বিষয়ে কড়াকড়ি রাখার প্রস্তাব দেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, এসবের পাশাপাশি শিক্ষকতাকে কেবলি একটি চাকরি ভাবা থেকে বের হয়ে মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫০১
আপনার মতামত জানানঃ